ক্যানের খাবার কেন খাচ্ছি !
আমরা সর্বদাই দৌড়ের উপর আছি, তাই না? চাকুরীর পাওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছি, আবার যাদের চাকুরী আছে তারা পেশাজীবনে অধিকতর ভালো থাকার জন্য এক চাকুরী ছেড়ে আরেক চাকুরীর পেছনে দৌড়াচ্ছি ইত্যাদি। এমন দৃশ্যাবলীর প্রেক্ষিতে, কার হাতে এত সময় আছে যে সে রান্না করে খাবে? সুতারাং, এসব কারণে আমরা প্রায়ই সংরক্ষিত প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি নির্ভর হয়ে পড়ছি। এই প্রক্রিয়াজাতকরণ সংরক্ষিত খাবার পেতে সচরাচর যে খাবার ঘরে তৈরী করে খাওয়া হয় তার চেয়ে তুলনামুলক সময় কম লাগে এবং অধিকতর মজাদারও হয়ে থাকে। আবার মধ্যরাতে যখন আমাদের ক্ষুধা লাগে তখন এই খাবার প্রাই আমাদের ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে, তাই না? ঢাকনা খুললেই খাওয়া সম্ভব হচ্ছে পাত্রে সংরক্ষিত স্যূপ বা অন্যান্য খাবার। কলেজে ছুটছেন দেরি করে, নাস্তা করার মতো সময় হাতে নেই? হয়তো এক প্যাক বাদাম নিয়ে যান। স্যান্ডউইচ বানাতে চাইছেন? সেক্ষেত্রে ক্যানের সসই হয়তো সেরা পছন্দের তালিকায় থাকে। যাহোক, এই প্রক্রিয়াজাতকরণ সংরক্ষিত খাবারের কারণে আমাদের স্বাস্থ্যের যে ঝুঁকি রয়েছে তা আমরা কদাচিৎ লক্ষ্য করে থাকি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই খাবারের গায়ে নিরাপদ কথাটি উল্লেখ থাকে, কিন্তু বাস্তবে তা ভিন্ন। স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল ‘বোল্ডস্কাই’জানিয়েছে এসব প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষতিকর কিছু দিক। তনুশ্রী কুলকার্নীর নিবন্ধ অবলম্বনে জানাচ্ছেন শিমি আক্তার।
বিপিএ বিসফেনল ব্যবহার
- সাধারণত এটা আমাদের সবারই জানা আছে যে, প্রক্রিয়াজাতকরণ সংরক্ষিত খাবারের প্যাকে বিসফেনল জাতীয় উপাদান বা বিপিএ প্রয়োগ করা হয়। এই খাবারের অধিকাংশ মোড়ক, বোতল, বক্স বা প্যাকেটের মধ্যে প্লাস্টিকের বিপিএ যুক্ত প্রলেপ বা আবরণ খাবারকে নিরাপদ ও সতেজ রাখে। এই কৃত্রিম কেমিক্যাল খাবারকে সতেজ রাখে ঠিকই কিন্তু বিনিময়ে স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করে। নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বা স্নায়ুর ব্যাধি, রিপ্রোডাকটিভ ডিজঅর্ডার, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের ঝুঁক, অতিশয় স্থুলতা বা মোটা এবং আরো অন্যান্য মারাত্মক জটিল রোগের জন্য এই বিপিএকেই দায়ি করা হয়ে থাকে। এমন আরো কিছু খাবারের আইটেমে বিপিএ রয়েছে যা তার ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যেমন-টমেটোর খাবার।
প্রক্রিয়াজাতকরণ মাংস ও ক্যান্সারের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ
- ‘দি ওর্য়াল্ড ক্যান্সার রিসার্স ফান্ড’ এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রক্রিয়াজাতকৃত সংরক্ষিত মাংস ও ক্যান্সারের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। যেহেতু এন্টিবায়োটিক, সোডিয়াম নাইট্রেট এবং হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাংস প্রস্তুত করা হয় তাই যে কোনো মূল্যে এই খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ।
অধিকমাত্রায় রাসায়নিক প্রয়োগ
- অধিকমাত্রায় রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে তৈরী এইসব খাবার আজকাল প্রেমিক-প্রেমিকাদের নিকট অতিপ্রিয়। এসব খাবারের দর্শণীয় কনটেইনারের দিকে তাকালে আপনি বুজতেই পারবেন না যে দেখতে প্রায় সতেজ উপাদানসমূহে প্রকৃতপক্ষে কীটনাশক দিয়ে ভরা। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এগুলো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এসব খাদ্যদ্রব্য নষ্ট বা ক্ষয় হওয়া রোধ করতে অধিক পরিমাণে লবনও দেওয়া হয়। ক্যানের এই সংরক্ষিত খাবার গ্রহণে বয়োজেষ্ঠ্য, শিশু এবং যারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন তাদেরও শারীরিক ক্ষতিসাধন করে থাকে।
অ্যালুমিনিয়াম দূষিতকরণ
- আপনি কি জানেন, অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় কনটেইনারগুলো ব্যবহার করা হয় স্যূপ, টমেটো এবং বিয়ারের মোড়কীকরণের জন্য যা খাবারকে দুষিত করে থাকে। অধিকাংশ খাবার প্রথমে অ্যালুমিনিয়ামের ক্যানের মধ্যে রাখা হয় এবং তারপর তাদের সতেজতা ধরে রাখার জন্য প্রস্তুতকরণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অ্যালুমিনিয়াম কনটেন্ট খাদ্যের কিছু উপাদান শোষণ করে নেয়। কেউ কেউ তর্ক করতে পারেন যে ক্যানের মধ্যকার প্লাস্টিক লাইন অ্যালুমিনিয়াম দুষিতকরণের হাত থেকে রক্ষা করে, কিন্তু সত্য হলো, যখন তাপ প্রয়োগ ও মোড়কীকরণ করা হয় তখন এটি অ্যালুমিনিয়ামের র্যাডিক্যাল নির্গত করে। র্দুভাগ্যক্রমে দেখা যায় যে, কম ওজনের বা কম দামের যাই হোক না কেন, এদের নিয়মিতভাবেই মোড়কীকরণ করা হয়ে থাকে। প্রতিনিয়ত এসব খাবার খাওয়ার ফলে অপনার শরীরে অ্যালুমিনিয়াম জমা হতে থাকে ফলে এ্যালজেইমারস ধরণের রোগ দেখা দিতে পারে। অতএব, মোড়কীকরণ যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন এসব প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্যদব্য নিম্নমানেরই, এগুলোকে উন্নতমানের বিবেচনা করা যায় না, তাছাড়া এমনকি এটি প্রস্তুতকরণ এবং ক্যানে মোড়কীকরণ করার এক বা দুই বছর পরেও ভোক্তার নিকট বিক্রয় করা হয়ে থাকে।