বিদেশে পড়তে যেতে কোন পরীক্ষা জরুরি
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন সানজিদা ইয়াসমিন। বন্ধুদের সঙ্গে ভর্তি হয়েছিলেন জিম্যাটের কোচিংয়ে। হাজারখানেক টাকা আর তিন মাস সময় ব্যয় করে ক্ষান্ত দেন তিনি। সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএ করতে গেলে কিংবা বাণিজ্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের সময় জিম্যাট স্কোর জমা দিতে হয়। ফিন্যান্সের শিক্ষার্থী সানজিদার লক্ষ্য অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ছিল না, তিনি ইউরোপের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চান। বেশ কয়েক দিন খাটুনির পর আবিষ্কার করেছিলেন, জিম্যাট তাঁর জন্য নয়। অনেক সময়ই শিক্ষার্থীরা এ ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই অনেকে আইইএলটিএস, টোয়েফল, জিআরই, জিম্যাট বা স্যাট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। অনেকে আবার কোন পরীক্ষাটিতে অংশ নেবেন, সেটা ঠিক করতে করতেই দেরি করে ফেলেন।
দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং পড়ার বিষয় ভেদে ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা আপনার কাজে লাগতে পারে। তাই আপনার লক্ষ্য এবং যোগ্যতা অনুসারে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কোনো কোনো পরীক্ষার জন্য শুধু ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকাই যথেষ্ট, কোনোটার জন্য আবার একটু বড় পরিসরে প্রস্তুতি নিতে হয়। তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর কোনো না কোনোটার স্কোর মোটামুটি আবশ্যক বলা যায়। আইইএলটিএস, টোয়েফল, জিআরই, জিম্যাট এবং স্যাট—কোনটা কী কাজে আসে, সেটাই চলুন জানা যাক।
ভাষা দক্ষতার জন্য আইইএলটিএস ও টোয়েফল
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণের সনদ হচ্ছে আইইএলটিএস বা টোয়েফল। স্নাতক, স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টোয়েফল স্কোর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। টোয়েফল পরীক্ষার মোট স্কোর ১২০। চার ভাগে পরীক্ষা হয়—রিডিং, লিসেনিং, স্পিকিং, ও রাইটিং। টোয়েফল পরীক্ষার ফি ১৮০ ডলার বা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার টাকা। ets. org/toefl সাইটে পরীক্ষার জন্য নাম নিবন্ধন করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফি জমা দিতে হয়।
যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে ভাষা দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস স্কোর জমা দিতে হয়। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করা হয়। আইইএলটিএস পরীক্ষার মোট স্কোর ৯। পরীক্ষা হয় চার ভাগে—রিডিং, লিসেনিং, স্পিকিং ও রাইটিং। বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি এডুকেশন অনুমোদিত বিভিন্ন কেন্দ্রে আইইএলটিএসের জন্য নাম নিবন্ধন করা যায় ও পরীক্ষা দেওয়া যায়। আইইএলটিএস পরীক্ষার ফি ১৫৮০০ টাকা।
মেধা-দক্ষতা প্রমাণের জন্য জিআরই
বাংলাদেশে আপনি প্রকৌশল, বাণিজ্য কিংবা কলা অনুষদের যেকোনো বিষয়েই পড়ুন না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেকোনো বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আবেদনের জন্য জিআরই স্কোর প্রয়োজন হয়। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই জিআরই স্কোর গ্রহণ করা হয়। ৩৪০ নম্বরের এই পরীক্ষায় ভারবাল রিজনিং, কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং আর অ্যানালিটিক্যাল রাইটিংয়ের ওপর প্রশ্ন থাকে। ets. org/gre ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার জন্য নাম নিবন্ধন করা যায়। জিআরই পরীক্ষার ফি ২০৫ ডলার বা সাড়ে ১৬ হাজার টাকা। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পরীক্ষার ফি জমা দিতে হয়। নাম নিবন্ধনের সময়েই নির্ধারিত কেন্দ্র নির্বাচন করে পরীক্ষার সময় ঠিক করে নিতে হয়।
জিম্যাট যাদের জন্য
সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে পড়াশোনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জিম্যাট স্কোর গ্রহণ করা হয়। গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্টের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে জিম্যাট। ৮০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় রাইটিং, ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং, কোয়ান্টিটেটিভ ও ভারবাল—এই চার ভাগে প্রশ্ন করা হয়। এই পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে mba. com/global সাইটে ২৫০ ডলার বা প্রায় ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে নাম নিবন্ধন করতে হয়।
স্যাট যাদের জন্য
স্যাট হচ্ছে স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্টের সংক্ষিপ্ত রূপ। বাংলাদেশ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে স্নাতক পর্যায়ে কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে চান, সে ক্ষেত্রে স্যাট স্কোর প্রয়োজন হতে পারে। collegereadiness. collegeboard. org সাইট থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। নাম নিবন্ধন করতে ও অনলাইনে ফি জমা দিতেও এই ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে পারেন।
লক্ষ করুন
* পরীক্ষার জন্য নাম নিবন্ধনের সময় পাসপোর্ট নম্বর প্রয়োজন হয়। এমনকি পরীক্ষার কেন্দ্রে পরিচয় প্রমাণের জন্যও পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে হয়। তাই আবেদনের আগে পাসপোর্ট নিশ্চিত করুন।
* অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড কিংবা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন।
* যাঁদের ক্রেডিট কার্ড নেই, তাঁরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি সেন্টারের মাধ্যমে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন।
* সাধারণত মাস তিনেক আগে সময় নিয়ে আবেদন করা উচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রায় এক-দেড় মাস আগে থেকে নির্দিষ্ট তারিখের জন্য নির্ধারিত আসন পূরণ হয়ে যায়।
* পরীক্ষাগুলোতে ভালো স্কোর পাওয়ার জন্য অন্তত ছয় মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা উচিত। ইউটিউবের বিভিন্ন টিউটোরিয়াল ভিডিও থেকে কোন পরীক্ষায় কেমন প্রশ্ন হয়, তা নিয়ে সরাসরি ধারণা পাওয়া যাবে।