কলকাতা বইমেলা উদ্বোধন করলেন তসলিমা নাসরিন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অবশেষে কলকাতাবাসীর দাবিকে সম্মান জানিয়ে ৩৯-তম কলকাতা বইমেলা উদ্বোধন করলেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরেক বেরেণ্য লেখক সালমান রুশদি।
গত ২০ জানুয়ারি কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল বুকসেলার্স ও পাবলিশার্স গিল্ড। সেখানেই ২৮ জানুয়ারি বিকেলে ‘লেখকের নির্বাসন: রাষ্ট্রের দায়’ আলোচনাসভায় আমন্ত্রিত বক্তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তখন তসলিমা নাসরিন, সালমান রুশদির নাম উঠে আসে। এই বিষয়ে বলতে ওঁদের কেন ডাকা হল না, এই প্রশ্নের উত্তরে গিল্ড-সম্পাদক বলেন, ‘কলঙ্কিত লেখকদের ডেকে আমরা কলকাতার মুখ পোড়াতে চাই না।’
পর দিনই শহর জুড়ে প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়। ফেসবুক-টুইটারে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের ডাকে পর দিনই অ্যাকাডেমির সামনে ‘আবার হোক কলরব’ আন্দোলন শুরু হয়। তসলিমা ও রুশদিকেই কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো হোক, দাবিতে বহু সাধারণ মানুষ কলেজ স্ট্রিটে গিল্ড অফিসের সামনে প্রতিবাদ করেন। ২৫ জানুয়ারি আয়োজিত মৌন মিছিলে অভূতপূর্ব জনপ্লাবন। মিছিলের শেষ সভায় শপথ পড়া হয়: তসলিমা ও রুশদিকে এই বইমেলায় আমন্ত্রণ না জানানো হলে আমরা এক জনও বইমেলায় যাব না। এটাই আমাদের প্রতিবাদ।
২৬ জানুয়ারি বইমেলা উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কিছু মাওবাদী গোলমাল পাকাচ্ছে। ও-সব ছোট ঘটনা, পাত্তা দেবেন না। কিন্তু পর দিন মেলা শুরু হতেই দেখা যায়, সব স্টল খোলা, এক জনও ক্রেতা নেই। বাইরে চিপ্স-ফুচকা-ঝালমুড়িওলাদের সামনে অজস্র লোক ভিড় করে দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন, অথচ কেউ গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকছেন না। মাইকে বার বার ‘বই কেনায় ৭০% ছাড়’ ঘোষণা করেও লাভ হয়নি। পর পর তিন দিন এই একই ঘটনা। যে বইমেলায় রোজ কয়েক লক্ষ মানুষ আসতেন, সেখানে গুটিকয় মন্ত্রী, আমলা ও গিল্ড-কর্তা ছাড়া কেউ নেই। বিশাল চত্বর খাঁ খাঁ। ফুড পার্কের স্টল-মালিকরা অভিযোগ জানান, তিন দিনের সব খাবার নষ্ট হয়েছে। সব প্রকাশনীর সদস্যরা গিল্ড-সম্পাদকের সঙ্গে সভায় জানান, তাঁদের একটা বইও বিক্রি হয়নি। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী গিল্ড-কর্তাদের সঙ্গে নবান্নে জরুরি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন, বইমেলা এক মাসের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হল। ২৬ ফেব্রুয়ারি আবার বইমেলার উদ্বোধন হবে, উদ্বোধন করবেন তসলিমা ও রুশদি। দুজনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নিজে টুইটারে যোগাযোগ করেছেন।
কাল ছিল সেই ঐতিহাসিক দিন। তসলিমা বলেন, কলকাতাকে নিয়ে তাঁর যত অভিমান ছিল, আনন্দে ধুয়ে গেছে। রুশদি মুচকি হেসে বলেন, ‘আই অ্যাম হ্যাপি।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তসলিমা হ্যাপি, সালমান হ্যাপি। আপনারা হ্যাপি তো?’