প্রেগনেন্সিতে ডায়েট প্ল্যান
রবিউল কমল : প্রেগনেন্সি নারীর জীবনে অন্যতম মাইলফলক। মা হওয়ার অনুভূতি একেবারেই আলাদা। তাই এর জন্য চাই আলাদা প্রস্তুতি। আচ্ছা, ভেবে দেখুন তো বিদেশ যাওয়ার কত মাস আগে থেকে আপনারা ভিসার জন্য প্ল্যান করেন, কিংবা বাড়িতে অতিথি আসার কথা থাকলে কতদিন আগে থেকে বাড়িঘর পরিষ্কার করেন, অথবা বন্ধুর বিয়ের জন্য কী পরবেন তা বিয়ের কয়েক সপ্তাহ আগেই পরিকল্পনা করে ফেলেন। আসলে আমরা সবাই পরিকল্পনা করতে ভালবাসি। সত্যি কথা বলতে, কিছু দিয়ে তার বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা করতে আমাদের জবাব নেই। তার মানে আমরা সবকিছুতেই ব্যাক ক্যালকুলেশন করতে পছন্দ করি। কিন্তু প্রেগন্যান্সির বেলায় এই ব্যাক ক্যালকুলেশনের ব্যাপার মাথায় আসে না।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে বাড়িতে আত্মীয় এলে যেমন বাড়ি পরিষ্কার করতে হয়, তেমন প্রেগনেন্সিতে শরীর পুরোপুরি সুস্থ ও সবল রাখা জরুরি। বাচ্চার কাছে তো আপনার শরীরটাই একটি বাড়ি, সে বাড়িতে ওকে নয় মাস থাকতে হবে। তাই আনাগত সন্তানকে একটি সুন্দর পরিবেশ দেওয়া আপনার দায়িত্ব । তার মুখেই তো একদিন আপনি মা ডাক শুনবেন! একবার ভাবুন তো তখন আপনার কেমন লাগবে! তবে মনে রাখবেন আত্মীয়রা বেশিদিন বাড়িতে থাকলে বাড়ির সিস্টেম ওলটপালট হয়ে যায়, ঠিক একইভাবে বাচ্চার জন্য আপনার শরীরেও নানরকম পরিবর্তন হয়। তাই বেড়ে ওঠার জন্য সঠিক পরিকাঠামো না পেলে বাচ্চার যেমন ক্ষতি, তেমন ক্ষতি হবে আপনারও। আপনি যদি ঠিকভাবে না খান তাহলে জানবেন আপনার বাচ্চাও পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না। আর এতে শরীরের রিজার্ভ সোর্সও আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
বাচ্চার কাছে তো আপনার শরীরটাই একটি বাড়ি, সে বাড়িতে ওকে নয় মাস থাকতে হবে। তাই আনাগত সন্তানকে একটি সুন্দর পরিবেশ দেওয়া আপনার দায়িত্ব ।
প্রেগনেন্সিতে ফিট থাকা জরুরি। অনেকে আছেন প্রেগনেন্সির আগে ওজন কমানোর চেষ্টা করেন। সকাল-সন্ধ্যা দৌড়ান অথবা একাট ডায়েট প্ল্যানে লাভ না হলে অন্য একটি দিয়ে ট্রাই করেন। আর ক্রাশ ডায়েটিং তো আছেই। এর ফলে রোগা হলেও নিউট্রিশন লেভেল যে শূণ্যতে গিয়ে দাঁড়ায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সির সময় ওজন অদ্ভুতভাবে বাড়তে থাকে, ক্লান্তি এবং বিরক্তি লাগে, ডেলিভারির সময় জটিলতা দেখা যায়। তাই ওজন কমানো নয়, শরীরের পুষ্টি বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। চা বা কফি খাওয়া একদম কমিয়ে দিন। সিগারেট এবং এ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন। প্রেগনেন্সির সময় নিয়ম মেনে সময়মতো খান। আপনাদের সুবিধার্থে একটি ডায়েট প্ল্যান দিলাম। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মডিফাই করে নিতে পারেন।
- ঘুম থেকে ওঠার দশ মিনিটের মধ্যে কিছু পরিমাণ শুকনো খাবার খান।
- এক ঘণ্টার মধ্যে সকালের নাশতা করুন। ব্রেড, বিস্কুট, আচার এবং সস না খাওয়ায় শ্রেয়।
- সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে দুপুরের খাবার খান। এর বেশি দেরি করবেন না। দুপুরে বাড়িতে তৈরি করা খাবার খাবেন।
- দুপুরের খাবারের ২ ঘণ্ঠা পরে দই খেতে পারেন। তবে লবণ বা চিনি মেশাবেন না। গোলমরিচ বা জিরাগুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
- দিনে একবারের বেশি চা বা কফি খাবেন না।
- চিজ, পনির, মাখন এবং বাদাম ডায়েটে রাখুন।
- সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮ টার মধ্যে ডিনার করুন। ডিনারেও বাসায় তৈরি খাবার খান।
- রাত ৯টার দিকে সিদ্ধ সবজি বা সবজি দিয়ে খিচুড়ি খেতে পারেন।
- সারাদিন পর্যাপ্ত পারমাণ পানি খান। না হলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
- ভিটামিন এবং মিনারেল সাপ্লিমেন্ট ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে থাকুন।