উদ্যোক্তা হতে চান বগুড়ার সোয়াইব
- ওমর ফারুক পিয়াস
বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার সোয়াইব ইসলাম। বর্তমানে তিনি খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন ছাত্র। আয়ের জন্য তিনি তার পরিত্যক্ত জমিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন গরু-ছাগলের খামার। ২০২০ সালে করোনার কারণে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনি ঘরে বসে সময় অতিবাহিত না করে ২০টি গরু ও কয়েকটি ছাগল কিনে ফেলেন। গত বছর করোনা দূযোর্গের সময় তিনি তার খামারে সাফল্যের দেখা পাওয়ার পর এখন অন্যদেরও খামার করার আশা জাগাচ্ছেন।
সফল এই খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালে নিজেদের পরিত্যক্ত জায়গা পরে থাকতে দেখে তিনি তার খামারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রায় ৩০ শতক জমির উপর গড়ে তোলেন খামারটি। শুরুতে তিনি ৫টি বিদেশি জাতের গরু ও উন্নত জাতের কয়েকটি ছাগল দিয়ে তার খামারের যাত্রা শুরু করেন। তখন তার বিনিয়োগ ছিল দশ লাখ টাকা। খামারের জন্য গরু-ছাগল সংগ্রহ করে এনেছিলেন নাটোর ও খুলনা থেকে। ধিরে ধিরে বিভিন্ন জাতের গরুর মধ্যে শাহিয়াল, সিন্ধি এবং কিছু ফ্রিজিয়ান জাতের গরু আনেন। পরবর্তীতে তিনি ব্রাহমা নিয়ে আসার কথাও জানিয়েছেন। খামারে দেখাশোনার দায়িত্বে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজন মানুষকে। অনলাইনে ক্লাস শেষ করে যে সময়টুকু পেয়েছেন সেই সময়টুকু দিয়েছেন তার এই খামারে। তিনি আরও বলেন, করোনা মাহামারির মধ্যে লোকজন সচেতনতা মেনে তার গরু ক্রয় করছেন।
আজকাল অনেকেই ডেইরি খামার করে লাভবান হচ্ছে। ডেইরি খামার হচ্ছে একটি লাভজনক পেশা। তাই তো বগুড়ার ছেলে সোয়াইব খামার দিয়ে গরু লালন পালন করতে চান। কেননা গরু পালনে তেমন কোনো পরিশ্রম করতে হয় না, শুধুমাত্র সঠিক উপায়ে ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গরুর পরিচর্যা করতে পারলেই গরু পালনে লাভবান হওয়া যায়।
সোয়াইবের খামারে গিয়ে দেখা যায়, তার চার গাভির তিনটা বাচ্চা হয়েছে। খামারের দায়িত্বে থাকা লোকজন বলেন দুইটি গাভী দুইটি বাচ্চা দিলেও বাকি দুইটি গাভী এখনো বাচ্চা দেয় নাই। কিছু দিনের মধ্যেই বাকি দুইটি গাভীও বাচ্চা দিবে। প্রতিটি গাভী থেকে প্রতিদিন দুধ পাচ্ছেন ২০ লিটার করে।
জানা যায়, গত বছর যে দুটা গাভী খামারে আনা হয়েছিল সেই চালানের একটি গাভী বাচ্চা দিয়েছিল। ওই বাচ্চার ওজন এখন প্রায় তিন মণ। সোয়াইবের এই খামারে পাশের একটি শেডে রয়েছে উন্নত জাতের ছাগলের খামার। এই খামারে রয়েছে ৩৫টি ছাগল, আছে বেশ কয়েকটি বাচ্চা। দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা লোকজন জানায় যে, খামারের গরু-ছাগলদের রাখা হয় অত্যন্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে। করোনা মহামারিতে গরু যখন খামারে আনা হয় সেই গরুগুলোকে ৫/৬ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় বলে জানান তারা। তারা আরো বলেন, এই কোয়ারেন্টাইনে রাখার কারণে গরুদের মাঝে রোগ ছড়ায়নি।
গরু- ছাগলদের উন্নত মানের খাবার দেওয়ার পাশাপাশি এদের জন্য নিজেদের জমিতে উৎপাদন করা হয় নেপিয়ার (উন্নয়ন প্রযুক্তির) ঘাস। খামারি সোয়াইবের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এই খামার থেকে এই পর্যন্ত গরু বিক্রি করেছেন প্রায় ১০ লাখ টাকার। তার কথায় বোঝা যায় তিনি তার খামারটিকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এ কারণে তিনি এখানে দফায় দফায় বিনিয়োগ করছেন। এতে করে তিনি সফলতাও পাচ্ছেন। এই খামারি বলেন যে, নিজের সীমিত সম্পদের ওপর ভর করে এই পর্যন্ত এসেছেন। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সোয়াইবের খামারের সাফল্য দেখে অনেকেই এখন খামার করার চিন্তাভাবনা করছে। তার এমন সাফল্য দেখে বেশ কিছু বেকার ছেলে খামার দিচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সাথে এ প্রসঙ্গে কথা বললে ড.জিয়া তালুকদার বলেন, খামারি সোয়াইবের খামারে তার অফিসের লোকজন গিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন। সোয়াইবের এমন উদ্যোগ দেখে অনেকেই খামার করে লাভবান হচ্ছেন।
আগামি বছর কোরবানিকে সামনে রেখে সোয়াইবের রয়েছে বড় ধরনের পরিকল্পনা। তিনি বলেন, তার খামারে এখন যত গরু-ছাগল রয়েছে আগামী বছর এর দিগুণ হবে বলে তিনি আশাবাদী। নিজের বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি তিনি চান সামনে যুবকদেরও কর্মসংস্থান করে দিতে।