নিমে নির্মল জীবন
রবিউল কমল : প্রায় ৪ হাজার বছরের বেশী সময় ধরে উপমহাদেশের আয়ুবের্দ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে নিম পাতা। নিম পাতার অসাধারণ সব গুণ রয়েছে। পাতা, ফল, ছাল বা বাকল, নিমের তেল, বীজ এক কথায় নিমের সমস্ত অংশ ব্যবহার করা যায়। জেনে নিন নিমের আশ্চর্য বহুবিধ কিছু ব্যবহার।
ত্বকের যত্নে:
- বহুদিন ধরে রূপচর্চায় নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন। নিমপাতা ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী। তাই ত্বকের সুরক্ষায় এর জুড়ি নেই। মাথার ত্বকে অনেকেরই চুলকানি ভাব হয়, নিমপাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগালে এই চুলকানি কমে। নিয়মিত নিমপাতার সাথে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়।
চুলের পরিচর্যায় :
- উজ্জ্বল,সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে নিম পাতার অবদান অপরিসীম। চুলের খুসকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে চুল ম্যাসেজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে ১ দিন নিমপাতা ভালো করে বেটে চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টার মতো রাখুন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া কমার সাথে সাথে চুল নরম ও কোমল হবে।
চোখের সুস্থতায়:
- চোখে চুলকানি হলে নিমপাতা পানিতে দশ মিনিট সিদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে নিন। চোখে সেই পানির ঝাপটা দিন। আরামবোধ করবেন।
খোস পাচড়া বা চুলকানি নিরাময়ে :
- নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাচড়া চলে যায়। পাতা বা ফুল বেটে গায়ে লাগালে চুলকানি ভালো হয়। নিম পাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষত উপশম হয়।
কৃমিনাশক :
- পেটের কৃমি নির্মূল করতে নিম পাতার জুড়ি নেই। শিশুরাই বেশি কৃমি আক্রান্তের শিকার হয়। এ জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের ছালের গুড়া দিনে ৩ বার সামান্য গরম পানি সহ খেলে কৃমি মারা যায়। আবার ৩-৪ গ্রাম নিম ছাল চূর্ণ সামান্য পরিমাণ লবণসহ সকালে খালি পেটে সেবন করা গেলে কৃমির উপদ্রব হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
দাঁতের রোগে :
- দাঁতের সুস্থতায় নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করার প্রচলন রয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। নিমের পাতা ও ছালের গুড়া কিংবা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত হবে মজবুত আর রক্ষা পাবেন দন্ত রোগ থেকেও। কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভাল থাকে। নিম পাতার নির্যাস পানিতে মিশিয়ে বা নিম দিয়ে মুখ আলতোভাবে ধুয়ে ফেললে দাঁতের পচন, রক্তপাত ও মাড়ির ব্যথা কমে যায়।
রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে :
- নিম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চমৎকার ভাবে কাজ করে। নিমের পাতা রক্তের সুগার লেভেল কমতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্ত নালীকে প্রসারিত করে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে। সকালে খালি পেটে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা বেটে খেলে তা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
উকুন বিনাশে :
- নিমের ব্যাবহারে উকুনের সমস্যা দূর হয়। নিমের পেস্ট তৈরি করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন, তারপর মাথা শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন এবং চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ান। সপ্তাহে ২-৩ বার ২ মাস এই পদ্ধতি ব্যবহার করুন। উকুন দূর হবে।
ওজন কমাতে :
- যদি আপনি ওজন কমাতে চান, বিশেষ করে পেটের, তাহলে নিমের ফুলের জুস খেতে হবে আপনাকে। নিম ফুল মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে শরীরের চর্বি ভাংতে সাহায্য করে। একমুঠো নিম ফুল চূর্ণ করে নিয়ে এর সাথে এক চামচ মধু এবং আধা চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মেশান। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই মিশ্রণটি পান করুন। তাহলে আপনার ওজন কমতে থাকবে।
জন্ডিস নিরাময়ে :
- জন্ডিস হলে প্রতিদিন সকালে নিম পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে। ২৫-৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।
বাতের চিকিৎসায় :
- নিমপাতা, নিমের বীজ ও বাকল বাতের ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাতের ব্যথায় নিমের তেলের ম্যাসাজও বেশ উপকারী।
ছত্রাকের ইনফেকশন দূর করতে: যদি আপনার পায়ে কোন ফাঙ্গাল ইনফেকশন থাকে তাহলে নিম ব্যবহার করুন। নিমে নিম্বিডল এবং জেডুনিন আছে যা ফাঙ্গাস ধ্বংস করতে পারে। নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগালে নিরাময় লাভ করা যায়। আক্রান্ত স্থানে কয়েক ফোঁটা নিমের তেল দিনে তিনবার লাগালেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
অজীর্ণ :
- অনেকদিন ধরে পেটে অসুখ বা পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোটা নিম পাতার রস এক কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল-বিকাল খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
অ্যালার্জি: অ্যালার্জির সমস্যায় নিম পাতা ফুটিয়ে গোসল করুন। অ্যালার্জি ভাল হয়ে যাবে। তাছাড়া কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা একসাথে বেঁটে শরীরে লাগান। অ্যালার্জি কমবেই।
একজিমা :
- একজিমা, ফোড়া অথবা বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা নিরাময়ে নিম খুব কার্যকর। ত্বকের যেসব জায়গায় এ ধরনের সমস্যা রয়েছে সেখানে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন।
প্রকৃতির আর্শিবাদ এই নিম কেবল একটি গাছ নয়, এ যান জীবন্ত ডাক্তার বাড়ী। আমাদের হাতের কাছেই থাকা এই ডাক্তার বাড়ির যথাযথ ব্যবহার করে সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করুন।