‘সাদিও মানে’ এক অনুপ্রেরণার নাম

‘সাদিও মানে’ এক অনুপ্রেরণার নাম

  • মো. মসুদ রাব্বানী

সেনেগালের প্রত্যন্ত এক গ্রামে জন্ম হয়েছিল প্রতিভাবান এই ফুটবল শিল্পীর। জন্ম আফ্রিকার ছোট একটি গ্রামে হলেও ফুটবল জাদুতে তিনি মাত করেছেন গোটা বিশ্ব। শুধু তাই নয় সবার মাঝে হয়েছেন একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব।

নাম তার সাদিও মানে। নাম দিয়ে কি আসে যায়, তিনি তো সবার মনে জায়গা করে নিয়েছেন তার কর্মগুণে। এক মুসলিম পরিবারে জন্ম তার। বাবা পেশায় ছিলেন একজন মসজিদের ইমাম। বাবার কাছ থেকেই হয়ত তিনি পেয়েছিলেন মনুষ্যত্বের প্রকৃত শিক্ষা। 

ছোটবেলায় বাবা মারা যায় সাদিও মানের। পরিবারের অভাব অনটনের মাঝেই তার শৈশবের বেড়ে উঠা। খুব বেশিদূর গৎবাঁধা পড়ালেখার সুযোগ হয়নি তার। গ্রামের চিরাচরিত পেশা কৃষিকাজ কিংবা রাখালের পেশাকেই বেছে নিতে হত তাকে। কিন্তু না তিনি স্বপ্ন দেখলেন আকাশ ছোয়ার। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। শুরু করেন নিজেকে প্রমাণের যুদ্ধ। কয়েকবছর পর ফোন করে মাকে জানান তিনি ফ্রান্সের একটি ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। মা প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি। তিনি ভেবেছিলেন ছেলে হয়ত সেনেগালেরই কোন শহরে আছেন। সাদাসিধা নিরহংকার এই মানুষটির ভিতর নেই বিন্দু পরিমাণ আত্ম অহমিকা।

এইতো কদিন আগেও তাকে দেখা গিয়েছিল মসজিদের টয়লেট পরিষ্কার করতে। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী খেলোয়াড়দের একজন হয়েও নিজেকে নিয়ে তার একটুও অহংকার নাই। লোক দেখানো চাকচিক্য কিংবা আলোর ঝলকানির প্রতি নেই তার কোন আগ্রহ। তাই সবসময় খবরের আড়ালে থাকাতেই পছন্দ করেন তিনি। তার ব্যক্তিগত আয়ের সিংহভাগই ব্যায় করেন সেনেগালের দরিদ্র আর অসহায় মানুষদের জন্য। এক সাংবাদিক খবর নিতে গেলে তিনি নিজে তাকে অনুরোধ জানান খবরগুলো প্রকাশ না করার জন্য। কারণ মানুষকে দেখানোর জন্য তিনি দান করেন না।

বিশ্বের ধনী ফুটবলারদের একজন হয়েও নিজে চালান একটি ভাঙ্গা আইফোন যা কয়েকবার ধরা পড়েছে আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়। চড়েন পুরোনো মডেলের একটি টয়োটা গাড়িতে। একবার এক সংবাদ সম্মেলনে একজন প্রশ্ন করে বসেন কেন এই অনাড়ম্বর জীবন যাপন? কেন কিনছেন না দামি সব ফোন কিংবা গাড়ি। জবাবে তিনি বলেছিলেন, “চাইলে কিনতে পারি ১০ টি ফেরারি, ২০ টি ডায়মন্ডের ঘড়ি আর কয়েকশ দামি ফোন। কিন্তু এতসব দিয়ে কি করব আমি? এসব কি কাজে লাগবে মানুষের?” যার সাপ্তাহিক আয় ১২ কোটি টাকা তিনি তো চাইলেই কিনতে পারেন এমন অনেক কিছুই।

তবে নিজেকে আড়ালে রাখা এ মানুষটি তার আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করেন জনসেবায়। তার বাবা মারা গিয়েছিল পেটের অসুখে, সামান্য হাসপাতালও ছিল না তার গ্রাম বেম্বালিতে। তাই সেখানে করে দিয়েছেন হাসপাতাল। আর কোন শিশুর যেন ফুটবলার হতে কাঠ-খড় পোহাতে না হয় তাই সেখানে বানিয়েছেন স্টেডিয়ামও। নিজেকে সবসময় বেম্বালির সন্তান বলে গর্ব করেন লিভারপুলের এই তারকা ফুটবলার।

প্রতিবেদকঃ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Sharing is caring!

Leave a Comment