যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে চাইলে
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার সুনাম নতুন করে বলার কিছু নেই। বিশেষ করে বিজ্ঞানবিষয়ক উচ্চ শিক্ষা আর উচ্চতর গবেষণার জন্য বিশ্বে প্রথম সারিতেই আছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। প্রযুক্তির এ যুগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব স্পষ্টতই দৃশ্যমান। আর এ জন্য বিদেশি শিক্ষার্থী যারা বিদেশে উচ্চতর গবেষণা বা পিএইচডি করতে চায় তাদের বেশির ভাগের প্রথম দিকের পছন্দ থাকে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই মোহাম্মাদ মোস্তফা কামালও ২০১৫ সালের ফল সেমিস্টারে (আগস্ট মাসে) যুক্তরাষ্ট্রে ফার্মাসউটিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে পিএইচডি গবেষণার সুযোগ সানন্দে গ্রহণ করেন। তিনি কীভাবে এই সুযোগ পেলেন আর কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে চাইলে তার করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরছেন।
আমি ইউনিভার্সিটি অব লুইজিয়ানা অ্যাট মনরোর স্কুল অব ফার্মেসিতে ক্যান্সার ড্রাগ ডেলিভারি সিস্টেম্স বিষয়ে গবেষণা করছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রির অর্থায়ন বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে আসা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই এই দুটি ডিগ্রির জন্য আসে। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি দেওয়া হয়। অনার্সের উপরেও ডিগ্রি দেয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে আসতে আমার যা যা লেগেছে
পিএইচডি প্রোগ্রামে সুযোগ পাওয়ার জন্য আমাকে ফার্মেসি বিষয়ে অনার্স ডিগ্রির পাশাপাশি জিআরই (গ্রাজুয়েট রেকর্ড এক্সাম) ও টোফেল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ ফরেইন ল্যাংগুয়েজ) নামক দুটি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হয়েছে। এ ছাড়া কিছু গবেষণার অভিজ্ঞতাও দেখাতে হয়েছে। সেই সাথে লেগেছে আমার ব্যক্তিগত তথ্য, গবেষণা ও পেশা পরিকল্পনা সংবলিত স্টেটমেন্ট অব পারপাস এবং আমার তিনজন শিক্ষকের কাছ থেকে তিনটা রিকমেন্ডেশন লেটার।
যুক্তরাষ্ট্রে আমার পিএইচডি যেমন চলছে
আমি গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিন্ট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় আমার টিওশন ফি ফ্রিসহ বাৎসরিক সন্মানি প্রদান করে । যেটা দিয়ে আনুষঙ্গিক ব্যয়বহন করা সম্ভব। সপ্তাহে আমার কর্মদিবস পাঁচদিন। যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি গবেষণার ভিন্ন দিক হচ্ছে, গবেষণার পাশাপাশি কমপক্ষে ১০টি কোর্স (৩০ ক্রেডিট ঘণ্টা) সম্পন্ন করতে হয়। প্রতি সেমিস্টারে কোর্স নেওয়ার ওপর ভিত্তি করে পছন্দমতো সময়ে নির্ধারিত কোর্সগুলো শেষ করতে হয়। এরপর বাকি সময়টা শুধু গবেষণার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পিএইচডির এমন নিয়মের কিছুটা হেরফের আছে।
আবেদনের প্রাথমিক যোগ্যতা, জিআরই, টোফেল এবং স্যাট বিষয়
মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ডিগ্রি চায়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স ডিগ্রি চায়। আর অনার্স ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে বাংলাদেশি এইচএসসি ডিগ্রি চায়। মাস্টার্স এবং পিএইচডির জন্য জিআরই এবং টোফেল স্কোর চায়। তবে অনার্সে আবেদন করতে জিআরই এবং টোফেলের সাথে বাড়তি হিসেবে স্যাট স্কোরও চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ মধ্যম থেকে নিম্ন র্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনার্স বা মাস্টার্সে ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ (৪.০০ স্কেলে), জিআরই স্কোর ৩০০ (৩৪০ এর মধ্যে) এবং টোফেলে ৮০ (১২০ এর মধ্যে) চেয়ে থাকে। উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর উচ্চ নম্বর ও গবেষণার অভিজ্ঞতা দাবি করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এই প্রয়োজনীয় স্কোরগুলোর ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়। তাই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে অথবা ওয়েবসাইটে দেওয়া ইমেইলে যোগাযোগ করে সব তথ্য পরিষ্কারভাবে জেনে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়টি মধ্যম র্যাংকিংয়ের। আমার জিআরই স্কোর ৩১১ এবং টোফেল স্কোর ৯৭ ছিল।
কখন কোথায় এবং কীভাবে আবেদন করবেন
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবর্ষ তিনটি সেমিস্টারে বিভক্ত। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস ফল সেমিস্টার, জানুয়ারি থেকে মে মাস স্প্রিং সেমিস্টার এবং জুন থেকে আগস্ট নিয়ে হয় সামার সেমিস্টার। তবে ফল সেমিস্টারেই সর্বাধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তাই কেউ আবেদন করলে ফল সেমিস্টারকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত হবে। কোনো সেমিস্টারের ভর্তির আবেদন করার শেষ তারিখগুলো সাধারণত ভর্তির কয়েক মাস আগে নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলো ভর্তির আবেদনের নিয়মাবলী সংশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাবে। যারা বাইরে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য আগ্রহী তাদের প্রথমেই উচিত হবে জিআরই এবং টোফেল টেস্টসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদীর প্রস্তুতি আগেভাগে নেওয়া। এরপরের ধাপ নিজের প্রোফাইল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করা। unnews.com ওয়েবসাইট থেকে বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং দেখে নেওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে Addmission and requirments গুলো দেখে নিতে হবে। যাতে নিজের প্রোফাইল ওই নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযুক্ত কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়। কোনো তথ্য না দেওয়া থাকলে গ্র্যাজুয়েট কো-অর্ডিনেটরকে ইমেইল করে প্রশ্ন করা যেতে পারে। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই এ রকম ইমেইল অ্যাড্রেস দেওয়া থাকে। আমেরিকার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনেই আবেদন কার্যক্রম চলে। প্রয়োজনীয় বিষয় চায় এবং সেগুলো সরবরাহ করতে হয়। তারপর তাদের নির্ধারিত শর্ত মোতাবেক সিলেক্ট হয়ে গেলে কপাল খুলে যায় আমেরিকার উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার।
বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা পেতে পারেন যেখানে
বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সহযোগিতার জন্য বেশকিছু প্লাটফর্ম গড়ে তুলেছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হায়ার স্টাডি অ্যাব্রোড বাংলাদেশ চ্যাপ্টার
(https://www.facebook.com/groups/HigherStudyAbroad/?ref=bookmarks)
নেক্সটপ ইউএসএ(https://www.facebook.com/groups/nextop.usa/) ইত্যাদি। এসব গ্রুপে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে অল্প সময়েই নির্দিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কারো পরামর্শ পাওয়া যায়।
যাঁরা গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চান তাঁদের জন্য আমার পরামর্শ
প্রথমত
ভর্তির ক্ষেত্রে একাডেমিক রেজাল্ট গুরুত্ত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। তাই যাঁরা এখনো অনার্স অথবা মাস্টার্স পড়ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরিকল্পনা করছেন তাঁদের একাডেমিক রেজাল্টকে গুরুত্ত্ব দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত
যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তি ও আর্থিক বৃত্তি (প্রধানত টিচিং/ রিসার্চ এসিন্টেন্টশিপ) অনেকটাই নির্ভর করে ভালো জিআরই ও টোফেল স্কোরের ওপর। অনেক সময় অনার্স এবং মাস্টার্সের ফলাফল কম হলেও জিআরই পরীক্ষায় ভালো নম্বর দিয়ে কাভার করা যায়। জিআরই বা টোফেল পরীক্ষায় ভালো করতে হলে শুরু থেকেই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের চর্চা করতে হবে। ইংরেজি পড়া, বলা, লেখা এবং শোনার দক্ষতা চর্চা একাডেমিক পড়াশোনার সাথে আগেভাগেই শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ভালো উৎস যেমন এএলডেইলি ডটকম, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন বা আন্তর্জাতিক মানের কোনো ইংরেজি পত্রিকা থেকে নিয়মিত পড়ার অভ্যাস পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর তোলার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
তৃতীয়ত
যে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর গবেষণা করতে আগ্রহী, সে বিষয়ে প্রজেক্ট কিংবা থিসিস করে কিছু অভিজ্ঞতা প্রস্তুত করে রাখা যেতে পারে। যা ভালো গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে রাখবে।