ত্রিশের পরে সফল যাঁরা

ত্রিশের পরে সফল যাঁরা

সফল হওয়া ব্যক্তিদের পেছনে থাকা ব্যর্থতার গল্পগুলো সফলতায় ঢেকে যায়। আর এই সফল হওয়ার চেষ্টা যেন চলতে থাকে জন্ম নেওয়ার পর থেকেই। ঠিক কোন বয়সে সফলতা আসবে বলাটা মুশকিল। তাই ৩০ বছর বয়সের মধ্যে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যদি ব্যর্থতার রসদ না থাকে তাহলে আপনি হয়তো কিছুটা পিছিয়েই রয়েছেন। আর এই ব্যর্থতাকে সফলতার পাথেয় করে ত্রিশের এপারে সফল যারা জেনে নেওয়া যাক, সফল এই নায়কদের কথা। লিখছেন সজীব হোসাইন


জ্যাক মা

  • 1যার নাম শুনলেই ভেসে উঠে আরব্য রজনীর আলীবাবার চল্লিশ চোরের গল্প। রূপকথার জালে জড়ানো সেই গল্পের মতোই রোমাঞ্চ জাগায় জ্যাক মা’র প্রতিষ্ঠিত আলীবাবা। এ যেন আধুনিক প্রযুক্তির রূপকথার আলীবাবা। এখন তার সম্পদের মূল্যমান প্রায় ২২.৫ বিলিয়ন ডলার। অনলাইন বিক্রেতাদের কাছে নামটি অ্যামাজন ও  ই-বে’র মত সুপরিচিত নাম। আর এই সফলব্যক্তি তিন-তিনবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। ত্রিশ বছরের আগে কোনোদিন কম্পিউটারই স্পর্শ করেননি তিনি। জীবনে কোনোদিন একলাইনও কোডিং করেননি জ্যাক মা। ত্রিশটির মতো চাকরিতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। ৩১ বছর বয়সে জ্যাক মা প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন ‘চায়না ইয়োলো পেজ’। প্রথম তিন বছরে উপার্জন করেন ৮ লাখ ডলার। পরবর্তীতে ৩৫ বছর বয়সে আলীবাবার গোড়াপত্তন করেন। তিন বছর পর্যন্ত কোনো লাভের মুখ না দেখা আলীবাবার ভাগ্যে বর্তমানে কি আছে সেটা সবারই জানা। আলীবাবা শুধু বিশ্ববাজারে নয় বাংলাদেশের অনলাইন বাজারেও পরিচিত নাম। কারণ চলতি বছরে তারা ঘোষণা দিয়েছে আলীবাবা বাংলাদেশের বাজারেও চলে আসতে পারে।

.

জ্যান কুম

  • 2সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেক পরিচিত মুখ জ্যান কুম। দীর্ঘ নয় বছর চাকরি করেছেন ইয়াহুতে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হয়েছিলেন জ্যান কুম। অতঃপর ফেসবুকে চাকরির জন্য আবেদন করেও হয়েছিলেন ব্যর্থ। প্রত্যখ্যাত হয়ে যোগ দিলেন ইয়াহুতে। ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছিল সেখানেই। কাজ করতে করতে পরিচয় ঘটে হোয়াটসঅ্যাপের আরেক প্রতিষ্ঠাতার সাথে। ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কাজ শুরু করেছিলেন ৩৩ বছর বয়সে। ভাগ্য পরিবর্তনে জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তাঁকে। ৫ বছর পর যে ফেসবুক কোম্পানি থেকে চাকরিতে প্রত্যখ্যাত হয়েছিলেন সেই ফেসবুকই ১৯ বিলিয়িন ডলারে কিনে নেয় হোয়াটসঅ্যাপকে।

.

স্যাম ওয়ালটন

  • 4ওয়ালমার্টের কথা কে না জানে ? ওয়ালমার্ট বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটন ছিলেন আরেক চেইন স্টোর  জেসি পেনি’র সামান্য একজন কর্মচারী। শুরুটা করেছিলেন শ্বশুরমশায়ের কাছ থেকে ২০ হাজার ডলার ঋণ নিয়ে। প্রথম থেকেই তার মন্ত্র, ‘অল্প দাম, বিক্রি বেশী’। আজকের দিন পর্যন্তও তাদের মূলমন্ত্রে একটুকুও বিচ্যুতি ঘটেনি। স্যাম ওয়ালটন যখন শুরু করেছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৪ বছর। আর এই ওয়ালমার্টকে নিয়েই হয়তো এখন আলাদা একটি বই লেখা সম্ভব।

.

টিম ওয়েস্টারগ্রেন

  • 5ইন্টারনেট ভিত্তিক রেডিও স্টেশন প্যান্ডোরা। এর প্রতিষ্ঠাতা ওয়েস্টারগ্রেন ছিলেন একজন যাযাবর সংগীতজ্ঞ। গান লিখতেন মনের সুখে, সুর বাঁধতেন ইচ্ছে মতোন। তিনিও উদ্যোক্তা হবার পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন ৩৫ বছর বয়সে। আর সেই কোম্পানি লাভের মুখ দেখল ৩৭ বছরে এসে। ৫০ জন কর্মচারীকে বেতন দিতে পারেননি মাঝের দুইটি বছর। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার এক আশ্চর্য সম্মোহনী ক্ষমতা ছিল ওয়েস্টারগ্রেনের। ফলে শুধু তাঁর মুখের দিকে চেয়ে বিনা বেতনে কাজ করে গেছেন কর্মচারীরা। আর বর্তমান সময়ে তিনি একজন সফল প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।

.

রিড হেস্টিংস

  • 6জীবন যুদ্ধের আরেক সফল সৈনিক রিড হেস্টিংস। সুইজারল্যান্ডে ইংলিশ পড়াতেন। ছিলেন সেনাবাহিনীতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরিয়ে, চাকরিতে ঢোকার আগে বিচিত্র এক জীবন যাপন করেছেন তিনি। শুরু করেছিলেন ‘পিউর সফটওয়্যার’ নামের একটি সফটওয়ার ফার্ম দিয়ে। বসয় তখন ৩১ বছর। নিরলস কর্মপ্রচেষ্টায় সাফল্যের মুখ দেখেন অচিরেই। দুই বছরেই কোম্পানিতে লাভের অঙ্ক দ্বিগুণ করেন। আর ৬ বছর পরে ভালো রকম ইনভেস্টমেন্ট পেয়ে শুরু করলেন নেটফ্লিক্স। আর এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের মানুষের বিনোদনের ধরনটাই পাল্টে দেন রিড হেস্টিংস।

বাংলায় ‘পাহাড় ঠেলা’ কথাটি বেশ প্রচলিত। অর্থাৎ প্রায় অসম্ভব কাজের পেছনে লেগে থাকা। অনেকেই বলবেন, সময় নষ্ট করছেন কিন্তু সফল লোকদের এই কাজটা খুব প্রিয়। তাঁরা অসম্ভবকে সম্ভব করতে ভালোবাসেন। আর সে কারণেই দুনিয়ায় প্রতিদিন নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে, যা মানুষের জীবনকে আগের চেয়ে আরো সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের মাঝে প্রচলিত বধ্যমুল প্রাচীন ধ্যান-ধারণা রয়ে গেছে ৩০ বছর বয়সের পর জীবনে আর নতুন করে কিছু শুরু করার উদ্যোগ থাকে না। কিন্তু সফল মানুষদের কাজে তাঁদের বয়সের ছাপ সচরাচর পড়ে না। তাঁরা চিন্তাভাবনায় বয়সের চেয়ে এগিয়ে থাকেন। তাই ত্রিশ ভীতি নয়, নিজের মেধা আর শ্রম দিয়ে সামনে বাড়ুন। সফলতা আসবেই।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment