ভুড়ি ধীরে ধীরে বাড়ে, ধীরে ধীরে কমে

ভুড়ি ধীরে ধীরে বাড়ে, ধীরে ধীরে কমে

শিমি আক্তার : কোন চাউলের ভাত খাচ্ছেন ভাই ? পেটে কী আছে? এ তো দেখি হাতির পেট হতে চলেছে! আরে ভাই, পেটটা কমান! অফিসে, বন্ধু মহলে, পরিচিতজনদের ছুড়ে মারা এমন সব পছন্দ অপছন্দের টিপ্পনি সইছেন নিয়মিত ? আবার কোন শার্ট প্যান্টই ইদানিং মানাচ্ছে না। স্ত্রীর সামনে নায়ক নায়ক ভাবটা কমে যাচ্ছে! কি করে সামলাবেন এই পেট নামক বেলুন টিকে! কোথা থেকে আসছে এত হাওয়া? দুশ্চিন্তা বেড়েই চলছে! নো টেনশন, চুলুন নিজেরাই অপারেশনে নেমে পড়ি।


খাদ্যাভাস পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ

ডাক্তারদের মতে ভুড়ি বাড়ার প্রথম ও প্রধান কারণ – সুগার ও ফ্যাট। সুতরাং সুগার ও ফ্যাট সংশ্লিষ্ট যে সব খাবার আছে তা যথা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যেমন :

  • ১. যে কোন টাইপের ফাস্টফুড কে হারাম ঘোষণা করে দিন।
  • ২. আইসক্রীম, চকলেট, তেলে ভাঁজা বাইরের খাবার বর্জণ করুন।
  • ৩. বাজারে সরবরাহকৃত বিভিন্ন ধরণের কোমল পানীয়তে প্রচুর ফ্যাট থাকে। তাই এগুলোকে আপনার খাবার তালিকা থেকে বাদ দিন।
  • ৪. এ্যালকোহল সমৃদ্ধ খাবারও বাদ দিতে হবে।
  • ৫. সকালে অবশ্যই নাস্তা করতে হবে। পেট ভরে (আরামদায়ক অবস্থা বজায় রেখে) সকালের নাস্তা করুন। অনেকেই সকালে নাস্তা না করে ডায়েট কন্ট্রোল করতে চান। এটা ঠিক নয়। দুপুরে কম খাবেন এবং রাতে তার চেয়েও কম খেতে হবে।
  • ৬. ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার তলপেটের চর্বি কমায়। শাক-সবজী , ফলমূলে রয়েছে অনেক ফাইবার। তাই আপনার সুবিধা মতো যত বেশি সম্ভব শাক-সবজী ফলমূল খেতে পারেন।
  • ৭. সাদা রুটি, বিস্কুট, পাস্তা প্রভুতি কার্বাহাইড্রেড সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন। সাদা চাল অপেক্ষা বাদামি চালের ভাত খেতে পারলে ভালো। এখানে উল্লেখ্য যে কিছু কিছু ফ্যাট আবার তলপেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, যেমন : বাদাম, সয়াবিন, সীডস ইত্যাদি।

 

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম

  • আপনি বিভিন্নভাবে শারীরিক ব্যয়াম করতে পারেন। এজন্য নিয়মিত জীমে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনি নিজেই ফ্রি হ্যান্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যায়াম করতে পারেন। তবে অবশ্যই ফ্রি হ্যান্ডের কিছু নিয়ম আছে। যা আপনাকে যেনে নিতে হবে। যেমন : প্রথমে আপনাকে নার্ভ কন্ট্রোল করতে হবে, এরপর হেড ও নেক, সোল্ডার, আর্ম রাইজিং, বুক ডাউন, কার্ল আপ, বাটারফ্লাই, বেলি ডাউন, লেগ রাইজিং, রানিং ইত্যাদি অনেক স্টেপ আছে যা পর্যায়ক্রমে করতে হবে। অনেকেই বলে থাকেন ব্যায়ামের জন্য সময় পাই না, কষ্ট হয় ইত্যাদি। কিন্তু নায়ক নায়ক ভাবের হতে চাইলে তো আপনাকে একটু সময় ব্যায় করতেই হবে! বেশি না, ফ্রি হ্যান্ড করার জন্য মাত্র ৩০ মিনিট সময় বের করতে পারলেই যথেষ্ট।

 

আরও কিছু করণীয় :

  • ভোরে ঘুম থেকে উঠে যতক্ষণ পারেন দ্রুত হাটুন বা একটু দৌড়ে নিন। কষ্ট হলে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার হাটুন বা দৌড়ান, এভাবে কিছুক্ষণ করে যান।
  • কর্মস্থল রিক্সার দুরত্বে হলে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • বেশি উপরে উঠার জন্য লিফট বা চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার করলেও নামার জন্য লিফট বা চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার না করাই ভালো।
  • সময় পেলে একটু খেলাধুলা করার চেষ্টা করুন, এতে চর্বি বার্ণ হবে।
  • একটানা আধাঘন্টার বেশি বসে থাকবেন না। আধা ঘন্টা পরপর সামান্য একটু হেঁটে আসুন।
  • ভারি কিছু ওঠা-নামা করলে ভুড়ি কমে। তবে কোমরে যেন ব্যাথা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • আমরা মনে করি সিট-আপ বা বেশি করে বেলি ডাউন করলে ভূড়ি কমে। কিন্তু এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। সিট-আপ বা বেশি করে বেলি ডাউন করলে ফ্যাট বার্ণিংয়ের চেয়ে বরং তলপেটের মাসলগুলো অধিক সক্রিয় হয়। এতে পেট আরও ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পেটের চর্বি কমানোর প্রতি জোর দেয়া উচিত।

 

জীবনযাত্রার ধরনের পরিবর্তন

ভুড়ি কমানের জন্য আপনার লাইফস্টাইলের পরিবর্তন অবশ্যই আনতে হবে। না হলে যতই কম খান আর ব্যায়াম করুন কোনই লাভ নেই।

  • স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে রাত জাগলে বা ঘুম কম হলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই রাত না যেগে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন।
  • একবারে অনেক খাওয়া ঠিক নয়। অল্প পরিমাণে চিনি ও ফ্যাট মুক্ত এবং আঁশ যুক্ত খাবার বার বার খান। সেক্ষেত্র দিনে ৫ থেকে ৬ বার হলেও ক্ষতি নেই।
  • দিনে ৮ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  • এক গবেষণায় বলা হয়েছে টেনশন করলে ভুড়ি বাড়ে। তাই অযথা টেনশন করবেন না।
  • প্রচুর পানি পান করুন, তলপেটে মেদ জমবে না।

মনে রাখবেন ভুড়ি একদিনে বাড়ে না। ইহা দীর্ঘদিনের অনিয়মের ফল। ভুড়ি যেমন ধীরে ধীরে বাড়ে ঠিক তেমনি ধীরে ধীরে কমেও। তাই অস্থির না হয়ে ধৈর্য ধরে উপরোক্ত নিয়ম মেনে চলূন। সুফল পাবেন। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment