মুঠোফোনের ফাঁদে প্রসন্নতা কাঁদে
শিমি আক্তার : বর্তমান সময়টা প্রযুক্তির। প্রযুক্তি বিপ্লবের এই যুগে নতুন নতুন আবিষ্কার আমাদের জীবনকে করে তুলছে সহজ থেকে আরও সহজতর। আবিষ্কৃত সেসব যন্ত্রপাতি ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। মুঠোফোন এর মধ্যে অন্যতম। মুঠোফোনের কার্যকারিতায় প্রায় প্রতিদিনই যোগ হছে অত্যাধুনিকতা। প্রয়োজনীয় সকল যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান, তথ্য সংরক্ষণ, বিনোদন কি নেই এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটিতে! মুঠোফোন বিশ্বকে এনে দিয়েছে আমাদের হাতের মুঠোয়; আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বয়ে এনেছে আর্শীবাদ।
মানব সৃষ্ট প্রায় সকল জিনিসেরই থাকে ভালো এবং মন্দ দিক। মোবাইলও তার ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদন মতে, মুঠোফোন শুধু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যাই সৃষ্টি করে তা নয়, অনেকে মনে করেন এটা ক্যান্সারেরও অন্যতম কারণ। মোবাইল ফোন স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে কারণ এটা চালু করার সাথ সাথেই রেডিও তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। আমরা যখন কথা বলতে থাকি তখন এই প্রবাহের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে; আর বাড়তে থাকে প্রযুক্তির অভিশাপ।
মোবাইল ফোন টাওয়ার দিয়েই শুরু করা যাক। এক গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন টাওয়ারের ৫০ থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে যারা বসবাস করেন, তারা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের কারণে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। সুতরাং মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে নিরাপদ দুরত্বে বসবাস করা উচিত।
আসুন জেনে নেই মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে আমরা কত ধরনের বিপদ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছি ।
১. ঘুমের ব্যাঘাত :
ঘুম না হওয়ার মূল কারণ কি কি হতে পারে তা কখনও অনুধাবন করেছেন কি? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার অন্যতম কারণ হলো মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার। ঘুমকে বিঘ্নিত করার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন অন্যতম অবদান রাখছে যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটার কুফল দুই এক দিনেই বোঝা যাবে না। তবে দিনের পর দিন ঘুমের অনিয়ম হলে তখনই বোঝা যাবে স্বাস্থ্যের কতট ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
২. সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি :
কোন সন্দেহ নেই যে, মোবাইলে কথা বলার সময় আমরা অন্যদিকে অনেকটাই অমনোযোগী হয়ে পড়ি, যে কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যায়। গাড়ী চালানো বা রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় মোবাইলে কথা বলতে থাকলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, চলন্ত পথে মোবাইলের ব্যবহার অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনার কারণ।
৩. শ্রবণ শক্তি হ্রাস :
মোবাইলের রেডিয়েশন মানুষের শ্রবণ শক্তিকে কমিয়ে দিচ্ছে। জরিপে বলা হয়েছে মুঠোফোনের ইলেকট্রোম্যাগনেট (ঊগ) যদি অধিক সময় ধরে কানে প্রবাহিত হয় তাহলে আমাদের শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৪. দৃষ্টিশক্তি হ্রাস :
এখনকার দিনে ই-বুক, ফেসবুক, ই-মেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি মুঠোফোনের মাধ্যমে সহজেই করা যায়, এতে মোবাইলের স্ক্রীনের প্রতি দীর্ঘক্ষণ চোখ রাখতে হয় । আবার ক্ষুদ্রাকৃতির ফন্টের লেখাগুলি পড়া, নাটক বা সিনেমা প্রভৃতি দেখার জন্যও অনেক সময় ধরে মোবাইলের স্ক্রীনের প্রতি চোখ রাখতে হয়। এতে মোবাইলের ছোট স্ক্রীনের তীব্র ও ঝাঁঝালো আলোক রশ্মি সরাসরি চোখের উপর পতিত হয়ে দৃষ্টিশক্তির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আবার কম আলোতে পড়লেও চোখের ক্ষতি হতে পারে। যার ফলে চোখ শুষ্ক হওয়া, জ্বালা পোড়া করা, চুলকানি এমনকি চোখ লালচে হতে পারে যে কারণে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে।
৫. হার্টের সমস্যা :
মুঠোফোনের প্রবাহিত তরঙ্গ থেকে আমাদের শরীরে দীর্ঘস্থায়ী কঠিন অসুখ দানা বাধতে পারে, এর মধ্যে অন্যতম হার্টের সমস্যা। মোবাইল থেকে নির্গত তরঙ্গ হার্টের ফাংশানগুলিকে অস্বাভাবিক করে দেয়। এটি শরীরের রেড ব্লাড সেলের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যে কারণে হার্টের নানা রকম জটিলা সৃষ্টি হতে পারে।
৬. বন্ধ্যাত্ব :
মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ্যাত্বেরও অন্যতম আরেকটি কারণ। গবেষণায় জানা গেছে মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন নারীর শরীরে শুক্রানু ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৭. ক্যান্সার :
আরেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মুঠোফোন থেকে প্রবাহিত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এর ব্যবহারকারীদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি শরীরের সেলগুলিকে স্বাভাবিক কাজে বাধা প্রদান করে ফলে ক্যান্সার ও ব্রেন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মোবাইলের প্রয়োজনীয়তাকে কোন ভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। উল্লেখিত কারণে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে এমনটি নয়। কিন্তু এর যথোপযুক্ত এবং সঠিক ব্যবহার না করলে উপরোক্ত ঝুঁকিগুলো এড়ানো সম্ভব নাও হতে পারে। আমরা কথায় বলে থাকি ’অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না’ তাই এই বাক্যটির প্রতি সুবিচার করে আসুন মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রেখে স্বাস্থ্যকে ঝুকি মুক্ত ও নিরাপদ রাখি।