স্টার্টআপের চার দিক
- মো. সাইফ
অভিজিত দাস কাজ করতেন মাল্টি-ন্যাশনাল কর্পোরেট কোম্পানিতে। সেখানে তিনি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে ছিলেন। তবে স্টার্টআপ এর প্রতি ঝোঁক ছিলো বলেই ছেড়ে দিয়েছেন এই লোভনীয় চাকরি। শুরু করেছেন রিয়েলস্টেট কন্সাল্টিং ফার্ম। ‘লেমনগ্রাস অ্যাডভাইজর্স’ নামে তার স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানটি আলোচিত হয় পুরো কলকাতা জুড়েই। মাত্র চার বছরেই তার এই উদ্যোগ পরিচিতি পেয়ে যায় যদিও পরবর্তীতে পরিধি বড় হয় Cushman and Wakefield-এর সঙ্গে একীভূত হওয়ার মাধ্যমে।
অভিজিত নিজে কাজ শুরু করেছেন একেবারে শূন্য থেকে। ছুঁয়েছেন সাফল্যের শীর্ষ স্তর। অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন ব্যপক। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই নতুন স্টার্ট-আপ শুরু করার ক্ষেত্রে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
১. অর্থায়ন কে করবে?
একজন বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ে অর্থায়ন করতে চাইলে প্রথমে ভেবে দেখুন তিনি কেনো বিনিয়োগে আগ্রহী। আপনার আগ্রহ অথবা ব্যাক্তিগত ভাবে আপনাকে পছন্দ করে বলে যদি অর্থ দিতে চায় তাহলে এদের কাছে থেকে বিনিয়োগ গ্রহণ না করাই ভালো। কারণ তার কাছে আপনার ব্যবসায় পরিকল্পনার তেমন গুরুত্ব নেই, এবং এ ব্যাপারে তার ধারনা এবং আগ্রহ খুবই কম।
যিনি সাময়িকভাবে কিছু না জেনেই আবেগের বশে আপনার স্টার্ট-আপে বিনিয়োগ করবেন তিনিই কোনো কারণ ছাড়া যেকোনো মুহুর্তে অর্থায়ন বন্ধও করে দিতে পারেন। তাই এমন কাউকে বিনিয়োগকারী হিসেবে বেঁছে নিন যিনি অর্থায়ন করবেন আপনার ব্যবসায়ের গুরুত্ব বুঝে।
২. দক্ষ স্টার্ট-আপের দল
ব্যবসায় শুরু করার প্রাথমিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে একটি ভালো দল গঠন করা। যেই দলে একই সাথে কয়েকজন বিশেষ বিশেষ দক্ষতার অধিকারী আগ্রহী মানুষ থাকবে। অনেক সময় মূলধনের চেয়েও একটি ভালো দলের সমন্বয় করা অধিক গুরুত্ব বহন করে ব্যবসায়ে।
কারা থাকছে এই দলে? উত্তরটা রয়েছে প্রথম শিরোনামের মধ্যেই। এটি এমন একটি দল হবে যারা আসবে ব্যবসায়ের প্রতি সর্বোচ্চ পরিশ্রম করার মানসিকতা নিয়ে। যারা নিজের মনে করে কাজ করতে চাইবে স্টার্ট-আপে তাদেরকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
৩. প্রত্যাশা কম করলে হতাশ কম হবেন
অনেক আশা নিয়ে আপনি একটা ব্যবসা শুরু করেছেন। দেখে শুনে রেখেছেন কজন কর্মচারীও। কাজ করতে গিয়ে দেখলেন আপনার ভাবনার সাথে তাদের ভাবনা মিলছে না। এই রকমটা হয় কারণ তাদের কাছে এটি নিতান্তই একটি চাকরি মাত্র। এর বেশিকিছু নয়। কর্মচারীরা সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এসেছেন, বয়সের তারতম্য রয়েছে, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাও তাদের কাজে প্রভাব ফেলে।
তাই বেতনের বিনিময়ে কাজটা কোনো রকমে করে দেওয়াটাই তাদের কাছে মুখ্য। এই রকম অবস্থায় কর্মীদের কাছে বাড়াবাড়ি রকমের প্রত্যাশা না থাকাই ভালো। অধিক প্রত্যাশা আপনার প্রাপ্তির সাথে না মিললে হয়ত আপনি নিজেই হবেন হতাশ যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ব্যবসায়ে।
৪. অর্থনৈতিক চাহিদা মোকাবেলায় পূর্ব-প্রস্তুতি
ব্যবসায় শুরু করার মূলধন থাকলেই লাফিয়ে খুশি হয়ে যাওয়ার কিছু নেই। ব্যবসায় শুরু করার পরও বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হতে পারে। কিংবা ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে অথবা নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে। তখন আপনি কী করবেন? তাই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে আগেভাগেই।
সহজ কথা হলো টাকার প্রয়োজন হওয়ার আগেই আপনাকে তার ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। যাতে হটাৎ দরকার পড়লে চিন্তা ভাবনা করতে করতে মাথার চুল উড়ে যাওয়ার উপক্রম না হয়!
তথ্য-ঋণ : ইকোনোমিক-টাইমস, অভিজিত দাসের লিংকডইন প্রোফাইল, Cushman and Wakefield ওয়েবসাইট ।