ক্রিপ্টোকারেন্সি কেন এত জনপ্রিয়
- মো. সুরুজ কবির
ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের সাংকেতিক ডিজিটাল মুদ্রা। এটি শুধু ইন্টারনেট জগতেই ব্যবহার করা হয়। বাস্তবে এ ধরনের মুদ্রার কোনো অস্তিত্ব নেই। এটি এমন এক ধরনের মুদ্রা যা কোনো দেশের সরকার ছাপায়নি বরং এই অর্থ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দ্বারা ছোট ছোট কোডের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে।
১৯৫০ এর দশকে ডাইনার্স ক্লাব নামের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছিল। ১৯৭০ সালের পর থেকে ক্রেডিট কার্ড অর্থনৈতিক ব্যবসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। বর্তমানে আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আদান প্রদান করে থাকি। এসব প্রতিষ্ঠান সার্ভিস চার্জ হিসেবে বেশ কিছু টাকা কেটে রাখে। আর্থিক ব্যাংক আবার সরকার বা ক্রেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে সমগ্র অর্থনীতি কয়েকজন মানুষের হাতে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। এছাড়া লেনদেনের ক্ষেত্রে অর্থের মালিক গোপন তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয় এবং নানা ধরনের বিধি নিষেধে আটকে পড়ে। অনলাইনে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি আরো ঝুকিপূর্ণ। কম্পিউটারে যোগাযোগ প্রচলন হওয়ার পর থেকে মানুষ এমন এক ধরনের মুদ্রার স্বপ্ন দেখে আসছে যা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পরিচালিত হবে।
১৯৮৩ সালে ডেভিট জম ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা আদান প্রদানের ধারণা প্রবর্তন করেন। ১৯৯৫ সালে ডিজি ক্যাশের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সির ইলেকট্রনিক প্রথমিক ভিত্তি প্রবর্তন করেন। তারপরেও লেনদেনের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার কার্যকর পদ্ধতির অভাব ছিল। দীর্ঘদিন যাবৎ এই সমস্যার সমাধান কেউ করতে পারছিল না। ২০০৮-২০০৯ সালের দিকে সাতোশি নাকামোতো এ সমস্যার সমাধানে সফল হন। তাই তাকে ক্রিপ্টোকারেন্সির জনক বলা হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট খুলতে ব্যক্তির তথ্য পরিচয়পত্রের দরকার হয় না। ক্রিপ্টোকারেন্সির সরাসরি এক ওয়ালেট থেকে অন্য ওয়ালেটে টাকা জমা হয়। এই টাকা লেনদেনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক কোনো খবরদারি করতে পারে না। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কোনো তৃতীয় পক্ষ থাকে না বলে এখানে বাড়তি কোনো চার্জও নেই।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া এ ধরনের মুদ্রার সংখ্যা এখন আট হাজারের বেশি। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিটকয়েন। ১ বিটকয়েনের বিনিময়মূল্য বাংলাদশী টাকায় ৪০ লাখ ৪২ হাজার নয়শত চার টাকা।
বর্তমান বিশ্বে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার বাজার প্রায় দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্লকচেইন হলো তথ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি তথ্য চেইনের মতো করে সংরক্ষণ করা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। এমনিতে এই মুদ্রার লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে থাকে না। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দুজন নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করে সরাসরি এই লেনদেন করে। এজন্য এ লেনদেন দিন দিন সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে এদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো অপরাধ নয়। তবে বাংলাদেশে বিটকয়েন লেনদেন অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্বের কোনো দেশ ক্রিপ্টোকারেন্সিকে স্বীকৃতি দেয়নি কিন্তু বর্তমানে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ার কারণে জাপান, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।