যুক্তরাষ্ট্রের নারীবৈষম্য নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা কর্মস্থল, স্বাস্থ্যসেবা থেকে কারাগার- সবক্ষেত্রেই চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল (১১ ডিসেম্বর) বিশ্বসংস্থার মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নারীর সমতা প্রতিষ্ঠায় ওবামা প্রশাসন প্রশংসিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ‘প্রবল মেরুকরণ’র পরিপ্রেক্ষিতে নারী অধিকারের বিষয়টি অবজ্ঞার মধ্যেই রয়ে গেছে।
বিশ্বের যে সাতটি দেশ এখনও নারীর প্রতি বৈষম্য সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর করেনি, যুক্তরাষ্ট্র তার অন্যতম। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই সিডও সনদ সমুন্নত রাখার চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষর করা খুবই প্রয়োজন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এর আগে সর্বস্তরে নারীর অধিকার সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর থাকার অঙ্গীকার করেছে।’
জাতিসংঘের সিডও’র একটি বিশেষজ্ঞ দল গত ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি এলাকায় নারীদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। দলটির সদস্যরা কেন্দ্রীয়, অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংস্থার প্রতিনিধি এবং সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি কর্মস্থলে নারীদের হাল-হকিকত সম্পর্কে ধারণা নেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞ দলটির পর্যবেক্ষণে অভিবাসী নারী শ্রমিক, আফ্রিকান-আমেরিকান, স্প্যানিশ ও স্থানীয় নারীরা বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। শারীরিকভাবে অচল নারীদের অবস্থা আরও সঙ্গীন। যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার সময় গ্রেপ্তার হওয়া নারীদের অবস্থাও করুণ।
বিশেষজ্ঞরা দলের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, কর্মস্থলে পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে কম বেতন পাওয়া ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে অনেক নারীই মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় বেতনভাতা পাচ্ছেন না। প্রজণন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও তারা বিভিন্ন বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সালে প্রসবকালীন মৃত্যুর হার ১৩৬ শতাংশ বেড়েছে বলেও তাদের পর্যবেক্ষণে পাওয়া গেছে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে এ ঝুঁকি চারগুণ বেশি।
ক্লিনিকে মায়েদের হয়রানির শিকার হওয়া এবং আন্তরিক চিকিৎসাসেবা না পাওয়ারও প্রমাণও মিলেছে বিষেশজ্ঞ দলের পরিদর্শনের সময়।
সিডও বিশেষজ্ঞ দলের পরিদর্শনের আগ মুহূর্তে কলরাডো প্ল্যানেড প্যারেন্টহুড ফ্যামিলি প্ল্যানিং সেন্টারে কয়েকজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে বর্তমান প্রশাসনের দৃঢ় অঙ্গীকার সত্ত্বেও বন্দুক নিয়ন্ত্রণে যথাযথ আইন না থাকায় নারীরা প্রচণ্ড হুমকির মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন।’