গণিতই আত্মবিশ্বাসী করেছিল সেগ্রেই ব্রিনকে

গণিতই আত্মবিশ্বাসী করেছিল সেগ্রেই ব্রিনকে

সেগ্রেই ব্রিন। সার্চ ইঞ্জিন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন। তাঁর আইকন হয়ে ওঠার গল্প শোনাচ্ছেন মারুফ ইসলাম


মা-বাবা দুজনেই গণিত অন্তপ্রাণ। বংশগতিবিদ্যার নিয়ম মেনে ছেলের অন্তরেও তাই আসন গেড়ে বসেছিল গণিত। এই গণিতপ্রীতিই কী জীবনে সাফল্য এনে দিয়েছে সেগ্রেই ব্রিনের? ‘তা ঠিক জানি না, তবে গণিত ক্লাসে আমি সব সময় প্রথম হতাম, এটিই আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়।’ বলেছেন গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সেগ্রেই ব্রিন।

১৯৭৩ সালের ২১ শে আগস্ট রাশিয়ার (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) মস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন সেগ্রেই ব্রিন। পুরো নাম সের্গেই মিকায়লোভিচ ব্রিন। তাঁর বয়স যখন ৬ বছর তখন পরিবারের সঙ্গে অভিবাসী হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন।

ছোটবেলা থেকেই গণিত ভালোবাসেন ব্রিন। না বেসে সম্ভবত উপায় ছিল না। কারণ বাবা মাইকেল ব্রিন ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক এবং মা ইউজেনিয়া ব্রিন ছিলেন একজন গনিতবিদ এবং প্রকৌশলী। এই পারিবারিক পরিবেশ তাকে গণিত আর কম্পিউটারের প্রতি করেছিল দুর্বল। ব্রিন যখন ৮ পেরিয়ে ৯ বছরে পা দেয়, তখন জন্মদিনের উপহার হিসেবে তার বাবা তাকে কমডোর-৬৪ নামের একটি কম্পিউটার কিনে দেন। তারপর যা হয় আরকি, সারাদিন ছোট্ট ব্রিন পড়ে থাকত কম্পিউটার নিয়ে।

ছোটবেলার সেই নেশা কখনো পিছু ছাড়েনি ব্রিনের। তাই বড় হয়ে পড়ালেখার বিষয় হিসেবেও বেছে নেন কম্পিউটার আর গণিতকে। ১৯৯০ সালে তিনি ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন কম্পিউটার ও গণিত বিষয় নিয়ে। ১৯৯৩ সালে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে স্নাতকোত্তর শেষ করেন এবং যথারীতি পিএইচডির জন্য ভর্তি হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই। তাঁর পিএ্চডি অবশ্য আজ অবধি শেষ হয়নি। গুগলে তাঁর বিস্তৃত কর্ম পরিধির জন্য ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে যাই হোক এম্প্রেশা ইনস্টিটিউট তাকে একটি সম্মানসূচক এমবিএ ডিগ্রি প্রদান করেছে।

এসব ডিগ্রিকে অবশ্য থোরাই কেয়ার করেন ব্রিন। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নাম উঠেছে তাঁর। ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ইতিমধ্যেই ৩৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। কতশত ডিগ্রিধারী এখন তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে!

sergey-brinগুগলের শুরুটা অবশ্য এই পিএচডি পড়াকালীন সময়েই। তখন তিনি আর তাঁর বন্ধু ল্যারি পেজ তাদের এক সহপাঠীর বাড়ির গ্যারেজে একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করেন।সময়টা ১৯৯৭ সাল। সে বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গুগল ডটকম নামে একটি ডোমেইন নিবন্ধন করেন তাঁরা। মাত্র চার মাসের মধ্যেই জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে পরিচিতি পায় গুগল।

শুরুটা গ্যারেজে হলেও দুই বছরের মাথাতেই সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেজ তাদের কোম্পানি স্থানান্তর করে নিয়ে যান ১৬৫, ইউনিভার্সিটি এভিনিউ-পালো আল্টো ঠিকানায়। শুরুতে কোম্পানি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ছিল না দুবন্ধুর কারো কাছেই। তখন তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান সান মাইক্রো সিস্টেমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন্ডি বেথটোশেইম। কোম্পানি হওয়ার আগেই তিনি ব্রিন ও পেজকে এক লাখ ডলার দেন। তিন বছরের মাথায় এর প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৭০০ ডলারে! এভাবে ধীরে ধীরে গুগল এর জনপ্রিয়তা হিমালয়ের উচ্চতায় পৌঁছে যায়। সেই সঙ্গে সঙ্গে সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেজ হয়ে যান প্রযুক্তি দুনিয়ার আইকন।

আপাতত আলোচনা সের্গেই ব্রিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক। আরেকদিন শোনা যাবে ল্যারি পেজের গল্প।

তথ্যঋণ : উইকিপিডিয়া, ফোর্বস, টেড ও বিজনেস ইনসাইডার। favicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment