আমাজন জঙ্গল: জীবন রক্ষা এবং সৌন্দর্যের লীলাভূমি
- আসিফ আহমেদ
প্রাণীকুলের বেঁচে থাকার জন্য অন্যতম প্রয়োজন হলো অক্সিজেন। মানুষ জন্মগ্রহনের পর থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত অক্সিজেন গ্রহণ করে। আর সেই অক্সিজেনের একমাত্র প্রাকৃতিক উৎস হলো গাছ। কারণ একমাত্র গাছই অক্সিজেন ত্যাগ করে আর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে।
আমাজন অরণ্য বা জঙ্গল হলো দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী বিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত এক বিশাল বনভূমি। এই বনকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় কেননা এই বন থেকেই পৃথিবীর প্রায় ২০% অক্সিজেন সরবরাহ হয়। ৭০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই অরণ্যের প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। ৯ টি দেশ জুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত।
আমাজন জঙ্গলের মূল অংশ রয়েছে রয়েছে ব্রাজিলে যা আয়তনের প্রায় ৬০%, পেরুতে রয়েছে ১৩% এবং বাকি অংশ কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, গায়ানা, বলবিয়া, সুরিনাস। পৃথিবী জুড়ে যে রেইন ফরেস্ট আছে তার অর্ধেক টাই এই অরণ্যে অবস্থিত। নানা রকম প্রজাতির বাসস্থান হিসেবে সমৃদ্ধ এই আমাজন।এই বনে ১৬০০০ প্রজাতিতে বিভক্ত প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন বৃক্ষ রয়েছে; যা আমাজনের সৌন্দর্য্যকে পরিবর্ধন করতে যথেষ্ট।
উদ্ভিদ জগতের সৌন্দর্য্যের এক অপরুপ যায়গা যেহেতু আমাজন সেহেতু বেশ কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যা অন্য কোথাও দেখা যায় না। এক তথ্য মতে, আমাজনে ৮৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী রয়েছে। অপরুপ সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি বিপজ্জনক অনেক প্রাণীই আমাজনে বসবাস করে।
আমাজনে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং ভয়ংকর সাপ অ্যানাকোন্ডা। এছাড়া রয়েছে লাল চোখা ব্যাঙ, বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়, বানর, বৈদ্যুতিক ইল, মানুষখেকো পিরানহা, বিষাক্ত ডার্ট ফ্রগসহ অসংখ্য বিষাক্ত জাতের সাপ যেমন ব্লাক মাম্বা, রাসেলস বাইপারসহ নানা প্রজাতির বিষাক্ত সাপ ও বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ প্রাণী।
তাছাড়াও হরেক রকমের গাছপালা দিয়ে আবৃত এ বনে বেশির ভাগই চিরহরিৎ বৃক্ষ। সে কারণে এই বনকে চিরহরিৎ বনও বলা হয় কেননা পৃথিবী জুড়ে যেসব রেইনফরেস্ট রয়েছে তার অর্ধেকটাই হলো এই অরণ্য। তাই একে রেইন ফরেস্টও বলা হয়। আমাজনকে রেইনফরেস্ট বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে সেখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয় বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত এবং গরম আবহাওয়ার কারণে। প্রচণ্ড গরমের কারণে বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশি যার কারণে আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হয়।
তবে সবকিছুর পাশাপাশি রয়েছে কিছু সমস্যা কেননা বিগত দুই বছরে আমাজন জঙ্গলের অনেকাংশ পুড়ে যেই ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। এক গবেষণা মতে, যেভাবে এই অরণ্যের ক্ষতি হচ্ছে তাতে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। আর এর মূল কারণ হিসেবে দোষারূপ করেছেন অপরিকল্পিত গাছ নিধন।
এই বনে বর্তমানে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ১০,০০,০০০ (দশ লক্ষ) উপজাতি বাস করে যারা এখনো সেই পুরণো জাতির মতোই বসবাস করে আসছে। তাদের সারা বিশ্বের সাথে এখনো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। পুরণো সমাজের মতো এখনো তারা বনের বাকলের দ্বারা তাদের আত্মসম্ভ্রম রক্ষা করে। এবং খাদ্য হিসেবে অনক উপজাতি মানুষের মাংসও খেয়ে থাকে।
বিশ্ব দরবারের প্রথম সারির সংগঠন ও ব্যক্তিদের অচিরেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পারা গেলে হয়তোবা অচিরেই ধ্বংস হবে এই অরণ্যটি।