মুখে হাত দেওয়া ঠেকাবেন যেভাবে
- হেলথ অ্যান্ড লাইফস্টাইল ডেস্ক
আমরা হাত ধুচ্ছি, বাড়িতে থাকছি, বাইরে গেলে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখছি। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আর কী কী করতে পারি? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মুখে স্পর্শ ঠেকাতে পর্যাপ্ত কিছু করা হচ্ছে না। মুখে হাত দেওয়ার বিষয়টি ঠেকানো গেলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে খুব বড় ব্যবধান তৈরি হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সেন্টার ফল বিহেভিয়র চেঞ্জের পরিচালক সুজান মিচি বলেন, এ চ্যালেঞ্জ সহজে উতরে যাওয়া যায়। অনেক বেশি কিছু করার চেয়ে কিছু না করা অনেক কঠিন। নিয়মিত হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজ হলেও মুখে হাত দেওয়া ঠেকানো অনেক সময় কঠিন বলে মনে হতে পারে।
বার্তা সংস্থা সিএনএন এক প্রতিবেদনে বলেছে, নানা কারণে মানুষ মুখে হাত দিতে পারে। দাড়ি কামানো, অঙ্গভঙ্গি বা সাধারণ চুলকানিতেও মুখে হাত চলে যেতে পারে। মানসিক চাপের সময় মুখে হাতের স্পর্শ আরামদায়ক মনে হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় ২৩ বার মুখে হাত দেয় মানুষ।
মজ্জাগত এ অভ্যাস দূর করতে সুজান মিচি সচেতন প্রচেষ্টার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘আপনার হাত সব সময় কাঁধের স্তরের নিচে রাখুন এবং আপনার মুখ স্পর্শ করার তাগিদকে প্রতিরোধ করতে নিজেকে প্রশিক্ষণ দিন।’
মুখমণ্ডলকে চিকিৎসকেরা টি-জোন বলে থাকেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য টি–জোনের চোখ, নাক ও মুখ মূল পথ। বাতাসে ড্রপলেটের মাধ্যমে এবং সংক্রমিত পৃষ্ঠ ও বস্তু, যেমন: মোবাইল ফোন, গাড়ির চাবি, দরজার হাতল বা এলিভেটর থেকে এটি ছড়াতে পারে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের হেলথ সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট ওয়েস্ট বলেন, ‘আপনি যদি কখনো মুখে হাত না দেন, তবে হাত ধুয়েছেন কি না, তা ব্যাপার নয়। মুখে হাত না দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে আপনার হাত শ্লেষ্মা ঝিল্লির (মিউকাস মেসব্রেন) সংস্পর্শে আসতে পারে। এই শ্লেষ্মা ঝিল্লি দেহে ভাইরাসের প্রবেশের পথ হিসেবে কাজ করে।’
যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা ত্রাণ গ্রুপ ‘ফ্লোটিং ডক্টরস’ ইতিমধ্যে ‘ডোন্ট টাচ ইওর ফেস’ নামের কর্মসূচি চালু করেছে, যাতে মানুষের মুখ স্পর্শ করার শারীরিক ও মানসিক অভ্যাস ভাঙার অনুরোধ করা হচ্ছে।
মুখে হাত দেওয়া ঠেকানোর উপায় হিসেবে অভিনব এক পরামর্শ দিচ্ছে ফ্লোটিং ডক্টরস। তারা বলছে, মানুষ যখন বাইরে যাবে, তারা যেন মাথায় ছোট জাল ব্যবহার করে। মশা থেকে রক্ষা পেতে যেমন মশারি ব্যবহার করা হয়, এ জাল অনেকটাই সে রকম। মাথা থেকে গলা পর্যন্ত জাল দিয়ে ঢাকা থাকে।
ফ্লোটিং ডক্টরসের প্রতিষ্ঠাতা ড. বেন ল্যাবোর্ট বলেন, ‘এ জাল ব্যবহার করা স্বস্তিকর। জাল ব্যবহার করে দেখাও সহজ। এ জাল ব্যবহার করলে মুখে হাত দেওয়ার ব্যাপারে মন সচেতন থাকে। একটি বাধা সামনে থাকে বলে মুখে হাত যায় কম। এটি সব জায়গায় কম খরচে পাওয়া যায়। সংক্রমণ প্রতিরোধে সহজে এ পদ্ধতিটি অনুসরণ করা যেতে পারে। এ ধরনের শারীরিক বাধা দারুণ কার্যকর।
রবার্ট ওয়েস্ট বলেন, জালের পাশাপাশি মুখে হাত দেওয়া ঠেকাতে মাস্ক কাজে লাগতে পারে। তবে এটা খোলা ও লাগানোর সময় মুখে বেশি হাত চলে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
বিশেষজ্ঞ রবার্ট ওয়েস্ট পরামর্শ দিয়েছেন, ‘মুখে হাত দেওয়া ঠেকাতে এর বিপরীত আচরণের কথা মাথায় আনতে হবে। অর্থাৎ, এক আচরণের বিরুদ্ধে অন্য আচরণের অভ্যাস তৈরি করতে হবে। মুখে হাত দিতে উদ্যত হলেই তখন তা বাদ দিয়ে হাতের উল্টো দিক চুলকাতে শুরু করতে হবে। এতে আচরণ আরেক দিকে ঘুরে যাবে। আপনি যা করার চেষ্টা করছেন, তা হলো নিজেকে সচেতন করে তোলার কাজ। তবে মুখ চুলকানোর মতো বিষয়টি সহজে দূর করা যায় না। আঁচড় দেওয়ার জন্যও চুলকানির জায়গাগুলো তৈরি হয়। সাধারণত নানা ধরনের জীবাণু মুখের ওপর পড়ে এবং চামড়ার নিচে চলে যায়, যা আমাদের জন্য দারুণ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।’
ওয়েস্ট বলেন, যখন চুলকানি ওঠে, তখন খেয়াল রাখতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে চুলকাতে শুরু করা ঠিক হবে না। খেয়াল করে দেখে চুলকানির জায়গায় হাত নিয়ে যাওয়া মানেই বিপদ। এ বিষয়টি নিয়েই এখনো মানুষকে সচেতন করার কোনো কাজ করা হয়নি। ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আচরণ পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
রবার্ট ওয়েস্ট আরও বলেন, ‘আপনার যদি বড় সমস্যা থাকে তবে সমাধানটাও বড় হবে। কিন্তু মুখ স্পর্শ করার একটি তুচ্ছ বিষয়। এ সামান্য বিষয়টি পরিবর্তন করতে পারলেও বড় পার্থক্য দেখা যাবে। মানুষকে এটা মাথায় নিতে হবে যে মুখ এমন একটা জায়গা যা আপনি স্পর্শ করতে পারবেন না। মানুষের সামনে যেমন আপনি দিগম্বর হতে পারেন না, তেমনি জনসমক্ষে মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে আপনারই লাভ।’
সূত্র: প্রথম আলো