রং নেই তবু অনেক গুণ

রং নেই তবু অনেক গুণ

শিমি আক্তার : পানি আমাদের তৃষ্ণা মেটায়, শক্তি যোগায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরের বেশির ভাগ অংশই পানি (বয়স ভেদে ৫৫-৭০%)। তাই পানির কাজ অনেক, শরীরের অবাক হওয়ার মতো কাজ করে পানি । চলুন দেখি পানির ক্ষমতা কতটুকু ?


shutterstock_146471507

১. হার্ট ভালো থাকে

  • পানি পেলে যেমন বাগানের গাছ সজীব হয়, তেমনি সজীব হয় শরীরও। রক্তের পরিমাণ কমলে তা পাম্প করে পুরো শরীরে পাঠাতে হার্টকে বাড়তি কষ্ট করতে হয়, যা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । তাই পরিমিত পানি পান করলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

 

২. শক্তি জোগায়

  • পানি আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়। শরীরে যখন ডিহাইড্রেশন বা পানি শুন্যতা হয়, তখন কোষগুলোয় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না পাওয়ার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে পুরো শরীরটাই। এসময় পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন দুর হয় । কোষ সজীব হয়ে ওঠে এবং শরীরে পুনরায় শক্তি যোগান দেয়। পানি কমে গেলে শরীরে রক্তের পরিমান কমে যায়। ফলে কোষে অক্সিজেন ও খনিজ লবণ (মিনারেল) কমে যায়। পানির পরিমান ঠিক থাকলে অক্সিজেন ও মিনারেল পেতে কোষের কোনো সমস্যা হয় না।

 

৩. ওজন কমায়

  • যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন, বেশি করে পানি পান করুন। পানি অন্যান্য খাদ্যের পরিপাক ও শ্বসন (মেটাবলিজম) তরান্বিত করে। একই সঙ্গে পানি বেশি পান করলে পেট ভরে যায় বলে তাৎক্ষণিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। ওজন কমানোর জন্য ঠান্ডা পানি বেশি কাজে আসে। বরফঠান্ডা পানি খেলে মেটাবলিজম বাড়ে। কারণ, এ ঠান্ডা পানিকে শরীরের তাপ মাত্রায় আনতে শরীরকে বাড়তি কাজ করতে হয়। এতে ক্যালরি ক্ষয় হয়, ওজন কমাতে অনেক কাজ করে।

 

৪. শরীর গঠনে কাজ করে

  • শরীরের জয়েন্টেও পানি থাকে। পানি ঠিকমতো পেলেই মাংসপেশী কাজ করে। অতএব ক্রীড়াবিদ হোন আর ব্যায়ামবীর, মাংসপেশি সুগঠিত করতে চাইলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ।

 

৫. শরীরের বর্জ্য বের করে দেয়

  • গরম পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে আর ঘাম আসতে পারে। গরম পানি পান করার কারণে ঘাম আসলে উক্ত ঘামের সাথে বর্জ্য বের করে দেয়।

 

৬. মানসিক চাপ কমায়

  • জেনে অবাক হতে পারেন, ব্রেইনের ৮৫ শতাংশই পানি ছাড়া কিছুই নয়। যখন ব্রেইনে পানিশূণ্যতা হয় – স্বাভাবিক কারণেই ব্রেইনের সব কর্মকান্ডে ভীষণ চাপ পড়ে। যখনই পিপাসা পাবে বুঝতে হবে এরই মধ্যে ব্রেইনে পানির ঘাটতি পড়েছে। কথায় বলে, ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়। কারণ হলো, ভয় পেলে ব্রেইন তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। পিপাসার মাধ্যমে শরীরকে জানান দেয়, তার কাজের জন্য পানি দরকার । যখনই কোনো চাপের মধ্যে থাকবেন.তা পরীক্ষা হোক বা ব্যবসা-চাকরির টেনশনই হোক- পানি পান করতে হবে বেশি করে। দেখবেন চাপ কমে গেছে। ব্রেইন কাজ করতে পারছে স্বাভাবিক ভাবে।

 

৭. ত্বক সুস্থ্য রাখে

  • আমরা বয়সের বলিরেখা কমানো থেকে শুরু করে ত্বকের খস খসে ভাব দূর করা, রং ফর্সা করা, সারা দিন ফ্রেশ রাখা- কত কিছুর জন্যই কসমেটিকসের উপর নির্ভরশীল হই। কিন্তু পানি কাজ করতে পারে এদের যে কারো থেকে বেশি। ত্বকের কোষ সুস্থ থাকলে এমনিতেই আপনাকে দেখাবে সজীব। পানি ত্বকের পানিশূন্যতা কমায়। ত্বকের কোষকে পরিপূর্ণ রাখে। এতে মূখমন্ডল থাকে তরুণ।

 

Glass_of_water৮. হজমে সাহায্য করে

  • অধিক পানি পান করলে পাকস্থলির বিপাক প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে হজম শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়।

 

৯. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

  • শাকসবজি আর আশযুক্ত খাবারের সাথে প্রচুর পানি পান করুন, দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্য কমে গেছে। প্রচুর পানি খেলে হজমের পর খাদ্যের বর্জ্য অংশ সহজেই পানির সাথে মিশে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

 

১০. কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে

  • পরিমাণমতো পানি পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। বিশ্বজুড়ে কোমল পানীয়র ব্যাপক বিস্তারের কারণে পানি পানের পরিমাণ কমে গিয়ে কিডনির পাথর হওয়ার হার বেড়ে গেছে। কিডনির পাথর আসলে একধরনের লবণ ও মিনারেল, যা ক্রিষ্টাল আকারে জমে পাথরের মতো হয়। প্রচুর পানি পান করলে এ লবণ ও মিনারেল জমে গিয়ে ক্রিষ্টাল তৈরি হতে পারে না।

 

কুসুম গরম পানির উপকার

এছাড়া আপনি যদি সামান্য কুসুম গরম পানি পান করেন তাহলেও অনেক উপকার পাবেন যথা:

  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে পান করলে শরীরের ওজন কমবে, কেননা এটা ফ্যাট ভাঙ্গতে সাহায্য করে।
  • নাসারন্ধের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। ঠান্ডা লাগা ও কফ জমে যাওয়া এবং গলা ব্যাথায় গরম পানি খুব কার্যকর ভুমিকা রাখে। এছাড়া নাসারন্ধের পথ পরিষ্কার রাখে।
  • গরম পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে ফলে ঘাম ঝরে। এতে করে শরীরের অনেক ধরনের বজ্য্য বের হয়ে শরীর সুস্থ থাকে। শরীরের বর্জ্য বের হতে না পারলে ত্বকের কোষ নষ্ট হয় ফলে অকালে বয়সের ছাপ পড়ে ।
  • ব্রণ দুর করার জন্যও কুসুম গরম পানি উপকারী। শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের করে ত্বক পরিষ্কার ও ব্রণ মুক্ত রাখে।
  • গরম পানি চুলের গোড়াকে প্রভাবিত করে। চুলের গোড়াকে সক্রিয় রাখার মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি হতে সহায়তা করে।
  • খুশকির জন্য অনেক সময় চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করার পরেও ভালো ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু নিয়মিত গরম পানি ব্যবহার করলে অনেকের খুশকি দুর হতে পারে।

সাধারণত ডাক্তাররা বলেন, দিনে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। কিন্তু যাঁরা বেশি শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন বা ব্যায়াম করেন ফলে বেশি ঘামেন, তাঁদের আরো বেশি পানি পান করতে হবে। আর যাঁরা চা, কফি, জুস ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি খান, তাঁরা আট গ্লাসের কম পানি পান করলেও চলবে, তবে বেশি বেশি পান করাই ভালো।  favicon5945739329416_water_drop1

Sharing is caring!

Leave a Comment