বদলে গেছেন সুচি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এখন সফলতার দোরগোড়ায় অং সান সুচি। সম্প্রতি একটি রেডিও শোতে শোনা গেল হাস্যোজ্জ্বল সুচির সঙ্গে ফুরফুরে থান শোয়ের সংলাপ। সাবেক সেনাশাসক থান শোয়ে সুচিকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন তিনি ভবিষ্যতের নেতা। অথচ এই সেনাশাসক একনায়কতান্ত্রিকভাবে অর্ধশতাব্দীকাল মিয়ানমার শাসন করেছেন।
সাম্প্রতিক এসব ঘটনাপ্রবাহ বলছে, পাল্টে গেছে মিয়ানমার- বদলেছেন গণতন্ত্রকন্যা সুচিও। গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের পর নির্যাতিত আপসহীন নারী এখন কৌশলী বাস্তবমুখী রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন। একসময়ের শত্রুদের সঙ্গেও তিনি আপসকামী এমনকি জোটবদ্ধ হতেও রাজি আছেন সুচি। কারণ তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের রাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে।
সুচিকে ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দি রেখেছিলেন এই থান শোয়েই। ব্রিটিশ স্বামীর মৃত্যুতেও সুচিকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেননি তিনি। অথচ থান শোয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর ৭০ বছর বয়সী সুচি বললেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আনয়নে কাজ করা উচিত। অতীতে কী হয়েছিল তা এখন ভাবার দরকার নেই।’
চলতি মাসে সুচি বর্তমান সেনা প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও সেনাপ্রধান মিন অং হিয়াঙের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। একইসঙ্গে দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন তারা যেন গণমাধ্যমে কথা বলার সময় ‘বিজয়ী’ শব্দ উচ্চারণ না করে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের সাবেক সিনিয়র কর্মকমর্তা রিচার্ড হরসি বলেন, ‘এটা তার পথকে মসৃণ করার প্রচেষ্টা। সুচি ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও রাজনৈতিক অবস্থান পোক্ত করতে চাচ্ছেন। আর এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
কঠোর-আপসহীন নেত্রী সুচির এ আপসকামিতা ও কৌশল অবলম্বন শুরু হয়েছিল তিন বছর আগে। ২০১২ সালে তিনি পার্লামেন্ট সদস্য হয়ে পার্লামেন্ট স্পিকার ও সাবেক জেনারেল শোয়ে মানের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০১১ সালে আধা সামরিক সরকার গঠন হলে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা মোটেও কমেনি। এবার গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ক্ষমতা হস্তান্তর হলেও সেনা প্রভাব একেবারেই মিটে যাবে না। পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। ১৯৯০ সালে সুচির দল ৮৩ শতাংশ ভোট পেলেও ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি সামরিক সরকার। তাই আগেকার ক্ষতযন্ত্রণা মনে রেখে সতর্ক পদক্ষেপে এগোচ্ছেন সুচি। সংবাদ সূত্র : রয়টার্স।