৬ কারণে মহা সমারোহে ব্যবসা শুরু করা উচিত না
আবু শাহাদত আহাম্মেদ সালিম: বড়সড় আরাম্ভ বা বিগ ব্যাঙ্গ লাউন্স মূলত অ্যাপল বা মাইক্রোসফটের মত বড় প্রতিষ্ঠানের নতুন উদ্যোগকে জানান দেওয়ার জন্য মানায় – যাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা, বিজ্ঞাপন ও বৃহৎ জায়গায় ব্যাবসা স্থাপনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু সীমিত সম্পদ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে স্টার্টআপের জন্য সবসময় স্থানীয় বাজারে ধিরে ধিরে প্রবশে, অর্থাৎ পানিতে অঙ্গুলী চুবিয়ে পানির গভীরতা মাপার মত পদ্ধতিতে এগোনো সুবিধাজনক।
বস্তুত স্টার্টআপের জন্য আপনি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং ব্লগে ব্যবসার ঘোষণা দিতে পারেন। তবে বাস্তব বাজার গবেষণার ক্ষেত্রে এটা সস্তা উপায় মনে হতে পারে, যা বড় কোম্পানি বাজারে প্রবেশের পুর্বে কখনোই করে না। যেহেতু আপনি স্বল্প পুজি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যবসা শুরু করছেন, তাই আপনার জন্য এটাই সঠিক। চলুন, আরও বিষদভাবে জেনে নেওয়া যাক কেন স্টার্টআপ পর্যায়ে মহা সমারহে ব্যবসা শুরু করা উচিত না।
১. গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন :
ব্যবসায়ের শুরু বা স্টার্টআপে প্রতিদ্বন্দ্বীর মানসিক প্রতিক্রিয়ায় নজর দিতে গিয়ে, তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে যেতে পারে। তাই এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনি চাইলে আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজারের পুরো পরিবেশ পরিবর্তন করতে পারেন নতুন কোন আইডিয়া দিয়ে অথবা আরও বেশি সমাধান খুজে পেতে পারেন গ্রাহকের সুবিধা বিবেচনা করে। হতে পারে, যা আপনার ইতিমধ্যে নির্মিত অবকাঠামো বা ব্যবস্থার মধ্যে লুকিয়ে আছে।
২. বিনিয়োগকারীর বিশ্বাসযোগ্যতা :
আপনার প্রবৃদ্ধির হকি লাঠির মত রেখাচিত্রকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবতে স্বভাবতই বিনিয়োগকারীরা বাস্তব প্রমাণ দেখতে চাইবেন। ঠিক যেমন, নতুন কোন ঝুকিপূর্ণ খাবার খাওয়ার পূর্বে কুকুরকে তা খাওয়ানোর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। একটি রোলআউট অর্থায়নে সমর্থন দেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন অর্থায়নের জন্য অন্য বিনিয়োগকারীর সমর্থন আদায় করা – সফল হলে যা হবে আপনার সাফল্যের প্রাথমিক ইঙ্গিত।
৩.প্রয়োজনীয় বিষয়ে সর্বোচ্চ তৎপরতা :
তরুন উদ্যোক্তাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ, কিভাবে দ্রুত তাদের ছোট ব্যবসা বড় করা যেতে পারে। একাধিকবার পুনরাবৃত্তির কারণে খুব ছোট বিষয়ও সমালোচনামূলক হয়, যদি তা একটি সীমিত বাজেট এবং ক্ষুদ্র পরিসরের হয়ে থাকে। প্রারম্ভে বিভিন্ন ব্যবসায়িক মডেল এবং প্রয়োজনীয় অবস্থান পরীক্ষায় নিরীক্ষার তৎপরতা খুবই প্রয়োজন।
৪. অংশীদার এবং ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের গুরুত্ব :
ব্র্যান্ডিং, নাম, অংশীদার ও বিপনন ব্যবস্থা পরিমাপ করা নতুন ব্যবসা শুরু করার পূর্বশর্ত। একজন বৈধ গ্রাহক আপনার মনোযোগ পেতে সর্বদা আপনার ব্যবসায় প্রয়োজন মত সমর্থন ও প্রসারের বন্দোবস্ত করবে। তবে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে আপনাকেই।
৫. পন্য এবং গ্রাহক তৈরি :
সামাজিক যেগাযোগের মাধ্যম এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি বড় অর্থ ব্যয় না করেই বাজারে ভরবেগ সৃষ্টি করতে পারেন। এই সরঞ্জামগুলির মাধ্যমে, ব্যবসার প্রভাব ও অগ্রগতি পরিমাপ এবং ফলাফল পরিমাপ করে সহজে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা সম্ভব।
৬. প্রশিক্ষণ এবং গ্রাহকদের সঙ্গে মোকাবেলা :
প্রশিক্ষণ ও গ্রাহক সম্পর্কে অবহেলা আপনার উন্নয়নশীল পরিবেশকে ধিরে ধিরে বাধা গ্রস্থ করবে। গ্রাহক সেবা , সাক্ষাৎকার এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা শিখতে সময় লাগে । এ জন্য সময় মত প্রশিক্ষণ এবং গ্রাহকদের সঙ্গে মোকাবেলা করার জন্য কর্মীদের প্রস্তুত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, কিছু ভুল সিদ্ধান্ত আপনার বড় অর্জনকে সম্পূর্ণ রুপেই ধংস করে দিতে পারে।
নতুন কিছুর প্রবর্তন, একটি দৃশ্যমান বিপনন বা বিতরণ বিপর্যয় রোধের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ খুবেই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, গ্রাহকদের স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে খুব দ্রুত আপনার প্রতিষ্ঠানের কোন নেতিবাচক দিক ছড়িয়ে দিতে পারেন। ফেসবুক এবং গুগল এর মত তারকা কোম্পানিগুলোও বড়সড় ভাবে তাদের ব্যবসা শুরু করেনি। তারা ছোট ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছে এবং প্রসারও করেছে ধিরে ধীরে।
সাবধানতার সাথে এগিয়ে যান। শুরুতেই এ ছয়টি বিষয় কাজে লাগিয়ে আপনার প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে।