ফিচার ডেস্ক: আপনি কি অত্যাধিক কায়িক পরিশ্রম করেন অথবা খুব বেশি অলস? অলস অথবা পরিশ্রমী যায় হোক না কেন, জেনে রাখুন এই দুই প্রান্তের মানুষের শরীরে কারনে অকারনে ব্যাথা হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্ততপক্ষে ১১৬ মিলিয়ন আমেরিকান দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথা শরীরে বয়ে বেড়ায়। শুধু আমেরিকাতে নয়, বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা প্রকট। চলুন আজ জেনে নিন ব্যাথা উপশমের কিছু চমকপ্রদ্য প্রাকৃতিক উপায়:
হাসি: হাসি কোন ঔষধ নয়, কিন্তু এটা স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারী। মানসিক চাপ কমাতে, অল্প কিছু ক্যালরী খরচ করে একটা দীর্ঘতম জীবন পেতে, দিনের কিছু সময়ে কিছুক্ষন সুস্থ হাসি আশর্যজনক কাজ দেয় এবং প্রাকৃতিকভাবে ব্যাথা উপশম করে। এটা শরীরের মধ্যে এক ধরনের রাসায়নিক ঢেউয়ের সৃষ্টি করে, যা ব্যথা উপশমে ঔষধের মত কাজ করে।
ধুমপান ত্যাগ: জীবনে ভালো কিছুর জন্য আপনি এই অভ্যাসটা ত্যাগ করুন। পিঠের ব্যথা নিয়ে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় উঠে এসছে চমকপ্রদ্য কিছু তথ্য। সমিক্ষায় ধুমপান পিঠে ব্যাথা এবং ডিক্স সমস্যার জন্য গুরুতর কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং বর্তমানে ধুমপায়ীরাই সর্বাধকি পিঠে ব্যাথায় ভুগছে।
মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন: মানসিক চাপের শারীরিক প্রতিক্রিয়া থাকে- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসবেগ বেড়ে যাওয়া, পেশির উত্তেজনা, এসব মানসিক চাপের কারনে হয় এবং এ থেকে শরীরে ব্যাথা হয়। ওয়েবএমডির রিপোর্ট অনুযায়ী, মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোন গভীর চিন্তা উল্যেখযোগ্যভাবে পেশির উত্তেজনা বৃদ্ধি করে যা দীর্ঘস্থায়ী পিঠ ব্যাথার কারন। রক্তের অতিরিক্ত চাপ, মাত্রাতিরিক্ত কার্টিসলকে স্ট্রেস হরমোন বলা হয়। ২০১৩ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ব্যথা বাড়ে দুর্বলতা থেকে।
চিত্তবিনোদন নানা রকম হতে পারে – হতে পারে মেডিটেশন, একটা ভাল বই পড়া, একটু হাটতে যাওয়া, ভাল একটা ঘুম দেওয়া। কখনো কখনো এধরনের চিত্তবিনোদন মানসিক চাপ কমানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুম: ২০১২ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ঘুম মস্তিষ্কের প্রতিরক্ষা মুলক সুফল বয়ে আনে, মেজাজ ও স্বাস্থ ভাল করে, ঘাড় ও শরীরের ব্যথা কমায়। এক গবেষণায়, ১৮জন সুস্থ পূর্ণবয়ষ্ক তরুনকে দুটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। যে সব মানুষ লম্বা সময় ঘুমায়, তারা ঘুম বঞ্চিতদের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি সময় কোন তাপীয় উৎসের উপর হাত রাখতে পারে। যেটা তার ব্যথা সহ্য ক্ষমতার পরিচায়ক।
প্রেমে পড়া: দাম্পাত্য জীবনকে দীর্ঘায়ু করে, চাপ কমায়, রোগ ব্যাধির হার কমায় এবং যৌন জীবনকে উৎসাহিত করে। ২০১১ সালে ১৭ জন নারীর উপর চালানো এক জরিপে, দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে জড়ানো নারীদের শরীরে হালকা আঘাত জনিত ব্যথা দেওয়া হয়। তাদের কিছু সংখ্যককে ব্যথা দেওয়ার সময় তাদের সঙ্গির ছবি দেখতে দেওয়া হয়, আর কিছু সংখ্যককে ছবি দেখতে দেওয়া হয় না। যে সব মহিলাকে তাদের প্রিয়জনের ছবি দেখতে দেওয়া হয়, তারা অপেক্ষাকৃত কম ব্যথা অনুভব করেন। ফটো দেখার কাজে সক্রিয় মস্তিষ্কের অংশ ব্যথা অনুভব থেকে নিরাপদ থাকে। উল্লেখ্য নারীর মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক এবং বৃহত্তর কার্যকালাপ সবসময় বর্তমান থাকে।
সঠিক খাদ্য গ্রহণ: প্রদাহ – বিশেষ করে লালাভাব, উষ্ণতা, ফোলা এবং ব্যথা হওয়া, জাতীয় অসস্তিকর রোগ আরোগ্যে সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা জরুরী। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের কারনে ব্যথার অনুভূতি যখন সর্বদা বর্তমান থাকে যা ক্যান্সার সহ হৃদরোগ এবং অন্যআন্য গুরুতর স্বাস্থ উৎবেগ বাড়ায়। একারনে এসব বিবেচনা করে নির্দিষ্ট খাদ্য পছন্দ করা জরুরী। ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ ভূগর্ভস্থ খাদ্য, ফল, সকলপ্রকার সবজি, চর্বিহীন মাংস প্রদাহ জনিত ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে কাজ করে। মিহি শস্য দানা, অত্যাধিক শর্করা সম্পৃক্ত এবং ট্রান্স ফ্যাট, এলকোহল এবং এ জাতীয় কিছু খাবার প্রদাহ এবং ব্যথায় অবদান রাখে।
সচল থাকুন: আপনার যদি শরীরে ব্যথা হয়, ঠিক সেই সব ব্যায়ামের কথা ভাবুন যা আপনার এই অস্বস্তি দুর করবে। তবে উল্যেখযোগ্য ভাবে গবেষণায় দেখানো হয়েছে, চলাচল অবশ্যয় নিরাপদে এবং সাবধানে হলে, এই ধরনের পরিস্থিতির এড়িয়ে চলা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যয়াম একটি ছুটন্ত ঘোড়ার ন্যায়, যা শরীরকে নাড়িয়ে দেয় এবং ব্যথা দুর করে। এ ছাড়াও ব্যায়াম শরীর থেকে সাইটোকাইন্স নামক এক ধরনের প্রদাহ বৃদ্ধিকারী পদার্থ কমায়। ২০১২ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্নায়ুবিক ব্যাথার ক্ষেত্রে শারীরিক কসরত প্রভাব ফেলে। এটা মেজাজের উন্নতি করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমিয়ে জীবন আরও মানসম্মত করে।
গান শুনুন: চিত্তবিনোদনের ক্ষমতাকে অবমুল্যয়ন করবেন না। সাধারণত এটা কৈতুকের মত। কিন্তু, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথা উপশমে বিস্ময়কর কাজ করে। সহজভাবে ব্যথা গ্রহন করাতে শেখানোর চেয়ে আরও উল্যেখযোগ্য ভাবে ব্যথার তীব্রতা কমায়। ভিডিও গেম, গান শোনা, এগুলোর ব্যথার সাথে যুদ্ধ করারা আশ্চর্য ক্ষমতা আছে।
কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক-এর ২০০৬ সালে চালানো এক গবেষণা মতে, একজন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগী যদি দিনে এক ঘন্টা গান শোনে তবে তার ব্যথা ১২ থেকে ২১ শতাংশ চলে যায়, একই রকম রোগী যারা গান শোনে না তাদের থেকে।
ব্যস্ত থাকুন: যখন আপনার মাথায় কোন কম্পোন বা শরীরের জয়েন্টগুলোয় শুড়শুড়ি অনুভূত হয়, তখন যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, যা আসলে আপানকে স্বস্তি এনে দেবে। যৌন উদ্দীপনা ব্যাথার ঔষধের পাশাপাশি ব্যথা কমাতে কাজ করে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যথা কমলে তা পরবর্তি দুই দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাইগ্রেন ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য যৌনতা বিশেষ ভাবে উপকারী হতে পারে।