অনিদ্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
- হেলথ অ্যান্ড লাইফস্টাইল ডেস্ক
দীর্ঘদিন নিদ্রাহীনতায় ভুগতে ভুগতে আপনি একদিন গেলেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে, আর সেখানকার ঘুমবিশেষজ্ঞ ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দিলেন হার্টের ডাক্তারের (কার্ডিওলজিস্ট) কাছে যেতে। আপনি অবাক হয়ে ভাবতে বসলেন, এ কেমন আচরণ! ঘুমের সঙ্গে হৃদরোগের কি সম্পর্ক?
আপনি অবশ্য এতটা অবাক হতেন না, যদি সাম্প্রতিক এক গবেষণার খবর আপনার জানা থাকত। ন্যাশনাল হার্ট সেন্টার সিঙ্গাপুরের (এনএইচসিএস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ঘুমজনিত সমস্যায় ভোগেন তাদের ধমনীতে ক্যালসিয়াম তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর অধিকমাত্রায় ক্যালসিয়াম জমতে জমতে ধমনী একসময় সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে হৃদপিণ্ডে অক্সিজেনের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বুকে ব্যথা ও হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগ সৃষ্টি করে।
এনএইচসিএস-এর প্রধান গবেষক এবং কার্ডিওলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ডা. তান সুই ইও বলেন, ‘ব্যাপারটা যত সামান্যই হোক, ধনমীতে ক্যালসিয়াম জমতে শুরু করেছে মানে হচ্ছে আপনার ধমনী শক্ত ও সংকীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। অতএব সাবধানতা জরুরি।’
ডা. তান সুই ইও আরো বলেন, এই গবেষণার জন্য গুরুতর অনিদ্রায় ভোগা রোগীদের ধমনীর ক্যালসিয়াম স্কোর ও ধমনীর গায়ে জমে থাকা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বের করা হয়েছিল। এ জন্য আমরা ব্যবহার করেছিলাম গাণিতিক টমোগ্রাফি স্ক্যান পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সহজেই জানা যায়, আপনার ধমনীতে কী পরিমাণ ক্যালসিয়াম জমেছে এবং ধমনী কতটা সংকুচিত হয়েছে। কারও স্কোর যদি ১০০’র বেশি হয় তবে তিনি সাধারণের চেয়ে দশ গুণ বেশি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছেন। আর কারও স্কোর যদি ৪০০’র বেশি হয় তবে তার ঝুঁকি পঁচিশ গুণ বেশি।
অনিদ্রার সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক কী তা এখান থেকেই বোঝা যায়। এ ব্যাপারে গবেষণা ফলাফলের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সহকারী গবেষক ও সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের স্লিপ ডিসঅর্ডার ইউনিটের পরিচালক ডা. তোহ সাং। তিনি বলেন, অক্সিজেনের ক্ষয়জনিত কারণে রক্তনালীতে প্রদাহ তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, ধমনীতে লিপিড ও ক্যালসিয়াম জমতে জমতে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর এ জন্য যে, ঘুম যখন না হয় তখন জিহ্বা ও ফ্যাটি টিস্যুর মধ্যে একটা দেয়াল তৈরি হয়। ফলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবাহিত হয় না। আর মস্তিষ্ক যখন পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, তখনই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো দুর্ঘটনা ঘটে।
২০১২ সালে শুরু হওয়া এই গবেষণাটি ২০১৫ সালে শেষ হয়। এরপর আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির সম্মেলনসহ আরো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
সঙ্গত কারণেই ২০১৫ সালের পর থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে আসা অনিদ্রায় ভোগা রোগীদেরকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ডা. তোহ সাং বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য আমরা অনিদ্রার রোগীদেরকে প্রথমেই একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাই। তিনি প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে চেষ্টা করেন।’ এরসঙ্গে কণ্ঠ মেলান ডা. ট্যান—‘আমরা এতদিন দমকলকর্মী ছিলাম, কিন্তু এখন অগ্নি প্রতিরোধক হতে চাই। এজন্য ঘুমের সমস্যা নিয়ে কোনো রোগী এলেই আমরা তাকে আগে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাই, যাতে বুঝতে পারি তিনি কতটা ঝুঁকিতে আছেন।’
এক হাজারজন মানুষের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ৩০০ থেকে ৫০০ জন মানুষ গুরুতর অনিদ্রায় ভুগছেন। বলে রাখা প্রয়োজন, সিঙ্গাপুরে এখন মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ অনিদ্রায় ভুগছেন।
সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার
ইংরেজি থেকে অনুবাদ : মারুফ ইসলাম