‘পিরিয়ড’ নিয়ে সচেতনতা থাকা প্রয়োজন ছেলেদেরও
- তুষার হাওলাদার
স্যানিটারি ন্যাপকিন কি সেটা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। কিশোরীদের জীবনে একটি বিশেষ পরিবর্তনের সময় এই ন্যাপকিন হয় সহায়ক। আমাদের দেশের স্কুলপড়ুয়া কিশোরীদের জীবনে প্রথম পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে ভীষণ ভীতিকর। আর তারপর তাদের দেখে হাসি-ঠাট্টা তো আছেই।
একজন নারীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড। প্রকৃতির পক্ষ থেকে নারীদের জন্য একটি উপহার হল পিরিয়ড। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন নারী গর্ভধারণের উপযুক্ত হয়।
আমাদের সমাজের বহু জায়গায় এখনও পিরিয়ড যে একটি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, সেটি না মেনে একে নারী জীবনের অপবিত্র অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পিরিয়ড চলাকালীন মেয়েদের স্বাভাবিক কাজকর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। অনেক জায়গায় মেয়েদেরকে নিজের বিছানায়, এমনকি ঘরেও থাকতে দেওয়া হয় না। লোকলজ্জা কিংবা বিব্রত হওয়ার ভয়ে স্কুলগামী কিশোরীরা স্কুলে যেতে পারে না পিরিয়ডের সময়।
গবেষণা বলছে, বয়সন্ধিকালের আগে পিরিয়ড নিয়ে সচেতন নয় এদেশের ৬৪ শতাংশ কিশোরী। এখনও আমাদের দেশের বহু মানুষ পিরিয়ডকে মনে করে মেয়েদের একান্ত গোপনীয় ব্যাপার। এ বিষয়ে এখনও স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে সংকোচবোধ করে অনেক শিক্ষিত মানুষ। এমনকি মেয়েরা নিজেদের মধ্যেও পিরিয়ড নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে না।
সারাজীবন একসাথে থেকেও পরিবারের নারী সদস্যদের প্রতি মাসে যে শারীরিক প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে হয় সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই অনেক পুরুষের। ফলে একেবারে কিশোর বয়স থেকেই পুরুষদের কাছে একরকমের নিষিদ্ধ জ্ঞান হিসেবে আবির্ভূত হয় পিরিয়ডের প্রক্রিয়া। একারণে এই বিষয়টি নিয়ে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই মানুষগুলোর আচরণও হয়ে উঠে প্রচণ্ড অসংবেদনশীল।
আমাদের দেশের প্রায় সমস্ত জায়গাতেই দোকানে স্যানিটারি প্যাড কিনতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয় মেয়েদের। দোকানদার বা আশেপাশের লোকজনের কুদৃষ্টি, অশোভন ইঙ্গিত ও মন্তব্যের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাদেরকে। সামাজিকভাবে পিরিয়ড সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলোকে দূর করে এটিকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে সবার কাছে তুলে ধরতে পারলেই কেবল মানুষের এমন নেতিবাচক আচরণ বন্ধ করা সম্ভব।
সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করার পরও পিরিয়ডে নিয়মিত কিছু দুর্ভোগ সহ্য করতে হয় সব নারীরই। মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, কোমর ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করার মতো শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মুড সুইং, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি মানসিক অবসাদে তাদের ভুগতে হয় নিয়মিতই। এসব কিছুর সাথে লড়াই করেও নারীরা প্রতিনিয়ত সমাজের সকল ক্ষেত্রেই পালন করে যাচ্ছেন তাদের দায়িত্ব।
পিরিয়ডকালীন এই দুর্ভোগগুলো নারীরা যেন আরও শক্তিশালী হয়ে মোকাবেলা করতে পারেন, সেজন্য অবশ্যই পাশে থেকে সাহায্য করতে হবে পরিবার ও সমাজের পুরুষ সদস্যদেরও।