গুণবতী লবঙ্গ
ঋষিতা রায় : লবঙ্গ প্রধানত মশলা হিসেবেই পরিচিত । এর আদি নিবাস ইন্দোনেশিয়ায়। তবে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে লবঙ্গ পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে ঠিক কোন সময় থেকে এই মসলার প্রচলন ঘটে তার সঠিক দিন-ক্ষণ জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয় মধ্যযুগের বণিকদের হাত ধরেই এ অঞ্চলে লবঙ্গের আবির্ভাব ঘটেছে।
‘লবঙ্গ’ একটি বিশেষ ধরনের গাছ যার ফুলের কুঁড়িকে শুকিয়ে লবঙ্গ তৈরি করা হয়। একাধিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা গেল, জাঞ্জিবার, ইন্দোনেশিয়া ও মাদাগাস্কারে ব্যাপকভাবে লবঙ্গ চাষ করা হয়। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকাতেও লবঙ্গের চাষ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে কোনো কোনো অঞ্চলে লবঙ্গকে ‘লং’ বলেও ডাকা হয়।
পুষ্টিগুণ:
ছয় গ্রাম লবঙ্গ থেকে পাওয়া যায় ২১ ক্যালরি শক্তি। এতে কোন কোলেস্টেরল নেই। ফ্যাট আছে এক গ্রাম, সোডিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, ফাইবার দুই গ্রাম। প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, আয়রন, থায়মিন, জিংক, রিবোফ্ল্যাভিন, এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে এতে। লবঙ্গ অ্যান্টিফাঙ্গাল,অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া , অ্যান্টিসেফটিক হিসেবে কাজ করে ।
ভেষজগুণ:
যুগ যুগ ধরে আর্য়ুবেদিক শাস্ত্রে লবঙ্গের বহুল ব্যবহার রয়েছে। দাঁতের ব্যথায় উপকারি। লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা দূর করে, মাড়ির ক্ষয় নিরাময় করে। তাই প্রায় সব টুথপেস্টের কমন উপকরণ এই লবঙ্গ। লবঙ্গের সুগন্ধ বমিবমি ভাব দূর করে। এছাড়া সর্দিকাশির মহৌষধ হিসেবে লবঙ্গ বহুবছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।সাইনোসাইটিস রোগে লবঙ্গ খুব উপকারি। সাইনোসাইটিসের রোগীদের চিকিৎসায় লবঙ্গ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পেট ফাঁপা রোগ নিরাময়ে লবঙ্গ ব্যবহার হয়। সাধারণত চায়ের সাথে লবঙ্গ মিশিয়ে পান করলে পেট ফাঁপা থেকে উপসম পাওয়া যায়।
লবঙ্গ কামোদ্দীপক। এর সুবাস অবসাদ দূর করে, শরীর ও মনের ক্লান্তি ঝরিয়ে দেয়। যৌনরোগেও এর বহুল ব্যবহার আর্য়ুবেদিক শাস্ত্রে রয়েছে। মানসিক চাপ লাঘব করে। তুলসি, পুদিনা, এলাচ ও লবঙ্গ মেশানো জলের শরবত মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। ব্রণের দাগ দূর করতে লবঙ্গের পেস্ট খুব কার্যকর। লবঙ্গ শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে রক্তকে পরিশোধন করতে ভূমিকা রাখে। লবঙ্গের তেলের জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে। লবঙ্গের তেল ব্যবহারে চুল পড়া কমবে এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে ।