লিভারপুলের নায়ক ক্লপ
- মো: মশিউর রহমান
বর্তমানের এই লিভারপুলের নাম অতীতে লিভারপুল ছিলনা। এর আদি নাম ছিল এভারটন এফ.সি. এন্ড এথলেটিক গ্রাউন্ডস লিমিটেড, যাকে সংক্ষেপে এভারটন এথলেটিক বলে ডাকা হতো। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দলটিকে এভারটন নাম হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অসম্মতি জানায়। তার অন্যতম কারণ ১৮৭৪ সালে এভারটন এফ.সি. নামে অন্য আরেক ক্লাব অতীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। পরবর্তীতে ক্লাবটির নামকরণ করা হয় লিভারপুল এফ. সি.। ১৮৭৪ সালের প্রতিষ্ঠিত এভারটন এফ.সি. দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী লিভারপুলের তীব্র নগর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ায়। তাদের এই উত্তেজনাকে একটা শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে লিভারপুল ও এভারটনের ম্যাচকে মার্সেসাইড ডার্বি নাম দেয়া হয়। এই উত্তেজনাকর ডার্বি এখনো তার আমেজ ধরে রেখেছে।
এভাবেই লিভারপুল ক্লাবটি খরগোশের মতো হাটিহাটি পা পা করে এগিয়ে যেতে থাকে। ক্লাবটি মাঝে অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করলেও শিরোপা নামাক সোনার হরিণের দেখা পাচ্ছিল না। এর মাঝে ১৯০১ সালে ক্লাবটি ফুটবল লীগ খেতাব লাভ করে। এভাবেই অনেকটা পথ ধীরে ধরে পার থাক। কিন্তু শিরোপা নামের সেই সোনার হরিণ যেনো অধরাই থেকে যায়। যদিও মাঝে বেশ কয়েকটা ট্রফির স্বাদ পেলেও সমার্থকদের তৃপ্ত করতে পারে নি ক্লাবটি ।
সময়টা ২০১৫ সালের অক্টোবর মাস। কোচ বেন্ড্রন রজার্স এর স্থলাভিষিক্ত হন জার্মান নাগরিক ইয়ুর্গেন ক্লপ। কোচ হিসেবে ক্লপ সমর্থকদের বড় কোনো স্বপ্ন বা রূপকথার গল্প শুনাননি, যেমনটা অতীতের কোচরা শুনিয়ে গেছেন। ক্লপ খুব ভালো করেই জানতেন ক্লাবকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। তার পূর্বসুরীর রেখে যাওয়া দলটাকে কিছুটা ঝালাই করে শুরু করেন নিজের দল গোছানোর কার্যক্রম, যেমনটা করেছিলেন বার্সেলোনার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলা। যার ফলাফল তিনি পরের মৌসুমেই লিগে ৪র্থ স্থানে থেকে শেষ করেন। গড়ে তুলতে থাকেন দলের মধ্যে টিম স্পীড ও খেলোয়াড় দের মধ্যে বোঝাপড়া। এবং তার ফলাফস্বরূপ ২০১৬ সালে ইউরোপা লিগের ফাইনালেও ওঠে তার দল। তার পরের মৌসুমে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে তোলেন তার দলকে। তবে ভাগ্যদেবী সহায় হয়নি তাদের সাথে। পর পর দুইবছর লীগ ও ইউরোপ সেরার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় ক্লপের শিষ্যরা। কিন্তু ইয়ুর্গেন ক্লপ হেরে যাবার পাত্র নন। অবশেষে সাফল্য ধরা দেয়। ২০১৯ সালে মাদ্রিদের ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে আনুষ্ঠিত ফাইনালে স্বাদশী সতীর্থ টটেনহ্যাম হটস্পার্সকে হারিয়ে জিতে যায় ইউরোপ সেরার মুকুট। রচিত হয় আরেকটা মহাকাব্য, যে কাব্যের নায়ক ক্লপ নিজেই। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা থেকে যায়। পূর্ণতা যেন পাচ্ছিলনা ক্লপের শিষ্য ও সমর্থকরা। পরিপূর্ণতা পায় বৃহস্পতিবারের সে রাতে যখন চেলসির কাছে ম্যানসিটির ২-১ গোলের ব্যবধাবে হারে, আর তাতে শিরোপার জয়উল্লাস করে লিভারপুল। সেই সাথে ৩০ বছরের আক্ষেপের অবসান হয়। সেই লীগে ৭ ম্যাচ হাতে রেখেই জয়ের উদযাপনে ফেটে পরে পুরো লিভারপুলবাসী। রচিত হয় আরেকটি মহাকাব্য। সেই শিরোপার উদযাপন করতে ভোলেননি ১৯৯০ সালে সর্বশেষ লীগজয়ী ম্যানেজার কেনি ড্যালগ্লিশ, আনন্দের একপর্যায়ে তিনি কেঁদেই দিয়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকের সেই কোচ বলেন, “ইয়ুর্গেন আসার পর থেকে ক্লাবে সবকিছুই যেন ইতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে।” ২০২১-২২ মৌসুমে ক্লপ এর সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আসছে ২৯ মে ক্লপ এর সামনে ২য় বারের মতো ইউরোপীয় সেরাদের সেরার লড়াই অপেক্ষা করছে। বড়ধরনের কোনো অঘটন না ঘটলে হয়ত এই মৌসুমের ইউরোপীয় সেরাদের শিরোপা জিতিয়ে দিতে পারেন এই জার্মান নাগরিক ।