এই গরমে সুস্থ থাকতে কী খাবেন
- উম্মে সালমা তামান্না
বেশ গরম পড়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই অস্থির। প্রচণ্ড এই গরমের কারণে অনেকেরই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এসবের মধ্যে পানিশূন্যতা, প্রস্রাবে সংক্রমণ, হিট স্ট্রোক, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, গরমজনিত সর্দি–কাশি, জ্বর অন্যতম। এ ছাড়া ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন ঘামাচি, র্যাশ, অ্যালার্জিও দেখা দিচ্ছে অনেকের। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরে তাপনিয়ন্ত্রণক্ষমতা কম থাকে। ফলে তাঁদের গরমজনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কাজেই সতর্ক থাকতে হবে। সুস্থ থাকতে খেতে হবে সহজপাচ্য এবং প্রচুর তরলজাতীয় খাবার। এ ছাড়া মৌসুমি ফলও খেতে হবে।
গ্রীষ্মের এ সময়ে প্রচুর রসাল মৌসুমি ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে আম, জাম, তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, লিচু উল্লেখযোগ্য। তরমুজ ও বাঙ্গিতে ৯০ শতাংশের বেশি পানি থাকে, ক্যালরি থাকে খুব কম। এ ছাড়া তরমুজকে গরমের সুপার ফুডও বলা হয়। কম ক্যালরি থাকায় বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলেও ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে না। কমলা ও মাল্টাও খাওয়া যেতে পারে এ সময়। এ দুটি ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। ফল দুটি পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকিও কমায়। এসব তাজা ফলের শরবত করে খেলে কিংবা যদি স্ন্যাক্স হিসেবেও দিনে দুবার গ্রহণ করা যায়, তাহলে সারা দিনের পানির চাহিদার অনেকটাই পূরণ করা যায়। পাশাপাশি এসব ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল।
সহজপাচ্য ও বেশি পানি আছে—এমন সবজি এই গরমে শরীরের জন্য খুব উপকারী। লাউ, জালি, পেঁপে, শিম, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, করলা, স্কোয়াশ, বিটরুট, মিষ্টি আলু, পালংশাক খাওয়া যেতে পারে। অনেকেই করলা খেতে অপছন্দ করেন। কিন্তু এই গরমে করলা-আলু ভাজি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এসব শাকসবজিতে প্রচুর পানি থাকে, যা শরীরে পানির ঘাটতি সহজেই পূরণ করে। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার যে প্রবণতা থাকে, তা কমাতেও সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় এই গরমে রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়ায়।
গ্রিন সালাদ এ সময় খুবই উপযোগী খাবার। ফল, শসা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা দিয়ে সালাদ করে খেতে পারেন দিনের প্রধান খাবারের সঙ্গে। শসা, টমেটোতেও পানির পরিমাণ বেশি থাকে। এতে দৈনিক পানির চাহিদা যেমন পূরণ হয়, তেমনি ত্বকের জন্যও খুব ভালো। সালাদ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভিনয়েড ও ফলেটের ভালো উৎস। তাই অস্বাস্থ্যকর ভাজাপোড়া খাবার না খেয়ে এই গরমে স্ন্যাক্স হিসেবেও সালাদ খেতে পারেন।
যাঁরা নিয়মিত চা বা কফি পান করেন, তাঁরা গরম চা বা কফির পরিবর্তে আইস কফি, আইস চা পান করতে পারেন। গরমে লেমোনেড, লাচ্চিও পান করতে পারেন। এ ছাড়া দই খেতে পারেন। পান করা যেতে পারে ডাবের পানিও। এসব খাবারের পাশাপাশি দৈনিক অন্তত ১০–১২ গ্লাস পানি পান করুন।
উম্মে সালমা তামান্না : পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা কনসালটেশন সেন্টার, বাড্ডা, ঢাকা
সূত্র: প্রথম আলো