বিস্তারিত ব্রানসন
স্কুলের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তাদের একজন তিনি।জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে পেরিয়েছেন নানা চড়াই উৎরাই। তিনি ব্রিটিশ ব্যাসায় মোগল স্যার রিচার্ড চার্লস নিকোলাস ব্রানসন; যাকে তামাম দুনিয়া চেনেন রিচার্ড ব্রানসন নামে। বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশিত ২০১৫ সালের বিলিয়নিয়ারের তালিকা অনুযায়ী রিচার্ড ব্রানসন হলেন যুক্তরাজ্যের চতুর্থ ধনী নাগরিক। তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।এই ব্রিটিশ ভদ্রলোক বিখ্যাত ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর মালিকানা রয়েছে চার শতাধিক কোম্পানিতে। এ পর্যায়ে আসতে তাঁকে বিস্তর কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। প্রায় শূন্য থেকে গড়ে তোলেন তার বিশাল ব্যবসায়িক সম্রাজ্য।ব্রানসনের বিস্তারিত জানাচ্ছেন মারুফ ইসলাম ।
প্রেম ও বহিস্কারের গল্প :
বর্তমান সময়ে যাদেরকে উদ্যোক্তা আইকন ভাবা হয় সেই বিল গেটস, স্টিভ জবস বা মার্ক জাকারবার্গের মতো ব্রানসনও ড্রপ আউট। তিনি স্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি।
স্কুলের হেডমাস্টারের মেয়ের সাথে প্রেম করার অপরাধে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারপর তিনি একটা ‘সুইসাইড নোট’ লিখেছিলেন। যখন সেটা পাওয়া গেলো ততোদিনে তিনি বিষয়টা বেমালুম ভুলে গেছেন।
সফল ড্রপ আউট :
স্কুল ছাড়াতে বাধ্য হওয়ার পর তিনি ‘স্টুডেন্ট’ নামে একটা ম্যাগাজিন বের করেছিলেন।। বড় বড় বিজ্ঞাপনও নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। নিজের এই উত্থানের গল্প তিনি লিখেছেন ‘লুজিং মাই ভার্জিনিটি’ নামের আত্মজীবনীমূলক বইয়ে।
ওই বই থেকে জানা যায়, ১৯৭০ সালের দিকে তিনি গানের রেকর্ড মেইলের মাধ্যমে গ্রাহকের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৭২ সাল নাগাদ এই ব্যবসা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে তিনি গানের রেকর্ডের স্টোর প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্টোরই পরবর্তী সময়ে ভার্জিন মেগাস্টোরে রূপ নেয়। ১৯৮০ সালের দিকে ব্রানসনের রেকর্ড ব্যবসা ও মেগাশপের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। ১৯৮২ সালে তিনি ভার্জিন আটলান্টিক ও ভার্জিন রেকর্ডস মিউজিক লেভেল প্রতিষ্ঠা করেন।
খেয়ালী ভীষণ :
নিজে খুবই খেয়ালী ধরণের একজন মানুষ, খুব রোমাঞ্চপ্রিয়ও। পাল তোলা নৌকা করে পাড়ি দিয়েছেন আটলান্টিক মহাসাগর! আবার গ্যাস বেলুনে করে ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর একপ্রান্ত।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রতিটা ক্ষণ উপভোগ করি। এটাই আমার স্বভাব। আমাকে আজকেই এটা করতে হবে এমন কোনো কিছু আমি করি না বা আমার মধ্যে এমন অনুভূতিও আসেনি কখনও।’
বিলাসী ব্রানসন :
তাঁর বিলাসী জীবনের অনবদ্য নজির হয়ে আছে ক্যারিবীয় দ্বীপের একটি রিসোর্ট। এর নাম ‘নেকার আইল্যান্ড’। এই রিসোর্টটি যে দ্বীপে সেটি ব্রানসন কিনেন ১৯৭৮ সালে। রেকর্ড পরিমাণ ১৮০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যে এটি কিনেছিলেন তিনি। ওখানে নিজের জন্য তিনি একটি বাড়ি বানান, যেখানে ব্রানসন বছরে কমপক্ষে দুই মাস অবস্থান করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে সেখানে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট খোলেন, যেটা এখন পর্যন্ত বিখ্যাত ও ধনী অতিথিদের সমাগমে মুখর হয়ে থাকে।
এখানে ছুটি কাটিয়েছেন এমন বিখ্যাত ব্যাক্তির মধ্যে আছেন প্রিন্সেস ডায়না, হলিউড অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট, এডি মারফি, গীনা ডেভিস, কেট মস ও রবার্ট ডি নিরো। আর রাজনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছেন নেলসন ম্যান্ডেলা, জিমি কার্টার ও টনি ব্লেয়ার।
গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ তার বান্ধবীকে বিয়ে করেন ২০০৭ সালে। ব্যাপক ঘটা করে তারা এই দ্বীপে বিয়ের আয়োজন করেছিলেন।
শিক্ষকের কথাই সত্যি হলো :
ব্যারিস্টার এডওয়ার্ড জেমস ব্রানসন ও ইভা হান্থলি ব্রানসনের বড় ছেলে রিচার্ড ব্রানসনের জন্ম ১৯৫০ সালের ১৮ জুলাই, যুক্তরাজ্যের ব্ল্যাকআর্থে। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে ব্রানসনের একাডেমিক ফল এতটাই হতাশাজনক ছিল যে তার শিক্ষক বলেছিলেন, ভবিষ্যতে হয় তোমাকে জেলে পঁচে মরতে হবে নতুবা তুমি একজন কোটিপতি হবে। শিক্ষকের শেষ কথাটিই সত্যি হয়। ব্রানসন ১৬ বছর বয়সে এসে স্কুল ছেড়ে দেন। তবে পরবর্তী সময়ে বিজনেস কমিউনিকেশনে ব্যাপক প্রতিভা দেখান। এখন পুরো বিশ্ব তাঁকে এক নামে চেনে।
যারা আগামী দিনের উদ্যোক্তা হতে চান, নতুন কিছু করতে চান, এগিয়ে যেতে চান সৃজনশীল কাজ দিয়ে বা অর্জিত সম্পদ দিয়ে মানব কল্যাণে কিছু করতে চান; তাদের জন্য একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব রিচার্ড ব্রানসন।
তথ্যঋণ : উইকিপিডিয়া, দ্য গার্ডিয়ান এবং ব্রানসনের আত্মজীবনী লুজিং মাই ভার্জিনিটি ।
ইংরেজি থেকে নির্বাচিত অংশের ভাষান্তর মারুফ ইসলাম।