জামিলের পুকুরভরা টাকা!
- সজীব হোসাইন, রংপুর
শুধু নিজের নয় শতাধিক মানুষের ভাগ্য বদালানো এক সফল যুবক দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার জামিলুর রহমান। মেধা আর শ্রম দিয়ে আজ তিনি সফল মৎস চাষি। শতাধিক পুকুরে মাছ চাষ করে এখন তিনি কোটিপতি। শেষ চৈত্রের এক পড়ন্ত বিকেলে কথা হয় জামিলুরের সঙ্গে।
একদিন সরেজমিন…
জামিলুরের ডেরায় যখন পৌছাই তখন বিকেল। প্রাথমিক কুশল বিনিময় শেষেই আমরা জানতে চাই তার সফল মাছচাষী হয়ে ওঠার গল্প। জামিলুর জানান, ২০০০ সালের শুরুর দিকে অর্থ অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে মেসার্স লুবনা ট্রেডার্স নামের দোকানে মাছের খাবার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন জামিলুর। কিন্তু এলাকার মানুষ তখনো বুঝে উঠতে পারেনি মাছের জন্য স্বতন্ত্র খাবার রয়েছে। মানুষকে বোঝাতে না পেরে নিজেই সিদ্ধান্ত নেন মাছ চাষের। দাদার কাছ থেকে নেওয়া ১০ বিঘা পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। মাছের পোনা, খাবার, শ্রমিক মজুরী ইত্যাদি বাদ দিয়ে প্রথম বছরেই আয় হয় প্রায় দুই লক্ষ টাকা। সাহসী হয়ে উঠেন জামিলুর। সেই শুরু থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জামিলুরকে।
বর্তমানে তিনি ইজারা ও নিজেরসহ উপজেলার পার্শ্ববর্তী উত্তর জনপদের বিভিন্ন জেলায়, উপজেলার পরিত্যক্ত বড় পুকুর ও সরকারী জলমহল মিলিয়ে ৭৫ একর জমিতে ছোট বড় শতাধিক পুকুরে মাছ চাষ করছেন। আয়ের টাকায় নিজস্ব ১০ একর জমি কিনে পুকুর খনন করেছেন। বাড়ি, গাড়ি করেছেন। এছাড়া ইজারা নিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে মাছ চাষের জন্য কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে জামিলুর।
দুইশ বেকারের কর্মসংস্থান
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন প্রায় দুইশত বেকার যুবকের। এখন তার ইচ্ছে একটাই দিনাজপুর জেলাকে লিচু কিংবা ধান উৎপাদনের জন্য সারাদেশে চেনে। এর সাথে মাছকে যুক্ত করতে চান তিনি। এ জন্য নিজেই বিভিন্ন উপজেলা গিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে বেকার উৎসাহী যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। জামিলুর বলেন, পুরোদেশে দিনাজপুরের লিচু ও ধানের কদর আছে। সেদিন আর বেশী দূরে নেই যেদিন এর সাথে যুক্ত হবে দিনাজপুরের ফরমালিন মুক্ত দেশীয় মাছের নাম।
সম্প্রতি কুশদহ ইউনিয়নের পল্লী মোরলাই বিলে গিয়ে দেখা যায় মহাজজ্ঞ। ৫০ একর এলাকা জুড়ে খন্ড খন্ড বিশাল বিশাল বিল। পাশে রয়েছে পোনা মাছ বিক্রি ও সংরক্ষণ করার অত্যাধুনিক হ্যাচারি। মাছের খাবারের জন্য শত শত বস্তা মাছের খাদ্য গোডাউনে মজুদ করে রাখা হয়েছে।
হ্যাচারীর সামনে মাছ ও পোনা কিনতে আসা অগনিত মানুষ। জাল নামানো হয়েছে পুকুরে। দিনাজপুর, নবাবগঞ্জ শহর, রংপুর থেকে পাইকারী মাছ ক্রেতারা এসেছেন। ৫০ জন মৎস্য শ্রমিক ভোর রাত থেকে জাল টানা শুরু করেছে। চলবে বিকেল বিকেল ৩টা পর্যন্ত। মাছদের লাফালাফি, জাল ছিঁড়ে বেরুতে চাইছে যেন। রুই, কাতলা, মৃগেল, মনোসেক্স তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, সিলভার, কই, বোয়াল, টেংড়া, পবদা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ভরে আছে পুকুর। এ যেন পুকুরভরা টাকা!
এ বিষয়ে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিক জানান, জামিলুর এলাকার একজন সফল কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী মৎস চাষী। তিনি দিনাজপুরবাসীর সুনাম বয়ে আনছেন। অপরদিকে নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, নবাবগঞ্জের সেরা মৎস্য চাষি জামিলুর ইসলাম। আমি নিয়মিত তাঁর কাছে যাই। বিভিন্ন পরামর্শ দেই।