ব্যবসা শুরুর প্রথম অধ্যায়
- জ্যাসন ডিমারস
ব্যবসা শুরু করতে উতলা হয়ে আছেন। হয়তো নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে বা বাড়াতে আপনার একটা ধরাণা আছে অথবা উক্ত ধারণাতে আপনি খুব আত্মবিশ্বাসী। সেক্ষেত্রে সে¦চ্ছায় কিছু ঝুঁকি নিতে হবে। যেমন-আপনাকে বর্তমান চাকরি ছাড়তে হতে পারে বা কিছু সময়ের জন্য ব্যক্তিগত কোন সঞ্চয় বা টাকাবিহীন অবস্থায় নামতে হতে পারে। কিন্তু একটা যুক্তিসঙ্গত বাধা আপনাকে থামাতে পারে: তা হলো আপনার ব্যবসায়ের জন্য পর্যাপ্ত টাকা নেই। সাধারণ চোখে এটাকে বড় এক সমস্যা মনে হবে কিন্তু অপর্যাপ্ত টাকা আপনার স্বপ্নকে আটকিয়ে রাখতে পারে না। বস্তুত প্রায় না থাকার মতো টাকা দিয়েও ব্যবসা শুরু করা এবং ব্যবসা বৃদ্ধি করা যায়-যদি আপনি আপনার করণীয় ঠিক করতে পারেন।
ব্যবসায় কেন টাকা দরকার ?
প্রথমত, চলুন দেখে নিই ব্যবসার প্রথম অবস্থায় কেন টাকা লাগবে। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শুরু করার পূর্বে প্রথমে আপনাকে হিসাব করতে হবে যে, প্রতিষ্ঠানের জন্য কত টাকা দরকার।
এক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা যেতে পারে
ব্যবসায়ের জন্য লাইসেন্স ও অনুমতি : এলাকাভেদে এর ভিন্নতা রয়েছে। লাইসেন্স ও অনুমতির জন্য এলাকাভেদে আপনার বিশেষ পেপারওয়ার্ক এবং নিবন্ধন পরিচালনা করতে হতে পারে।
মালামাল সরবরাহ : ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় কি কি কাঁচামাল ক্রয় করছেন? কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জমাদি দরকার কিনা ইত্যাদি ?
সরঞ্জমাদি : আপনার কি বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি ও সফটওয়ার দরকার?
অফিস স্পেস : অফিস স্পেসে খরচ অনেক অনেক বেশি এবং আরো বেশ কিছু খরচ আছে যা অবজ্ঞা করা যায় না যেমন- ইন্টারনেট ও ইউটিলিটি বাবদ ব্যয় ইত্যাদি।
সংগঠন, চাঁদা, সদস্যপদ ইত্যাদি : প্রতি মাসে প্রকাশনা এবং ব্যবসা সমৃদ্ধিকরণে আপনি কি কি করতে চান তার উপরও খরচ নির্ভর করে।
পরিচালন ব্যয় : পরিচালনা ব্যয় বাবদ বিভিন্ন খরচ রয়েছে এবং মার্কেটিংয়ের বিষয়ে ভুলে গেলে হবে না।
আইনি সহযোগীতার সন্মানি : আপনি কি ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য কোনো আইন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করছেন ?
কর্মচারী ও ঠিকাদার : আপনি নিজে কাজ করতে না পারলে বেতনভুক্ত কর্মচারী ও ঠিকাদার নিয়োগের প্রয়োজন হবে।
উল্লেখিত বিষয় থেকে কম টাকায় ব্যবসা শুরুর জন্য আপনি হয়তো দুইটা জিনিস বুঝতে পেরেছেন তা হলো খরচ কমাতে হবে অথবা বিভিন্ন উৎস থেকে মুলধন বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য তিনটি উপায় রয়েছে :
প্রথম উপায় : চাহিদা কমাতে হবে
এখানে প্রথম উপায় হলো উপরোক্ত তালিকা অনুযায়ী কম চাহিদার প্রয়োজনে আপনাকে ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করতে হবে। উদহারণ স্বরূপ, আপনি যদি ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চান, তাহলে কেবলমাত্র একজন কর্মী দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়ার মাধ্যমে আপনাকে কর্মচারী ব্যয় কমাতে হবে। আপনার যদি অফিস স্পেস না নিয়ে বাসায় কাজ করলেই হয়, তাহলে তাই করতে হবে। আপনার সাধারণ কাজের জন্য কম খরচের মালামাল বা স্বল্প পরিমাণ আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ চালানো গেলে এভাবেই ব্যয় সংকুচিত করতে হবে। কিছু কিছু খরচ আছে যা চাইলেও এড়ানো বা কমানো যায় না যেমন লাইসেন্সিং, আইনি সহযোগীতার ফি ইত্যাদি। এসবিএ এর মতে, অনেক মাইক্রোবিজনেস ৩ হাজার ডলারের কম দিয়ে ব্যবসা শুরু করে এবং বাসাভিত্তিক কাজে ১ হাজার ডলারেরও কমে শুরু করা যায়।
দ্বিতীয় উপায় : বুটসট্র্যাপ পদ্ধতি
আপনার দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো ব্যবসায়ের প্রস্তুতিপর্বে আপনার এই ব্যবসায়িক ধারনার ব্যাপারে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন। পুরোদমে ব্যবসা শুরু করার পরিবর্তে শুধুমাত্র ব্যবসায়ের মূল অংশগুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। আপনি একটি ব্লগ চালু করতে পারেন। আপনি যদি নিজেই এককভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেন তাহলে কিছু বড় প্রাথমিক খরচ এড়িয়ে যেতে পারবেন। ব্যবসা থেকে কিছু উপার্জিত হচ্ছে তা যদি একবার বুঝতে শুরু করেন, আপনি নিজেই বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং আপনার ব্যবসাকে একবারে নয় বরং একটু একটু করে দাঁড় করাতে পারবেন।
তৃতীয় উপায় : ভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ
আপনার তৃতীয় উপায় হলো বাইরের উৎস থেকে তাহবিল সংগ্রহ করা। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উৎস দেয়া হলো :
পরিবার ও বন্ধুমহল : পরিবার ও বন্ধু মহল থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। নির্দিষ্ট কারোর নিকট থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ না পেলেও এদের নিকট থেকে একটু একটু করে তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে দেখবেন এই ক্ষুদ্র সংগ্রহ একত্রে পর্যাপ্ত তাহবিলে পরিণত হবে।
অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর : অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর হলো সম্পদশালী ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী যার ইতিপূর্বে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবসায়িক জ্ঞান রয়েছে। তারা ভিন্ন খাতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে চায়। তাদের কাছ থেকেও তাহবিল সংগ্রহ করতে পারেন।
সাধারণ জনতার কাছ থেকে : এটা একটা কারণে জনপ্রিয়, একটা ভাল ধারণা এবং কিছু কাজ করতে পারলে অর্থ সংগ্রহের জন্য যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারবেন।
সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান : আপনি সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র বা মাঝারি ধরনের লোন নিয়েও ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
ব্যাংক : ব্যাংকের কিছু শর্ত পূরণ করতে পারলে ব্যাংক থেকেও অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন।
উল্লেখিত তিন ধরনের উপায় থেকে যে কোনো একটি বা তার বেশি উপায়ের মাধ্যমে তাহবিল সংগ্রহ করতে পারলে আপনার ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক বিনিয়োগ কম বা প্রায় না করলেও চলবে। তবে আপনাকে অন্য ধরনের ত্যাগস্বীকার করতে হবে,আপনাকে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে তাহলে আপনার পথে কোনো বাধা এসে দাঁড়াতে পারবে না। ব্যবসায়ের জন্য মূলধনের সংকট বড় বাধা হলেও কোনো ভুল না করলে এ বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।