চন্দনা মরে গেছে…
- ঋতুপর্না চাকী
নদীটির দিকে তাকালে সেই বিখ্যাত গানটা মনে পড়ে—তোমার চন্দনা মরে গেছে…। হ্যাঁ, নদীটির নাম চন্দনা। রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী। কিন্তু এখন শুধু নামে মাত্র রয়েছে নদীটির অস্তিত্ব। কালের পরিবর্তনে নদীটি হারিয়ে গেছে তার প্রাণ ও সৌন্দর্য্য। এখন নদীটি দেখে কেউই বিশ্বাস করবে না এই নদীতেই একসময় চলাচল করত বাহারী সব নৌযান। এই নদী পথই ছিলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। নদী ভরাট করে অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে তোলার কারণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে চন্দনা নদী।
রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার ডাহুকা গ্রামে উদ্ভুত পদ্মানদীর একটি শাখা নদী হচ্ছে চন্দনা। এক যুগ আগেও নদীটির ছিল ভরা যৌবন। এই নদীতেই চলত বাহারী সব পাল তোলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। পাংশা উপজেলার ভিতর দিয়ে এঁকেবেঁকে মোড় নিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালুখালি, কামার খালি, মধুখালি, আড়কান্দিসহ আরো বেশ কিছু অঞ্চলে এই নদীটি স্থাপন করেছিলো ভালো যোগাযোগব্যবস্থা। আগে গড়াই এবং কুমার নদীর সাথে সরাসরি সংযোগ ছিল চন্দনা নদীর। কিন্তু এখন এই নদী যৌবন হারিয়ে হয়েছে মৃত প্রায়। আষাঢ় মাসেও পানি থাকছে না নদীতে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, সেই সময়ে এই অঞ্চলের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আর কৃষকদের ভাগ্য বদলাতে এই নদীটির ভূমিকা ছিল অনেক। চন্দনা নদীকে কেন্দ্র করে তখন এই অঞ্চলসহ আরো বেশ কিছু অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসা বাণিজ্যকেন্দ্র। কিন্তু নদীটি আস্তে আস্তে মারা যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সেই সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
অন্যদিকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভরাট করছে নদী। তৈরি করছে বড় বড় স্থাপনা। ফলে নষ্ট হচ্ছে নদীর পরিবেশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন নির্বিকার থাকায় এ রকম ঘটনা ঘটছে।
এভাবে নদী ভরাট করার কারণে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে চন্দনা। ফলে কৃষিক্ষেত্রে, অর্থনৈতিকক্ষেত্রে ও জীব বৈচিত্রে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বিপর্যয়। যার প্রভাব আমরা প্রতিক্ষেত্রেই দেখতে পাই। এই নদীকে ঘিরে ছিল পার্শ্ববর্তী বেশকিছু এলাকার মানুষের জীবিকার একমাত্র উৎস। নদী থেকে মাছ ধরে এবং সেগুলো বিক্রি করে তারা সংসার চালাত এবং জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু নদীটি মরে যাওয়ার কারণে বহু মানুষ হারিয়েছে তাঁদের জীবিকার একমাত্র প্রধান উৎস।
বর্তমানে নদীটির এই ভয়াবহ অবস্থার কারণে সরকারিভাবে এই নদী রক্ষার দাবি জানিয়েছে তরুণ সমাজ। এ বিষয়ে স্থানীয় হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সোহাগ বলেছেন, ছোটবেলা থেকে তারা যে নদীটি দেখে বড় হয়েছেন, ক্রমান্বয়ে তা এখন বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। সরকার নদী সংরক্ষণের ব্যাপারে এখনই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তাদের পরের প্রজন্ম হয়তো এই নদী সম্পর্কে জানবেও না। ঐতিহ্যবাহী নদীটি হারাবে তার সব চিহ্ন। তাই অনতিবিলম্বে সরকারের কাছে এই নদী রক্ষার দাবী জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দসের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, চন্দনা নদীটি সংরক্ষণ বা সংষ্কারের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে দ্রুতই পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নদীটি খনন করে এবং নদীর দুই পাশ যাতে রক্ষা পায় এজন্য বেরি বাঁধ দিয়ে চন্দনা নদীটি সংরক্ষণের আশ্বাস তাঁর।