টাইগার মুস্তাফিজ
রবিউল কমল: বাংলাদেশ ক্রিকেটের নয়া বিপ্লব – সৌজন্যে তরুণ টাইগার মুস্তাফিজুর রহমান। বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম সারির কিছু দলকে একাই বিধস্ত করেছেন কুড়ি বছরের এই বাঁহাতি পেসার। জানান দিয়েছেন নিজের ক্ষমতার। বিনিময়ে তার পাশে যোগ হয়েছে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ উপাধি। তার নিয়ন্ত্রিত লাইন, লেনথ, গতির হেরফেরের পাশাপাশি অসাধারণ সুইংয়ের কাছে বোকা বনেছেন বিশ্বের বাঘা-বাঘা সব ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ ক্রিকেটর এই টাইগারের ক্রিকেট জীবনের সুচনা ঠিক টাইগারের মতই। সিনেমার গল্পের মত রোমাঞ্চকর তাঁর উঠে আসার কাহিনী।
মাত্র বছর তিনেক আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটবোডের পেস একাডেমিতে ট্রায়াল দেন তিনি। সীমান্তবতী সাতক্ষীরার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা মুস্তাফিজের তখনও রাজধানির কোনো ক্লাবে খেলা হয়নি। মুস্তাফিজের এই যাত্রা যেন খালি পায়ে মাউন্ট এভারেস্ট চড়ার মত।
কিন্তু প্রথম পরীক্ষাতেই বাজিমাত, নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হন তিনি! তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি। শুরুতেই কোচের নজরে পড়ে যান। সেখানে বোলিংয়ের টেকনিক্যাল ত্রুটি শুধরে আরও আত্নবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন তিনি। সেই সুবাদেই ডাক পড়ে ২০১৪ সালের অনূদ্ধ ১৯ বিশ্বকাপে। সেখানে আট উইকেট নিয়ে লন্ডভন্ড করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। এভাবে নিজের জাত চেনান তিনি। তারপরে এ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বিমানে চড়া ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
ক্যারিবিয়ানদের সাথে খেলার পর নিজের বোলিংকে আরো বৈচিত্রময় করেন মুস্তাফিজ। শুরেুতে বোলিংয়ের গতি আহামরি না থাকলেও ক্রমশ বুঝতে পারেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হতে হলে গতি আরো বাড়াতে হবে। এর পরেই নিজের পরিশ্রমে বলের গতি বাড়ান তিনি। আর ফলস্বরূপ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দ্রুত ২৬ উইকেটের মালিক হয়ে যান!
এরপর কি আর এমন সোনার ছেলেকে আটকে রাখা যায়? ব্যস, নিবাচকরাও ডাক দেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মাধ্যমে আন্তজাতিক ক্রিকেট মঞ্চে। তারপরেই ভারতের বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে তার পারফরম্যান্স হার মানায় সিনেমার চিত্রনাট্যকেও। গোটা সিরিজেই ভারতীয় শিবিরে ছিল মুস্তাফিজ আতঙ্ক। দুই ম্যাচে ১১ উইকেট – যা এর আগ আর কোনো বোলারের ছিল না।
পাকিস্তানি বোলার মোহাম্মদ আমিরের ভক্ত মুস্তাফিজ। আমিরকে নিয়ে বিতর্ক নয় বরং আমিরের থেকে অনুপ্রেরণা খোঁজেন মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজের কল্যাণেই ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সিরিজ জয়, তারপর দক্ষিণ আফ্রিকা। আপাতত মুস্তাফিজকে ঘিরেই আবতিত বাংলাদেশের ক্রিকেট। তবে উৎসব নয়, নিজের ক্যারিয়ারের উপরই ফোকাস করতে চান মুস্তাফিজ। বিশ্ব ক্রিকেটে হয়ে উঠতে চান ওয়াসিম আকরাম এবং গ্লেন ম্যাকগ্রার যোগ্য উত্তরসূরী।
দি প্রমিনেন্টের পক্ষ থেকে সতত শুভ কামনা এই তরুণ পেসারের জন্য।