নারীস্বাস্থ্য সেবায় “নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র”
- নাহিদ হাসান
সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে সাধারন মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে গড়ে তোলা হয়েছে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বল্পমূল্যে এ সব হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। প্রজনন স্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক রোগসমূহের নিয়ন্ত্রন ও সাধারন রোগ নিরাময় সেবা সহ আরো বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়ে থাকে এখানে। ডেঙ্গু’র প্রকোপের সময় কেন্দ্রগুলোতে ফ্রি-তে ডেঙ্গু টেস্ট করানো হতো।
বর্তমানে সরজমিনে বিভিন্ন নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা যায় কেন্দ্রগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। বর্তমানে কেন্দ্রগুলোতে করোনা মোকাবেলায় করোনা টিকা প্রদান করা হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে চলে টিকা কার্যক্রম।
এছাড়া কেন্দ্রগুলোতে গর্ভবতী নারীদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দেওয়া সেবা যেমন গর্ভকালীন সেবা, গর্ভকালীন টিকা, প্রসব সেবা (নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারী), প্রসব পরবর্তী সেবা, গর্ভপাতজনিত জটিলতার সেবা, সম্পূরক খাদ্য সেবা, ১৫-৪৯ বছর বয়সের মহিলাদের টিটি টিকা নিতে নারীদের উপস্থিতি উল্ল্যেখযোগ্য।
পরিবার পরিকল্পনা নিয়েও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনার পরামর্শ সেবা, কনডম বিতরন, জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন, ইমপ্লান্ট, আই ইউ ডি, মহিলা বন্ধ্যাত্বকরণ(লাইগেশন), পুরুষ বন্ধ্যাত্বকরণ সহ বিভিন্ন সেবাও দিয়ে থাকে তারা।
নুরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্মী ডা. মঞ্জুরা বেগম জানান, আমরা মূলত মা’দের নিয়ে কাজ করি। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সাত মাস আমরা আমাদের এখানে নিয়মিত চেকআপ করে থাকি। এরপর আমরা আমাদের অধীনে যে মাতৃসদন আছে সেখানে তাদের প্রেরণ করি। তারপর পরবর্তী চেকআপ সেখানে হয় এবং ডেলিভারী সেখানে হয়। ডেলিভারীর পরে আমাদের এখানে বাচ্চাদের পোলিও , ডিপথেরিয়া, হুপিং কপ, পার্টোসিস, যক্ষ্ণা, হেপাটাইটিস ইত্যাদি (ইপিআই) টিকা দিয়ে থাকি । পোলিও টিকা তো এখন দুইটা দেওয়া হয় ইঞ্জেকশন এবং মুখে। মোটকথা, আমরা বাচ্চাদের দশটা অসুখের ছোটবেলা থেকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছি যেটা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি। আর এটার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী এওয়ার্ড পেয়েছে। এটা আমাদের প্রাথমিক সেন্টার, মূল সেন্টার দুই জায়গায় ই আছে।
তিনি আরো জানান, আমাদের সেবা কেন্দ্রতে মূলত বেশিরভাগ সেবা নিয়ে থাকে মধ্যভিত্ত ও অস্বচ্ছল পরিবারে নারীরা। প্রতিদিন আমরা কমপক্ষে ৩০-৪০ জনকে আমরা সেবা দিয়ে থাকি। বিশেষ করে বিয়ে পরবর্তী পরিবার কল্পনা, গর্ভধারন, জন্মনিয়ন্ত্রন নিয়ে আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি। এছাড়া নারী ও পুরুষরা দাম্পত্যকালীন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসেন। গর্ভবতী নারীদের ও এখানে যথেষ্ট ভালোভাবে আমরা সেবা দিয়ে থাকি।
আমরা মূলত শহরের গরীব মানুষজন ও মধ্যভিত্তদের সেবা দিয়ে থাকি। তাদের যে আয় এতে তাদের থাকা, খাওয়া পরা চলে যায় কিন্তু চিকিৎসা ক্ষেত্রে তারা সেটা বুঝে উঠেনা। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য ই থাকে তাদের সেবা দেওয়া। আমরা খুব বেশি চার্জ না নিলেও ন্যূনতম কিছু টাকা (৫০ টাকা) আমরা সাধারণদের থেকে নেই। ল্যাব খরচ আবার আলাদা থাকে। তাদের মধ্যে যারা বেশি গরীব তাদের থেকে আমরা কোনো খরচ নেই না। আমাদের খুব বেশি ল্যাব সুবিধা না থাকলেও যেগুলো বেশি প্রয়োজন আমাদের কাছে তা থাকে।”
অঞ্চল ৫ এলাকার (কারওয়ান) প্রজেক্ট ম্যানাজার রেহানা আক্তার মিতা জানান, আমাদের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলো মূলত এনজিও পরিচালনা করে। আর সিটি কর্পোরেশন সার্বিক তত্ত্বাবধান করে। এক একটি অঞ্চল আলাদা আলাদা এনজিওর আওতায় পরিচালিত হয়। আমরা সার্বিক ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে এই অঞ্চলে সুন্দর ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা সেবা দিতে পারি।
উপস্থিত নারী সেবাগ্রহীতা আসমা জানায়, এখানে পরিবার পরিকল্পনার নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা নিতে এসেছি। ওনারা যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে বুঝিয়েছেন। আমরা এখানে কম খরচেই স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারি। এটা আমাদের জন্য সহজ হয়েছে। এখানে অনেকেই আসে যাদের টাকা পয়সা কম। আমাদের তো বেসরকারী হাসপাতালে যাওয়ার এত টাকা নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পাঁচটি অঞ্চলে ২৭ টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে অঞ্চলবেধে ২২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও প্রত্যেকটি অঞ্চলে একটি করে মোট ৫টি মাতৃসদন রয়েছে। যেখানে কম খরচে সাধারন মানুষকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো। এছাড়া ঢাকা দক্ষিনে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে ২৮টি। এবং এর মধ্যে ২৩টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৫টি মাতৃসদন রয়েছে।