কী কারণে কিডনি রোগ
শিমি আক্তার : কিডনি শরীরের রক্ত পরিশোধন করে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরি করে। এটি শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ যা সুরক্ষা রাখা অত্যন্ত জরুরী। চলুন দেখে নেই কিডনি রোগের লক্ষণ ও কিছু সচেতনতা।
১. প্রসাবের অস্বাভাবিকতা : কিডনির ছাঁকনি নষ্ট হলে ঘন ঘন প্রসাবের বেগ দেখা দেয়। বিশেষত রাতের বেলায় এমনটি বেশি হয়। আবার পুরুষের প্রোটেষ্ট গ্লান্ড বড় হলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. মূত্রের রঙ পরিবর্তন : অনেক সময় প্রসাবের বেগ পেলেও প্রসাব হতে চায় না। এসময় প্রসাবের রং পরির্বতীত হয়ে গাঢ় আকার ধারণ করতে পারে।
৩. প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া : স্বাভাবিক নিয়মে সুস্থ কিডনি ব্লাড সেলগুলো শরীরের ভেতরে রেখে শরীরের রক্ত পরিশোধন করে। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ মূত্র আকারে বের করে দেয়। কিন্তু আক্রান্ত কিডনি ব্লাড সেলকে সম্পূর্ণভাবে শরীরের মধ্যে রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে মূত্রের সাথে রক্ত বের হয়ে থাকে।
৪. প্রসাবের সময় ব্যথা অনুভুত হওয়া : প্রসাবের সময় জ্বালা-পোড়া করা, ব্যথা হওয়া কিডনি রোগের লক্ষণ। এ অবস্থায় অনেক সময় পিঠের পেছন দিকে ব্যথা ও জ্বর হতে পারে।
৫. প্রসাবে অধিক মাত্রায় ফেনা হওয়া : কিডনির ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রসাবের সাথে অ্যালবুমিন নামক প্রোটিন উপাদান বের হলে প্রসাবে ফেনা হয়ে থাকে।
৬. শরীর ফোলা : কিডনি রোগাক্রান্ত হলে শরীরের বাড়তি পানি ও বর্জ্যপদার্থ বের হতে বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে শরীরে ফোলাভাব অনুভুত হয়।
৭. চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া : প্রসাবের সাথে প্রোটিন বের হওয়ার ফলে চোখের চারপাশ ফুলে যেতে পারে।
৮. পা ফোলা : কিডনি অসুস্থ হলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে পা ফুলে যায়।
৯. বমির ভাব : কিডনিতে সমস্যা হওয়ার ফলে শরীরের বর্জ্য যথাযথভাবে বের হতে না পারার কারণে রক্তে দুষণীয় পদার্থ বেড়ে গিয়ে বমি বমি ভাব দেখা দেয়।
১০. ঘুমের ব্যাঘাত : কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঠিকমতো রক্ত পরিশোধন করতে পারে না ফলে রক্তের টক্সিন বের না হয়ে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।
১১. ক্লান্ত বোধ হওয়া : রক্তে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীর খুব ক্লান্ত লাগে।
১২. কাজে অমনোযোগী : রক্তে লোহিত কনিকা কমে যায় ফলে মস্তিস্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাধা পায়। এ কারণে কাজে মনোযোগ থাকে না।
১৩. ক্ষুধা কমে যাওয়া : কিডনি কার্যক্ষমতা হারালে শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
১৪. শীত শীত অনুভুত হওয়া : কিডনি আক্রান্ত হলে গরমের সময়েও শীত শীত অনুভূত হয়। মাঝে মাঝে জ্বরও হতে পারে।
১৫. মাংস পেশিতে খিঁচুনী : কিডনি অসুস্থ হলে শরীরের ইলেক্ট্রোলেটের ভারসাম্য বজায় থাকে না ফলে খিঁচুনীর প্রার্দুভাব দেখা দিতে পারে।
১৬. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া : কিডনি সমস্যার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
-
কিডনি সুস্থ রাখতে কিছু সচেতনতা
– প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করুন।
– ফসফরাস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
– মাংস, ডিম, দুধ, পনির প্রভৃতি প্রোটিন জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
– ধূমপাণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
– প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের ফ্রেশ জুস পান করুন।
– কিডনি সুরক্ষিত রাখে এমন ফল গ্রহণ করুন যেমন- তরমুজ, বেরি ফল, আপেল, গোলমরিচ, রসুন, পেয়াজ, বাধাকপি, ফুলকপি, অলিভ অয়েল ইত্যাদি।
– ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
– ব্যথা উপশমকারী ওষুধ যেমন এ্যাসপিরিন, ইবাপরোফেন, এ্যাডভিল, মটরিন, নুপরিন, ন্যাপরোক্সেন, একটামিনোফেন (টাইলেনল) ইত্যাদি কিডনির জন্য উপকারী নয়।
– অতিরিক্ত লবনাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
– শরীরে যেন পানি শূন্যতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
– প্রসাব আসলে বিলম্ব করা যাবে না ।
– হারবাল চা পান করতে পারেন।
– প্রতিদিন এ্যালোভেরার জুস ক্রাণবেরির জুস পান করতে পারলে ভালো। এটি কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকারী।
– প্রতিদিন ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে।
– লেবু-গোত্রের জুস পরিহার করা উচিত।
– পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ঢিলে ঢালা পোশাক পরতে হবে ইত্যাদি।