মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত রাখতে যা করবেন
- অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্ক বদলায়, সেই সঙ্গে বদলায় মানসিক কাজকর্ম। বয়স হলে যে কারো মানসিক অধোগতি বা বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষয় হতে পারে। কিন্তু মস্তিষ্কের কাজকর্ম সচল রাখার আছে উপায়।
মানসিক উদ্দীপনা খুঁজে নিন
মস্তিষ্কের কাজকর্ম স্নায়ুকোষগুলোর মধ্যে নতুন নতুন সংযোগ গড়তে উদ্দীপ্ত করে, মস্তিষ্কে নতুন কোষ জন্ম দিতে পারে। এতে ভবিষ্যতে কোষক্ষয়ের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তাই বেশি বেশি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, নতুন কোর্সে ভর্তি হন, শব্দ জব্দ খেলুন, অঙ্ক কষুন ইত্যাদি। এ ছাড়া সেসব কাজে হাতের দক্ষতা ও মানসিক শ্রমের প্রয়োজন হয়, যেমন—ছবি আঁকা বা পেইন্টিং, অন্যান্য শিল্পকর্ম ইত্যাদি তা করা যেতে পারে। এতে মানসিক ব্যায়াম হয়।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
পেশি ব্যবহার করলে মনের উন্নতি হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়ামে ক্ষুদ্রাণুক্ষুদ্র রক্তনালির সংখ্যা বাড়ে। এগুলো অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত যায় মগজের সে অঞ্চলে, যে অঞ্চল চিন্তাভাবনার সঙ্গে জড়িত। ব্যায়াম নতুন স্নায়ুকোষ স্ফুরণকে উদ্দীপ্ত করে মগজ কোষগুলোর মধ্যে স্নায়ুসন্ধি বা সংযোগ বাড়িয়ে দেয়। ফলে মস্তিষ্ক আরো বেশি কার্যকর, স্থিতিস্থাপক ও গুণসমৃদ্ধ হয়। ব্যায়ামে কমে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক থাকে, রক্তের সুগারে ভারসাম্যতা আসে, মনের চাপ লঘু হয়। এসবই সাহায্য করে মস্তিষ্ক ও হৃদ্যন্ত্রকে ঠিক রাখতে।
ডায়েট উন্নত করুন
মন ও শরীর দুটোর সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সুপুষ্ট, স্বাস্থ্যকর খাবার। ফল, সবজি, মাছ, বাদাম, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট—যেমন জলপাই তেল, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ইত্যাদি গ্রহণে বৃদ্ধিবৃত্তি লোপ পাবার ও ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
মধ্য জীবনে উচ্চ রক্তচাপের ফলে বুড়ো বয়সে বুদ্ধিবৃত্তির অধোগতি ঘটতে পারে। তাই জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ জন্য ক্ষীণদেহ থাকুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, মদ্যপান, ধূমপান বাদ দিন, টেনশন কমান, সঠিক আহার করুন।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করুন
ডিমেনশিয়ার বড় ঝুঁকি হলো ডায়াবেটিস। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে, ক্ষীণ থেকে, নিয়মিত ব্যায়াম করে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা যায়। এর পরও রক্তের গ্লুকোজের মান বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখুন
রক্তে মন্দ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বেশি থাকলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এ জন্য ডায়েট মেনে চলা, ব্যায়াম করার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ ও তামাক পরিহার করা ভালো উপায়।
ওষুধ গ্রহণ করুন
ডিমেনশিয়া রোগীরা প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করুন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, লো-ডোজ অ্যাসপিরিন বা কম মাত্রার অ্যাসপিরিন ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়।
নেশা নয়
সব ধরনের তামাক, ধূমপান, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুল পরিহার করুন। মদ্যপান একেবারে বাদ দিন।
ইমোশনের প্রতি খেয়াল রাখুন
নিজের ইমোশনের প্রতি বরাবরই খেয়াল রাখুন। কেননা দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, নির্ঘুম রাত, ক্লান্তি মস্তিষ্কের বুদ্ধিমত্তা হ্রাস করে।
সামাজিকতা বজায় রাখুন
সামাজিকতা, সমাজবদ্ধতা ডিমেনশিয়া রোধ করে। তাই সামাজিকতা বজায় রাখুন।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ, চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ
সূত্র : কালের কণ্ঠ