দেশে বাড়ছে সামাজিক ব্যবসা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ বা সামাজিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে পথিকৃতৎ হিসেবে বিবেচিত। এ প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবসায়িক মডেল হলো সংস্কারমুক্ত সেবা প্রদান, কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। সামাজিক সেবা প্রদানে ব্র্যাক ও গ্রামীণের মতো প্রতিষ্ঠান শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বেই পরিচিত। এখন সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের অনুকূল পরিবেশের জন্য প্রয়োজন জ্ঞান, দক্ষতা ও আর্থিক সহায়তা এবং এ খাতটিকে বিকশিত করার জন্য প্রয়োজন একক কর্মনীতি কাঠামো।
বাংলাদেশে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের প্রকৃত প্রভাব ও পরিধি বুঝতে এবং এ খাতের বিকাশে প্রতিবন্ধকতাসমূহ চিহ্নিত করতে সম্প্রতি ব্রিটিশ কাউন্সিল সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। এরপর, ‘দ্য স্টেট অব সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি, নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ হলো এমন একটি ব্যবসা পদ্ধতি, যেখানে ব্যবসার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে সামাজিক। শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মালিক ও অংশীদারদের মুনাফার ওপর গুরুত্ব না দিয়ে সামাজিক উদ্দেশ্যে পুনঃবিনিয়োগে দায়বদ্ধ করে তোলে।
এ জরিপের ফলাফলে নীতি নির্ধারক ও সাধারণ মানুষ সকলের জন্য মনোযোগ সৃষ্টিকারী তথ্য উঠে এসেছে। যেমন—জরিপে অংশগ্রহণকারীরা এক-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা জানিয়েছে, তারা দেশের শিক্ষাখাতে কাজ করেন। এ খাতে কাজ করছে এমন ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বে পুরুষ রয়েছে। পাঁচ ভাগের এক ভাগ সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা নারী। গতানুগতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রে যেটা ৫ শতাংশ। সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ খাতে মোট কর্মশক্তির ৪১% ভাগ পূরণ করছে, যা নারীদের সাধারণ কাজে অংশগ্রহণের চেয়ে দ্বিগুণ। বলা বাহুল্য, সামাজিক প্রতিষ্ঠান খাত দেশে নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজগুলো প্রতিষ্ঠার বয়স খুব বেশি নয় এবং তরুণরা এ খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশের ৭৭ শতাংশ সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের বয়স গড়ে ছয় বছরের কম এবং এগুলো বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে। বেশিরভাগ সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের বয়স ৩৫ বছরের কম এবং এ বিষয়টা এটাই নির্দেশ করে যে, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণরা নেতৃত্ব নিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজগুলো বার্ষিক গড় আয় ২১ লাখ টাকা। তিন-চতুর্থাংশ সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ আগামী অর্থবছরে বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি আশা করে।
গত দশকের তুলনায় বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্টার্টআপগুলো বিকশিত হচ্ছে। যদি নারী, তরুণ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরকে কর্মসংস্থানে সক্রিয় সুযোগ সৃষ্টি করা যায় তাহলে বাংলাদেশের এই ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভৌগলিক গুরুত্বকে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ এসব সুযোগ প্রদানে অন্যতম খাত হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও, এ খাতের এখন স্বীকৃতি ও সহায়তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে এবং নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকেও সম্ভাবনাময় এ খাতের স্বীকৃত প্রয়োজন।