শুরুতে যে ভুলগুলো কখনো নয়
ক্যারোলিন সান এন্টারপ্রেনার ম্যাগাজিনের গবেষণা সম্পাদক। একজন উদ্যেক্তা হিসেবে ব্যবসার শুরুতে যে ভুলগুলো কখনো করা উচিত নয় সেসব ভুল নিয়ে তিনি এই নিবন্ধটি লিখেছেন।
ক্যারোলিন সান: একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে হয় গ্রাহকের চাহিদা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু মূল ব্যাপার হচ্ছে, এ দুটি শর্ত পূরণ করলেই আপনার ব্যবসা চমৎকারভাবে সাফল্যমণ্ডিত হয়ে উঠবে-এমন নয়। ধীরে ধীরে একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষ কিছু ভুল করে থাকে। যেমন অল্প সময়ের মধ্যে বেশি মুনাফা অর্জন করার চেষ্টা। কিংবা একজন গ্রাহকের কাছ থেকেই বেশি লাভ করার চেষ্টা।
দ্রুত সাফল্য পেতে ব্যবসার শুরুতেই আপনার নিচের দশটি ভুল এড়িয়ে চলা উচিত।
১. আগ্রাসী পরিকল্পনা : নিয়ম মাফিক পরিকল্পনা করতে হবে এমন কোনো কথা নেই; তবে একটা পরিকল্পনা তো অবশ্যই থাকা চাই। প্যালো আলটো সফটওয়্যারের চেয়ারম্যান টিম ব্যারি বলেন, ‘সাস স্টার্ট আপ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং হোয়েন আই ওয়ার্ক সফটওয়্যার কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজন প্যাটেল বলেন, একটি ব্যবসাকে সফল করতে হলে কুড়ি পাতার ব্যবসায়িক পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন আপনার গ্রাহককে চিনতে পারা, প্রয়োজন আপনি কি পণ্য বিক্রি করতে চাইছেন সেটা জানা এবং প্রয়োজন কোন ধরনের গ্রাহক আপনার পণ্য কিনবে তাদের সম্পর্কে সম্যক ধারনা রাখা।
২. ছোট ছোট বিষয়ের উপর মনযোগ : ইনভাইজর কন্সালটিং ফার্ম নামের এক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উদ্যেক্তা স্টিভ টোবাক বলেন, ‘প্রথমেই আপনাকে ভাবতে হবে একটি ব্যবসাকে কীভাবে শক্ত ভীতের ওপর দাঁড় করানো যায়।’ এজন্যে আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বুদ্ধিদীপ্ত আলো ফেলতে হবে। যেমন আপনার প্রতিষ্ঠানের লোগো কেমন হবে, বিজনেস কার্ড দেখতে কেমন হবে ইত্যাদি। এসব বিষয়ে আপনাকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হবে। আপনি যদি সম্পূর্ণ মনোযোগ ঢেলে দিতে পারেন তাহলে বলা যায় মানুষ আপনার পাশে থাকবে এবং তখনই আপনি ব্যবসাটাকে পরবর্তী পর্যায়ে উত্তীর্ণ করতে পারবেন।
৩. অর্থ নিয়ে অনর্থক ভাবনা নয় : আশাবাদী হোন। সব সময় ভাবুন যে কত টাকা নিয়ে আপনি ব্যবসাটা শুরু করতে যাচ্ছেন, সর্বোচ্চ কত টাকা আপনি বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং ভাবুন, যে পরিমাণ পুঁজি নিয়ে আপনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন তা কীভাবে বাড়ানো যায়।
আর হ্যাঁ, লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য কী পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করতে চান সেটাও নির্ধারণ করে ফেলুন।
৪. বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ : আপনি যে পণ্য বাজারজাত করতে চান তার একটা মূল্য নির্ধারণ করুন। এ সময় খেয়াল রাখবেন মুনাফার দিকে। সিটিজেন মার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিনথিয়া সালিম বলেন, ‘মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই মুনাফা নির্ধারণ করা দরকার।’ তিনি পেশাজীবী মহিলাদের জন্য ব্লেজার তৈরি করেছিলেন এবং তার দাম রেখেছিলেন মাত্র ৪২৫ ডলার। এরমধ্যে তিনি শ্রমিকমূল্য এবং উৎপাদন খরচও যুক্ত করেছিলেন।
৫. গ্রাহকসেবা খারিজ করুন : যদি আপনার পণ্য ভালো হয় তবে গ্রাহকরা নিজ উদ্যেগেরই আপনার ওয়েবসাইটে আসবে। এজন্য আপনাকে আলাদা গ্রাহকসেবা দিতে হবে না। আপনার ওয়েবসাইটে এসে গ্রাহক যাতে কোনো ধরনের ঝুট-ঝামেলায় না পড়ে সে দিকটায় নজর দিন। আপনার ওয়েবসাইট যদি ঝামেলামুক্ত হয় তবে গ্রাহকদের জন্য ফোন কিংবা লাইভ চ্যাট এসব সেবা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
৬. দান নয়, সম্প্রদান করুন : শুরুতেই গ্রাহকদের জন্য এমন কিছু অফার করুন যার জন্য প্রতিদান চাইবেন না। বিনামূল্যে গ্রাহকদের এমন কিছু দিন যার মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে আপনার দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক তৈরি হয়।
৭. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের বিস্তৃতি ঘটান : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার পণ্যকে তুলে ধরুন। গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্যের ব্যাপারে মতামত চান। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক এবং পিন্টারেস্ট হতে পারে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। তবে কেউ কেউ মনে করেন, পণ্যের ব্র্যান্ডিং করার জন্য লিংকড ইন হতে পারে সর্বোত্তম মাধ্যম।
৮. শুরুতে বিশেষজ্ঞ ভাড়া করবেন না: ব্যবসায় প্রসিদ্ধি লাভের আশায় শুরুতেই কোনো ‘বিশেষজ্ঞ’ নিয়োগ দিবেন না। আগে খুঁজে বের করুন কোন কোন বিষয়ে আপনার অদক্ষতা রয়েছে। তারপর সেইসব বিষয়ের বিশেষজ্ঞকে ডেকে আনুন।
৯. মনের দ্বিধা দূর করুন: সময় চলে যাচ্ছে, সময় চলে যাচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন হবেন না। টোবাক বলেন, ‘প্রত্যেক মিনিটকে কাজে লাগাতে চাইলে কখনোই আপনি বড় ধরনের আইডিয়া বের করতে পারবে না। একাধিক বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকলে কখনোই কোনো ফলপ্রসু আইডিয়া বের হয় না। আইডিয়া তখনই আসে যখন আপনি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি নিবিষ্ট থাকেন।’
১০. ভাববেন না সবই এক : কোনো একটি কোম্পানির জন্য যে কৌশল ফলপ্রসূ হয়েছে তা আপনার জন্যও ফলপ্রসূ হবে এমনটা ভাববেন না। সাফল্য পেতে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন কৌশল আবিষ্কার করুন।