কেঁচো সারে কীর্তিমান মামুন
- সজীব হোসাইন, রংপুর
চাকরির সন্ধানে হন্যে হয়ে খুঁজেও মেলেনি সোনার হরিণ সরকারি চাকরি। অবশেষে শিক্ষিত যুবক মামুন জীবন যুদ্ধে হতাশ না হয়ে নিজেই স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজেছেন।পেয়েছেন সাফল্যের দেখা। কীভাবে? সেই গল্প শুনতে একদিন সরেজমিন হাজির হই মানুনের সামনে।
তিনি জানান, একদনি বাবার ধান ক্ষেত পরিদর্শনে আসে কাউনিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক। ওই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ আর মামুনের সাহসী উদ্যোগে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির পাশাপাশি স্বল্প ব্যয়ে পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার উৎপাদনে এলাকায় অনন্য নজির গড়েছেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সফল কেঁচো সার উৎপাদক মামুনুর রশিদ।
মামুন বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক তাকে পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার উৎপাদনে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। তার পরামর্শে আর অল্প খরচে এ সার উৎপাদন করে একদিকে যেমন প্রচুর আয় করা যায় অন্যদিকে কৃষিতে ব্যাপক অবদান রাখা যায়। এ স্বপ্ন নিয়েই এই পথে হাঁটতে শুরু করেন তিনি।
২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রথম তিনি আইএপিপি প্রকল্পের আওতায় দলভুক্ত হয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে কৃষি বিভাগ থেকে তাকে ৪শ কেঁচো দেয়। এরপর পরীক্ষামূলকভাবে নিজ বাড়ির উঠানের এক কোনায় কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ শুরু করেন মামুন। ওই সার নিজেদের জমিতে প্রয়োগ করে ভালো ফলাফল পেয়ে ২০১৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে সার উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
মামুনুর রশিদ এখন সার উৎপাদক হিসেবে কাউনিয়ায় রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তাকে অনুসরণ করে অনেক কৃষক এ সার উৎপাদনে এগিয়ে আসছে।
মামুন আরো জানান, এ পর্যন্ত তার খামারে ৫০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করেছেন। এর মধ্যে তার নিজের জমিতে ১০ মেট্রিক টন আর পুকুরে মাছের খাবার হিসেবে ৫ মেট্রিক টন সার ব্যবহার করেন। বাকি ৩৫ মেট্রিক টন সার বাণিজ্যিকভাবে চাষীদের কাছে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে তার আয় হয় সাড়ে তিন লাখ টাকা।
জানা গেছে, তার খামারে ৩০টি রিংএ ৬০ কেজির মতো কেঁচো সার উৎপাদন প্রক্রিয়া চলছে। ৬০ কেজি কেঁচো বিক্রয়ের জন্য মজুত রয়েছে। বর্তমানে বাজার থেকে প্লাসটিকের ছোট ছোট বস্তা এনে ১০ কেজি করে সার প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছেন।
খামার ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, মামুন কয়েকজন শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে সার প্রক্রিয়াজাত করছেন। তার উৎপাদিত সার এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এখন এলাকায় মানুষ তাকে ‘কেঁচো মামুন’ হিসেবে ডাকেন এবং চিনেন।
এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা এসে তার সার কিনে নিয়ে জমিতে প্রয়োগ করছে। মামুনের এ সাফল্য দেখে এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক যুবকও কৃষক কেঁচো সার উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান জানান, মামুনুর রশিদ এখন সার উৎপাদক হিসেবে কাউনিয়ায় রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তাকে অনুসরণ করে অনেক কৃষক এ সার উৎপাদনে এগিয়ে আসছে।
কেঁচো সারের গুণাগুণ সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কম খরচে উৎপাদিত এ সার একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে ফসল উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা, পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস হয়েছে। একইসঙ্গে ফসলের রোগ প্রতিরোধ, গাছ দ্রুত বৃদ্ধিতে ও মাটির তাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এ কারণেই কেঁচো সারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।’