প্রতি আটজনের একজন তরুণ বেকার
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে গত এক দশকে অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তবে এ উন্নতি সামাজিক উন্নয়নে রূপান্তরিত হয়নি। অনেকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভাগ পায়নি। এখনো এ অঞ্চলে প্রতি ১০ জনের ১ জন শ্রমিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। প্রতি ৮ জনের ১ জন তরুণ বেকার। ১০০ কোটির বেশি শ্রমিক কর্মসংস্থান নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এমনকি তাঁদের সামাজিক ও আইনি সুরক্ষা নেই।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১৬তম এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন শহর বালিতে বালি নুসা দুয়া কনভেনশন সেন্টারে গতকাল মঙ্গলবার এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউসুফ কালা এর উদ্বোধন করেন। সম্মেলনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৫টি দেশের সরকার, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১০ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন এ সম্মেলনে।
আইএলওর এ আঞ্চলিক সম্মেলন চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের সম্মেলনটি হয়েছিল ২০১১ সালে জাপানে। এ সম্মেলন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শ্রম ও কর্মসংস্থানের নীতি ঠিক করতে ভূমিকা রাখে। এবারের সম্মেলনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন ও বৈষম্য দূর করার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।
সম্মেলনের শুরুতে দেওয়া ভাষণে আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, ১০ বছর আগে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৪তম সম্মেলনে পরবর্তী দশককে শোভন কর্মসংস্থান (ডিসেন্ট ওয়ার্ক) দশক ঘোষণা করা হয়। শেষ দিকে এসে এখন বিগত সময়ের কার্যক্রম মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার সময় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ মানুষ দেখি, যাঁরা মনে করেন তাঁরা বিশ্বায়ন থেকে সুবিধা পাননি। আমি মনে করি, তাঁদের এই হতাশা তাঁদের কর্মসংস্থান থেকে উৎসারিত। অনেকে কাজ পাননি, অনেকে কাজের মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন।’ তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বিশ্বায়ন এখন ব্যাপক প্রশ্নের মুখে পড়েছে, যা আগে এত বেশি ছিল না। পৃথিবীজুড়ে সন্দেহ ও অনিশ্চয়তা। কর্মসংস্থানের সমস্যা সমাধানে নীতিনির্ধারকদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বহু মানুষ।
গাই রাইডার উল্লেখ করেন, কিছু গোষ্ঠী উন্নয়নের ভাগ থেকে বঞ্চিত। এর মধ্যে তরুণেরা অন্যতম। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রতি ৮ জনের ১ জন, অন্যদিকে আরব দেশগুলোর প্রতি ৪ জনের ১ জন তরুণ বেকার। রাইডারের মতে, প্রবাসী শ্রমিকদের শোষণ ও আইনি সুরক্ষা না থাকা, লাখো মানুষকে বাধ্যতামূলক শ্রমে আটকে রাখা, শিশুশ্রম ও উদ্বাস্তু-সংকট এখনকার উদ্বেগের বিষয়। তিনি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল ঠিক করতে দুটি বিষয় বিবেচনায় রাখার তাগিদ দেন। এগুলো হলো কর্মসংস্থানের ওপর তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব ও সমাজে বৈষম্য।
ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউসুফ কালা তাঁর দেশ কীভাবে শ্রমিকদের জীবনমানে উন্নতির চেষ্টা করছে, তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাঁর দেশের সরকার সবাইকে শোভন কাজ দিতে চায়। ইন্দোনেশিয়ায় মূল্যস্ফীতি ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিবছর নিম্নতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এটা অপেক্ষাকৃত ন্যায্য ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে শ্রমিকেরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ভাগ পান এবং মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করার ফলে তাঁদের ক্রয়ক্ষমতাও ঠিক থাকে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন ভিয়েতনামের শ্রমিকনেতা এফ অ্যান্থনি। তিনি বলেন, গত এ দশকে এ অঞ্চলে গড়ে ৬ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে শ্রমিকের মজুরি সেভাবে বাড়েনি। মূল্যস্ফীতি বাদ দিলে দেখা যাবে প্রকৃত মজুরি কমেছে। এর কারণ, শ্রমিকের সংগঠন করা ও দর-কষাকষির সুযোগ নেই।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বহু দেশ আইএলওর শ্রম অধিকারবিষয়ক কনভেশনগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে এফ অ্যান্থনি বলেন, এ অঞ্চলের ৪৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ১৪টি আইএলওর সব কটি কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করেছে। ভারতে শ্রমিকদের ঔপনিবেশিক মানসিকতায় দেখা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ায় মজুরি বাড়াতে শ্রমিকদের কঠোর আন্দোলন করতে হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রমিকদের সমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ নামানো হয়েছে। বাংলাদেশে নিয়োগপত্র না থাকায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত অনেকে ক্ষতিপূরণ পাননি। তিনি শান্তির জন্য সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন।
ইন্দোনেশিয়ার কর্মসংস্থানমন্ত্রী হানিফ ধাকিরি বলেন, বৈশ্বিক শ্রমে এ অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ফলে এ অঞ্চলে বর্তমান বাস্তবতায় এসডিজি বাস্তবায়নে নতুন কৌশল নিতে হবে।আইএলওর এ সম্মেলন আগামী শুক্রবার শেষ হবে। বাকি তিন দিনের বিভিন্ন অধিবেশনে ডিসেন্ট ওয়ার্ক, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সামাজিক সংলাপ, শ্রমিকের দক্ষতা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হবে।