হামিদুরের ‘ভিন্ন রকম দোকান’
- শাহজাহান নবীন, কুষ্টিয়া
সারিবদ্ধ অনেক গুলো দোকান। হাজারো মানুষের পদচারণা। অনেকেই কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত। সব দোকানে রয়েছে দোকানদার। ক্রেতা আসছেন দরকষাকষি করে কিনছেন তাদের পছন্দের পণ্য। তবে এত গুলো দোকানের মধ্যে দেখা মিললো ‘ভিন্ন রকম দোকান’। সাইনবোর্ডে লেখা নামটি পড়ে কাছে গিয়ে দেখি আজব এক পদ্ধতিতে চলছে দোকানটি। পছন্দের জিনিস নেওয়ার পর তাতে লাগানো মুল্য দোকানের সামনে রাখা বাক্সের মধ্যে রাখছেন ক্রেতারা। কোনো দরকষাকষি নেই, নেই কোনো চুরি যাওয়ার ঘটনা। মনেই হবে না এটা বাংলাদেশের কোনো দোকান। উন্নত রাষ্ট্রের বা উন্নত শপিং সেন্টার গুলোর আদলে চলছে টিমটিমে এই ছোট্ট দোকান। সেটিও আবার মফস্বল শহরে। আর দোকানী ছাড়াই চলছে কুষ্টিয়ার কুমারখালির হামিদুর রহমানের ভিন্ন রকম দোকান।
মোবাইল ফোনে হামিদুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান- প্রায় দেড় বছর ধরে এভাবে দোকানটি চালাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক হামিদুরের অভাবের সংসারে সবার চাহিদা পুরণ করতে দোকানের উপর ভরসা করা কঠিন। তাই তিনি রাস্তায়, বাসে ও বাজারে বাজারে ঘুরে রুমাল, গামছা বিক্রি করেন। আর দোকানে বসার মতো কোন লোক না থাকায় তিনি বের করেছেন দোকানী ছাড়া দোকান চালানোর এই অভিনব পদ্ধতি।
হামিদুর জানান, ‘হকারি করে যে আয় হয় তাতে সংসার চলে না। তাই দোকান দিয়েছি। দোকানে বসলে হকারি করা যায় না। যে কারণে দোকানের প্রতিটি পণ্যের গায়ে মূল্য লিখে তা টানিয়ে রাখা হয়। ক্রেতাদের পছন্দ হলে ক্রয় করা জিনিসের মূল্য দোকানের একটি নির্ধারিত বাক্সে রেখে যান।’
দোকানী ছাড়া দোকানের মালামাল চুরি বা টাকা না দিয়ে মাল নিয়ে যাওয়ার কোনো ঘটনা আজ পর্যন্ত ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
হামিদুরের কথাবার্তায় আত্মবিশ্বাসের ছাপ পাওয়া যায় প্রথম থেকেই। প্রতিবেদককে তিনি বলেন-‘আমি যদি অন্যায় করি, মানুষকে ঠকাই তাহলে আমার সাথেও অন্যায় কাজ হবে, আমাকে ঠকতে হবে। আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ভরসা রেখে সৎভাবে ব্যবসা করি। কাউকে ঠকানোর ইচ্ছে নেই। দুটো ডাল ভাত খাইয়ে সন্তান গুলোকে মানুষ করতে পারলেই আমি খুশি। দালান কোঠার স্বপ্ন নেই। হালাল আয়ের মাধ্যমে দিন পার করতে পারলেই হবে।’
জানা যায়, হামিদুল তার সাত ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তিন শতকের বসতবাড়ি ছাড়া নিজের জমিজমা বলতে কিছু নেই। প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি বিয়ে করেন। বর্তমানে তিনি কুমারখালি শহর থেকে গামছা কিনে নিজেই সেটা দিয়ে রুমাল তৈরি করেন। নিজের বানানো রুমাল বাসে, রাস্তায়, ট্রেনে যখন যেখানে পারেন বিক্রি করেন। তার রুমালে নাম রেখেছেন মেয়ের নামে ‘তায়েবা রুমাল’।