পূর্ণ বৃত্তি পেতে কী করব ?
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নিয়ে পড়ার জন্য এশিয়া-প্যাসিফিক ও কমনওয়েলথ বৃত্তি পেয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মানবাধিকারকর্মী শাখাওয়াত শামীম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ সপ্তাহেই তিনি পড়তে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব কিল’-এ। পূর্ণ বৃত্তি (ফুল ফান্ডেড) নিয়ে ভিনদেশে পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে লিখেছেন তিনি।
আপনি যদি বৃত্তি নিয়ে এক বছরের জন্য স্নাতকোত্তর পড়তে দেশের বাইরে যেতে চান, প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে প্রায় এক বছর আগে থেকে। কারণ, বৃত্তির খবরগুলো সাধারণত আসে প্রতিবছর নভেম্বর মাসে। আর ক্লাস শুরু হয় পরের বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহে। নভেম্বরে আবেদন শুরু হচ্ছে, তাই ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণের পরীক্ষা (আইইএলটিএস, টোয়েফল, জিআরই ইত্যাদি) দিয়ে ফেলতে হবে এর আগেই। ইউরোপের জন্য আইইএলটিএস আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আইইএলটিএসের পাশাপাশি জিআরইও প্রয়োজন হয়। আইইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম ৬.৫ হলে ভালো, তবে বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে স্কোর ৭ হলে সম্ভাবনা আরও বাড়ে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ৭ চায়, সঙ্গে আলাদা করে রাইটিং মডিউলেও ৭ থাকতে হয়।
যুক্তরাজ্যে পড়ার জন্য কমনওয়েলথ ও শিভনিং স্কলারশিপ, যুক্তরাষ্ট্রে ফুল ব্রাইট, সুইডেনে সুইডিশ একাডেমি, ইতালি ও ফ্রান্সে ইরাসমাস মুন্ডাস কিংবা এডিবি-জাপান উল্লেখযোগ্য। বৃত্তিসংক্রান্ত খবরাখবর পাওয়া যায়, এমন বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ওয়েবসাইটেও নিয়মিত বৃত্তির খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও নানা রকম বৃত্তি দেয়, তবে সেগুলো বেশির ভাগই শুধু টিউশন ফি মওকুফের জন্য। পূর্ণ বৃত্তি পেলে পুরো বেতন, থাকা-খাওয়ার ভাতা, চিকিৎসা বিমা ও বিমানে আসা-যাওয়ার টিকিট, এমনকি ভিসা আবেদনের খরচসহ সবই স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ বহন করে।
বৃত্তির জন্য আবেদনের আগে নিজের পছন্দমতো বিষয়ের ওপর ভর্তির ‘অফার লেটার’ পেতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিষয় নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এ ধরনের স্কলারশিপের ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা লাগে। আপনার কাজের ধরনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, এমন বিষয়ে ভর্তির আবেদন করলে সেটা গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। আবার শুধু কাজই দেখালে হবে না, সেই বিষয়ের ওপর আপনার এক বা একাধিক গবেষণাপত্র ছাপা থাকলে আবেদনপত্র আরও জোরালো হয়। গবেষণাপত্র কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার আগ্রহকে প্রমাণ করে।
আরেকটু সহজ করি। আমার ক্ষেত্রে যেমন, আমি আইনের ছাত্র। ইংল্যান্ডে ২০টির বেশি আলাদা বিষয়ের ওপর আইনে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ আছে। আমার মানবাধিকার বিষয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র আছে, তাই আমি পড়ার জন্য মানবাধিকার বিষয়েই আবেদন করেছিলাম।
দেশে স্নাতক-স্নাতকোত্তরে ভালো সিজিপিএ থাকলে ভালো, তবে মাঝামাঝি মানের ফল নিয়েও অনেকে বৃত্তি পাচ্ছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের ফল বিবেচনায় আনা হয় না। অনেকেরই ধারণা, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে হয়তো পূর্ণ বৃত্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এই ধারণা ভুল। আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন, এটা বিবেচনা করা হয় না। আমি নিজেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম।
তবে আইইএলটিএসের ভালো স্কোর, স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে ভালো ফল, কাজের অভিজ্ঞতা আর নিজের আগ্রহের বিষয়ের ওপর গবেষণাপত্র থাকার পরও আরেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো—সহশিক্ষা কার্যক্রমে (এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ) আপনার অংশগ্রহণ। এ ধরনের কাজ বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ এমন হতে হবে, যার মাধ্যমে ফুটে উঠবে আপনার নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি। তারপর লাগবে দু-তিনজন শিক্ষকের ‘রেফারেন্স লেটার’।
প্রায় সব বৃত্তির আবেদনেই বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। বিশেষ করে কেন আপনি বৃত্তির জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করছেন, আপনার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা কী ইত্যাদি। আপনার সম্পর্কে এক হাজার শব্দে লিখতেও হতে পারে। এই লেখাগুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। মনে রাখতে হবে, পূর্ণ বৃত্তি পাওয়া কোনোভাবেই ভাগ্যের জোরে হয় না। আপনার যোগ্যতাই এখানে একমাত্র মাপকাঠি। সারা পৃথিবী থেকে পাঠানো হাজার হাজার আবেদনপত্র থেকে প্রতিটি যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিত করা হয় চূড়ান্ত প্রার্থীকে।