সহজ পথে চটপটে
- শামীম রিমু
সুস্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক কসরতের বিকল্প নেই-এ কথা কারো অজানা নয়। ব্যায়ামচর্চা বা শারীরিক খাটুনির কমতি পড়লে আপনি যেমন মুটিয়ে যেতে পারেন, মাত্রাতিরিক্ত আলসেমির কারণে আপনার বুদ্ধিমত্তার স্রোতেও ভাটা পড়তে পারে। যারা সারাদিন বসে থাকতে অভ্যস্ত, দণ্ডায়মান ব্যক্তিদের তুলনায় তাঁদের হৃদরোগের সম্ভাবনা দ্বিগুণ। দিনের ৬ ঘন্টা বসে কাটালে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও মেদবহুলতায় মৃত্যুর সম্ভাবনা ১৮ শতাংশ বেড়ে যায়।
এসব তথ্য যদি এখনো আপনার টনক না নড়াতে পারে, তবে জেনে রাখুন, প্রতিদিন ১১ ঘন্টা বসে থাকলে পরবর্তী তিন বছরে আপনার মৃত্যুর সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়।
শরীরচর্চা আমাদের দেহের জন্য উপকারী, তা প্রমাণ করার জন্য বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্তের আড়ম্বর অপ্রয়োজনীয়। তবে সাম্প্রতিক কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায় আপনার বুদ্ধিমত্তাকে শাণিত করতেও ব্যায়াম অনুশীলনের জুড়ি নেই।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জার্মান বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণার কথা। এতে দেখা গেছে, যে সকল বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বাগান করার মতো হালকা শরীরচর্চা অনুশীলন করে থাকেন, তাঁরা তুলনামূলকভাবে বিস্মরণ সমস্যায় কম ভোগেন। এ গবেষণায় আরো দেখা যায় যে সকল শিক্ষার্থী প্রতিদিন হেঁটে বিদ্যালয়ে যায় তারা তুলনামূলকভাবে বেশী মনযোগী হয় এবং পরীক্ষায় ভালো ফল লাভ করে।
শরীরচর্চার বিজ্ঞান বিষয়ক বই ‘দ্য ফার্স্ট টোয়েন্টি মিনিটস’ এর লেখক গ্রীচেন রেনল্ডস এর মতে, শরীরচর্চা মস্তিস্কের সংকোচন রোধে ভূমিকা পালন করে। স্মরণশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এর জুড়ি নেই। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘শরীরচর্চা ভাবনাকে এমনভাবে উজ্জীবিত করে, যা ভাবনাচর্চা নিজেও পারে না।’
জীববিজ্ঞানের ভাষায়, মস্তিস্ক একটি কলা বা টিস্যু। শরীরের অন্যান্য টিস্যুর মতোই ব্যবহারে ঘাটতি হলে এবং বয়োবৃদ্ধির পাশাপাশি এটি ধীরে ধীরে বিকল হতে শুরু করে। সাধারণত, ২৫ বছর বয়সের পর থেকে আমাদের মস্তিস্কের হিপোক্যাম্পাস অংশ (যা নতুন কার্যপ্রণালী শিক্ষণ ও স্মরণের দায়িত্ব পালন করে) প্রতিবছর আয়তনে এক শতাংশ করে কমতে থাকে। তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিস্মরণ ঘটতে থাকে ও নতুন কিছু শেখার আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো নিয়মিত শারীরিক কসরতের মাধ্যমে মাংসপেশি গঠনের পাশাপাশি মস্তিষ্কের ক্ষয়রোধ এবং গাঠনিক বৃদ্ধিও সম্ভব। কথিত আছে, নিউরনের মৃত্যু ঘটলে তা আর সারিয়ে তোলা যায় না এবং মস্তিস্কে কোষ বিভাজনও অসম্ভব। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় এসব ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মস্তিষ্কে নতুন কোষ গড়ে ওঠা সম্ভব এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি উন্নত মস্তিষ্ক গঠনের জন্য দৌড়ানো বা সাঁতার কাটার মতো ব্যায়ামচর্চা বেশ উপকারী। এছাড়াও হাঁটার অভ্যাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, যে সকল বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি সপ্তাহে তিনদিন ৪০ মিনিট করে হাঁটেন তাঁদের হিপোক্যাম্পাসের আয়তন হ্রাস পাওয়ার হার দু’বছরের জন্য কমেছে, পাশাপাশি তাদের স্মরণশক্তিরও উন্নয়ন ঘটেছে। তাই, চটপটে ও তরিৎকর্মা হয়ে উঠতে হাঁটুন নিয়মিত।