এশিয়ায় প্রতি তিন দিনে একজন বিলিয়নিয়ার!
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি তৈরির নতুন আঁতুড়ঘর হিসেবে গড়ে উঠছে এশিয়া মহাদেশ। এই মহাদেশে এখন প্রতি তিন দিনে নতুন একজন বিলিয়নিয়ার তৈরি হচ্ছেন। বহুজাতিক নিরীক্ষা ও প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডব্লিউসি) এবং সুইজারল্যান্ডের বহুজাতিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
যৌথ এ গবেষণা প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘বিলিয়নিয়াররা কি চাপে আছেন?’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট ২১০ জন ব্যক্তি নতুন বিলিয়নিয়ারের মর্যাদা পেয়েছেন। আর বিলিয়নিয়ার তৈরিতে এ সময়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা মহাদেশ হলো এশিয়া। গত এক বছরে এশিয়াতে ১১৩ জন ব্যক্তি নতুন বিলিয়নিয়ারের মর্যাদা পেয়েছেন। এর মধ্যে শুধু চীনের নাগরিকই আছেন ৮০ জন, যা বিশ্বে নতুন বিলিয়নিয়ারের মর্যাদাপ্রাপ্ত মোট ব্যক্তিদের ৩৮ শতাংশ।
চীনে কয়েক বছর ধরে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রতিবেদনে আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এশিয়ায় ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মধ্যে নতুন করে যত বিলিয়নিয়ার তৈরি হয়েছে, এর ৭০ শতাংশই চীনের নাগরিক। দেশটিতে গত দুই বছরে যতজন লোক বিলিয়নিয়ারের খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তার অর্ধেকই এসেছেন তিনটি খাতে ব্যবসা করে। খাত তিনটি হলো প্রযুক্তি, ভোগ্যপণ্য ও খুচরা ব্যবসা এবং আবাসন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯ শতাংশ এসেছেন প্রযুক্তি খাত থেকে। খুচরা ভোগ্যপণ্য ও আবাসন খাত থেকে শতকোটি ডলারের মালিক হয়েছেন ১৫ শতাংশ করে চীনা নাগরিক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে চীনে বিলিয়নিয়ারদের মোট সম্পদ বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। চীনের বাইরে এশিয়ায় এ সময় সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার বেড়েছে ভারত ও হংকংয়ে। দেশ দুটিতে এ সময়ে ১১ জন করে নতুন বিলিয়নিয়ারের মর্যাদা পেয়েছেন।
সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপরীত চিত্রটিও এ সময় বেশ প্রকট ছিল এশিয়ায়। ২০১৫ সালে বিলিয়নিয়ারের তালিকা থেকে সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছেন এশিয়ার ধনকুবেরেরা। এ সময় ৮০ জন এশীয় বিলিয়নিয়ারের মর্যাদা হারিয়েছেন। ইউরোপে এ সংখ্যা ছিল ৪৪, আর যুক্তরাষ্ট্রে ছিল ৩৬। একক দেশ হিসেবে এ সময়ে চীনের ৪০ জন নাগরিক শতকোটিপতির মর্যাদা খুইয়েছেন।
২০১৫ সালে যাঁরা নতুন বিলিয়নিয়ার হয়েছেন তাঁদের বেশির ভাগই পেশায় উদ্যোক্তা। ১৫০ জন ব্যক্তি এ সময় নিজ উদ্যোগে শতকোটি ডলারের মালিক হয়েছেন, এর মধ্যে এশিয়ার ১১৩ জন নাগরিক আছেন। উত্তরাধিকার সূত্রে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার হয়েছেন ইউরোপ মহাদেশ থেকে। প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নিজের চেষ্টায় যাঁরা বিলিয়নিয়ার হয়েছেন তাঁদের সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদধারীদের তুলনায় অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে দেশটিতে নতুন শতকোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। এ সময়ে বিলিয়নিয়ারের খাতায় যোগ হয়েছেন ৪১ জন মার্কিন নাগরিক, আর বাদ পড়েছেন ৩৬ জন। যদিও সারা বিশ্বে বিলিয়নিয়ারদের হাতে মোট যত সম্পদ আছে তার ৪৭ শতাংশ আছে মার্কিন ধনকুবেরদের হাতে। দেশটিতে শীর্ষ ধনীর সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিশ্বে পণ্যের বাজারে মন্দা ও পারিবারিক সম্পত্তির হাতবদল হওয়ায় এ সময়ে নতুন সম্পদ বাড়েনি। আবার প্রযুক্তি ও আর্থিক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ২০১৫ সালটা খুব একটা সুখকর ছিল না। এ সময়ে মার্কিন ধনকুবেরদের গড় সম্পদের পরিমাণও কমে গেছে। ২০১৪ সালে দেশটিতে গড়ে একজন বিলিয়নিয়ারের হাতে ছিল ৪৭০ কোটি ডলার, ২০১৫ সালে যা কমে ৪৫০ কোটি ডলার হয়েছে।
প্রতিবেদনে ইউরোপে নতুন ধনী সে হারে বাড়ছে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ইউরোপে কয়েক পুরুষ ধরে সম্পদ ঘুরেফিরে কিছু ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে আটকে আছে। যাঁরা আগে থেকে ধনী তাঁরাই সম্পদ বাড়াতে অথবা ধরে রাখতে পারছেন। ২০১৫ সালে এ অঞ্চলে নতুন করে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন ৫৬ জন, আর এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ৪৪ জন।
আগামী ২০ বছরে বিশ্বে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ হাতবদলের ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন শুরু হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পিডব্লিউসি-ইউবিএসের প্রতিবেদন। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, আগামী ২০ বছরে ৫০০ বিলিয়নিয়ার ব্যক্তি তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ হস্তান্তর করবেন। এই অর্থ ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের সমান।