করোনা সহসা যাচ্ছে না, কী করবেন এই সময়?

করোনা সহসা যাচ্ছে না, কী করবেন এই সময়?

  • হেলথ অ্যান্ড লাইফস্টাইল ডেস্ক

সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, করোনা সংক্রমণের সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী। জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে এই সময়েই ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ ছুটি। ফলে এখন সতর্ক থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন হাসপাতালকে কোভিড-১৯ স্পেশালাইজড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা যে আরও বাড়বে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

ডাক্তার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষের গড়পড়তা যে স্বাস্থ্যগত সচেতনতা, তা দিয়ে সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া বেশ কঠিন হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দুই বছর করোনার সংক্রমণ চলবে পুরো পৃথিবীতে। কী করবেন সামনের দিনগুলোতে? জেনে নিন।

বাড়িতে

১. সার্বিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন

নিজের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন। খাবার আগে, বাইরে থেকে ফিরে, টয়লেট থেকে ফিরে এবং কোনো কিছু ধরলেও ভালো করে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, করোনাসহ যেকোনো ধরনের সংক্রমণ ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় ভালো করে হাত ধোওয়া।

কাপড়চোপড় নিয়মিত পরিষ্কার করুন। বাইরে থেকে ফিরে সম্ভব হলে সব কাপড় ধুয়ে দিন। না হলে খোলা জায়গায় মেলে দিন ব্যবহৃত কাপড়। বাইরে থেকে কোনো কিছু বাড়িতে আনলে সেগুলো পরিষ্কার করে তারপর ব্যবহার করুন। ধোওয়া যায় এমন স্যান্ডেল বা জুতা ব্যবহার করুন। বাইরে থেকে এলে জুতা-স্যান্ডেল বাইরে রেখে বাসায় ঢুকুন।

পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টিতে পরিবারের সবাইকে সচেতন করুন। পরিচ্ছন্নতার সচেতনতাই প্রাথমিকভাবে পারে আপনাকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে।

২. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন

স্বাস্থ্যকর খাবার মানেই দামি খাবার নয়। প্রতিটি ঋতুতে হাতের কাছে যা পাবেন সেগুলো খান। দেশি ফলমূল আপনাকে সুস্থ রাখবে। এ ছাড়া যেকোনো খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে থাকুন। তবে অতিরিক্ত তেল-ঘি দেওয়া খাবার না খাওয়াই ভালো হবে। মাংস যতটা সম্ভব বাদ দিন। মাছ ও ডিম খান। প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি রাখার চেষ্টা করুন। পরিমাণমতো পানি পান করুন। ভেষজ খাবার কোনো ওষুধ নয়। এগুলো দীর্ঘ মেয়াদে খেলে রোগপ্রতিরোধ বাড়াতে পারে। তাই এগুলো খেতে পারেন। তবে এগুলোর ওপর নির্ভর করবেন না। ঠান্ডা ও বাসি খাবার খাবেন না। ঠান্ডা যেকোনো খাবার সংক্রমণ বাড়াতে পারে। বাড়ির বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

৩. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন, তাহলে অতিরিক্ত শরীর চর্চার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি সেটা না করেন, তাহলে বাড়িতে নিয়মিত হালকা শরীর চর্চার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শরীর সুস্থ থাকলে করোনাসহ যেকোনো সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। ডায়েট বিষয়টি একটি জটিল প্রক্রিয়া। তাই এর জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

৪. মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ভাবুন

একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তাঁর করোনা থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা লিখেছেন সংবাদমাধ্যমে। জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, মানসিকভাবে ইতিবাচক না থাকলে করোনা মোকাবিলা করা অনেকটাই কষ্টকর। কাজেই মনকে ভালো রাখুন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার কথা মাথায় রাখুন। হাসিখুশি, প্রাণবন্ত থাকার চেষ্টা করুন। আনন্দ করুন। মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকলে করোনাসহ যেকোনো রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় খুব সহজে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পরিমিত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাত জাগার অভ্যাস বাদ দিন।

বাড়ির বাইরে

প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়ে বাড়ির বাইরে যান। অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই খুলছে ধীরে ধীরে। এসবের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরাই বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। নিয়মিত যাঁদের বাইরে যাতায়াত করতে হবে, তাঁদের নিতে হবে বিশেষ ব্যবস্থা।

১. মাস্ক ও চশমা ব্যবহার করুন

মাস্ক যেকোনো সংক্রমণকে প্রাথমিকভাবে রক্ষা করে। বাইরে এটি প্রায় বাধ্যতামূলক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনকি বাড়িতে মাস্ক ব্যবহার করলেও যেকোনো সংক্রমণ থেকে পরিবারের মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব। আপনার সাধ্যমতো দামের মাস্ক ব্যবহার করুন। যাঁদের অফিসে জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা আছে, তাঁরা সেখানে অতিরিক্ত এক বা দুই সেট মাস্ক রাখুন। এ ছাড়া অতিরিক্ত জামাকাপড়ও রাখতে পারেন। চোখ দিয়ে জীবাণু সংক্রমণ ঠেকাতে চশমা অথবা সানগ্লাস ব্যবহার করুন। চশমা বা সানগ্লাস নিয়মিত পরিষ্কার করে নিন। মাস্ক প্রতিদিন ধুয়ে দেবেন। কিংবা একসঙ্গে ছয়–সাতটি মাস্ক কিনুন। যাতে প্রতিদিন নতুন মাস্ক ব্যবহার করা যায়। বাকিগুলোকে খোলা জায়গায় রেখে দিন নিরাপদে।

২. ভিড় এড়িয়ে চলুন

অন্তত আগামী দুবছরের জন্য যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন কিংবা সেসব যোগদান থেকে বিরত থাকুন। সিনেমা, থিয়েটার, খেলার মাঠ, রেস্টুরেন্ট, নাপিতের দোকান, বিউটি পারলার কিংবা জিমের মতো ভিড়ের জায়গাগুলো এড়িয়ে চলুন। অফিসে যতদূর সম্ভব হয় ওঠার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করুন। লিফট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি মানুষ একসঙ্গে লিফটে উঠবেন না। আগের চেয়ে অর্ধেক মানুষ লিফটে উঠুন, তাতে দূরত্ব বজায় রাখা সহজ হবে। অফিসের যানবাহন ব্যবহার করতে পারেন সুযোগ থাকলে।

৩. সুযোগ পেলেই হাত-মুখ ধুয়ে নিন

অফিসে, কারখানায় হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা সাধারণত থাকে। এই সময় বিভিন্ন জনসমাগমের জায়গায়তেও হাত-মুখ ধোওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই ব্যবস্থা আরও বাড়বে। যেখানেই সুযোগ পাবেন হাত ধুয়ে নিন। হাত ধোওয়ার পর মুখ ধুয়ে নিন। সম্ভব হলে সঙ্গে স্যানিটাইজার, টিস্যু কিংবা রুমাল রাখুন এবং সেগুলো ব্যবহার করুন।

৪. বাইরের স্বাস্থ্যগত বিষয়ে সচেতন হোন

ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং থুতু যেখানে–সেখানে ফেলবেন না। এগুলো রোগ ছড়াতে পারে। বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কাজের জায়গায় বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাইরে খেতে হলে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া যায় এমন খাবার খেতে পারেন। অফিসে বা কাজের জায়গায় নিজের কাপ, মগ কিংবা পানির বোতল, প্রয়োজন হলে খাবারের প্লেট রাখুন এবং সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে তারপর ব্যবহার করুন। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক সুবিধাগুলো গ্রহণ করুন। চুল বড় হলে স্কার্ফ বা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন। তবে ছোট চুলই ভালো বাইরে চলাফেরা করার জন্য।

৫. ঘড়ি, গয়না ও শিশুদের খেলনা ব্যবহারে সতর্ক হোন

যেকোনো ধাতুর ওপর ৫ দিন পর্যন্ত ভাইরাস থাকতে পারে। তাই সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঘড়ি এবং যেকোনো ধরনের গয়না ব্যবহার বন্ধ রাখুন। শিশুদের খেলনা কিনলে সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে তারপর ব্যবহার করতে দিন। প্রয়োজনে সেগুলো এক সপ্তাহ নিরাপদ জায়গায় রেখে তারপর ব্যবহার করতে দিন।

ভয় পাবেন না কিংবা আতঙ্কিত হবে না। যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন। শুধু স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত কিছু করার প্রয়োজন হবে না।

সূত্র: প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment