শীতেও খান ডাবের পানি

শীতেও খান ডাবের পানি

শিমি আক্তার : শুধু গরমে নয় শীতেও ডাবের পানি খেতে পারেন অনায়াসে। ফ্রেশ পানির সাথে লেবুর টুকরা, পুদিনা পাতা ও কমলার জেস্ট মিশিয়ে খেতে পারেন, অন্যরকম তৃপ্তি পাবেন। একটি ডাবে প্রায় ২০০ থেকে ১০০০ মিলি পর্যন্ত পানি থাকতে পারে। এই পানিতে কি কি রয়েছে চলুন দেখে নেই : অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস, অ্যামিনো এসিড, এনজাইম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি এবং অনেক ধরনের মিনারেল যেমন: আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, জিংক ইত্যাদি। চলুন, আলোচনা করা যাক আরও বিষদভাবে।


১. শীতকালে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকায় শরীর শুষ্ক হয়ে যায়। শরীরে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পায়, ডাবের পানি পিপাসা মিটিয়ে শরীরকে সতেজ রাখে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডায়েরিয়া রোগিদের জন্য পানিশূণ্যতার থেরাপি হিসেবে ডাবের পানি পান করার সুপারিশ করেছে। ডাবের পানি ডায়েরিয়া, বমি ও অতিরিক্ত ঘামের কারনে শরীরের পানিশূন্যতা সৃষ্টি হলে তা পূরণ করে। যাদের নিয়মিত ব্যায়ামের কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে যায় গবেষকরা তাদের ব্যায়ামের পর ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন।

২. অপর এক গবেষণা মতে ডাবের পানিতে সাইটেকিনিস পাওয়া যায় যা, আ্যন্টি-এ্যাজেইং, অ্যান্টি-ক্যারসিনো জেনিক এবং অ্যান্টি থ্রোমবোটিক প্রভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩. ডাবের পানির মধ্যে থাকা ডিহাইড্রোজেনাস, এসিড ফসফেটস, ক্যাটালেসি, ডায়াসটেস, পলিমেরাসেস প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যার ফলে বিপাকিয়তা এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।

৪. এই পানিতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, জিংক ইত্যাদি হালকা উপাদানে সমৃদ্ধ হলেও কমলার জুস সহ অনেক ধরণের ফলের চেয়ে এই পানি (মিনারেল কমপোজিসন) আনুপাতি হারে কিছুটা হলেও ভালে।

৫. ডাবের পানি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (যেমন রিবোফ্লাভিন, পাইরিডক্লিন, থায়ামিন, নায়াসিন এবং ফোলেট) এর উৎস হিসেবে কাজ করে। মানব শরীরে জন্য এই উপাদান সমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬. এই পানিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রোলিট পটাসিয়াম পাওয়া যায় যেমন: ১০০ মিলি ডাবের পানিতে ২৫০ মি:গ্রা: পটাশিয়াম এবং ১০৫ মি:গ্রা: সোডিয়াম, এই উপাদান সমূহ একত্রে শরীরে ডায়ারিয়ার কারণে সৃষ্ট ইলেকট্রোলিট ডেফিসিএনসি দুর করে।

৭. ডাবের পানি ক্ষুধা ও রুচি বর্ধক। খাওয়ায় যাদের অরুচি তারা ডাবের পানি পান করতে পারেন, সামান্য ফ্যাট থাকে তাই নিয়মিত পান করলেও ওজন বেড়ে যওয়ার সম্ভাবনা কম।

৮. ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ডাবের পানি উপকারী। ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে।

৯. প্রসাবের বিভিন্ন প্রদাহ দুর করতে সহায়তা করে ডাবের পানি।

coco-www.wikio_.co_.uk_১০. ২০০৫সালে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মেডিকেল জার্নাল এক পর্যবেক্ষণ করে মত দিয়েছে যে ডাবের পানি হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম উপাদানগুলি সোডিয়ামের ক্ষতিকর প্রভাবের ভারসাম্য বজায় রেখে রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

১১. প্রায় কোলেস্টেরল ও ফ্যাট ফ্রি ডাবের পানি কার্ডিওপ্রটেকটিভ সুবিধা দিয়ে থাকে। ক্ষতিকর এলডিএল (লো ডেনসিটি লিপোপোরেটিন) এর পরিমাণ কমায় এবং উপকারী এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লিপোপোরেটিন) এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে হার্টের ঝুঁকি কমায়।

১২. ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লাম্যাটরি এবং অ্যান্টি প্লেটেলেট ধমণীর সার্কুলেশন বৃদ্ধিতে সহায়তে করে হার্ট এ্যাটাক এবং স্ট্রোক রোধে সহায়তা করে এবং দাঁতের প্লাক গঠনে বাধা প্রদান করে দাঁতকে সুরক্ষা দেয়।

১৩. ২ কাপ ডাবের পানির সাথে ২ কাপ পাঁকা আম, ২-৩ চামচ লেবুর রস, কিছু পুদিনা এবং আধা কাপ বরফ কুচি দিয়ে জুস করে খেলে মদপানে আসক্তরা উপকার পেতে পারেন।

১৪. প্রেগন্যান্ট মায়েদের জন্য ডাবের পানি অনেক উপকারী।

১৫. অধিকাংশ মাথাব্যাথা, এমন কি মাইগ্রেনের ব্যাথাও ডিহাইড্রেশনের কারণে হতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, ম্যাগনেসিয়াম মাইগ্রেণের ব্যাথা কমতে সহায়তা করে। ডাবের পানিতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। ডাবের পানি শরীরে ইলেক্ট্রোলিটিস সরবরাহ বৃদ্ধি করে হাইড্রেশনের যোগান দেয় ফলে মাথাব্যাথা কমতে সাহায্য করে।

১৬. ডাবের পানিতে এ্যালকালাইজিং উপাদান রয়েছে যা শরীরের উপকারী পিএইচ সংরক্ষণ বা মজুদ করে বুকে ব্যাথা ও গ্যাসের ব্যাথা (এসিডিটি) ইত্যাদি কমাতে সহায্য করে।

ডাবের পানি বোতল বা প্যাকে মজুদ করে রাখলে এর ভিটামিন ও এনজাইম লেভেলের কিছু গুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গাছ থেকে ডাব সংগ্রহের পর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ঘরে রেখে ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পান করে নেয়া উচিত।

সতর্কতা

  • কিডনী পুরোপুরি কর্মক্ষম না থাকলে ডাবের পানি পান করবে না।
  • এ্যালার্জীর জন্য উপকারী নয়।
  • সার্জারীর কমপক্ষে ২ সপ্তাহ পূর্ব থেকে ডাবের পানি খাওয়া উচিত নয়।

Sharing is caring!

Leave a Comment