সেই স্কুল পলাতকরা এখন কে কোথায় ?
- মো. সাইফ
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কি খুবই জরুরী? সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী হতে কি পাঠ্য-পুস্তকময় কেতাবি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতেই হবে? প্রশ্নটির উত্তর অন্য কোনোভাবে খুঁজে নেওয়া যায়।
মানুষের প্রচলিত বিশ্বাস, ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, দারুণ ফলাফল নিয়ে পাশ করা এবং অতঃপর একটি নিশ্চিন্তের চাকুরি-ব্যাস এটাই জীবনের ‘আল্টিমেট’ সাফল্য! তবে কেউ কেউ প্রথা ভাঙেন। প্রথা ভেঙে ভিন্ন কিছুকে আঁকড়ে ধরে নতুন কিছু করে ফেলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে যেখানে স্বশিক্ষার গুণটাকেই বেশি কাজে লাগান তারা। এমনই কয়েকজন স্কুল-কলেজ পলাতকদের নিয়ে আজকের আয়োজন।
রিচার্ড ব্র্যানসন
এই মানুষটির সম্পদের পরিমান প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারওয়েজ, ভার্জিন মোবাইল, ভার্জিন রেকর্ড এবং ভার্জিন ব্র্যান্ডের উদ্যোক্তা তিনি। অথচ ব্র্যানসন হাইস্কুলের গন্ডিই পার করতে পারেননি। ১৬ বছর বয়সে পড়ালেখা ছেড়ে দেন। শুধু তাই নয় তার একাডেমিক ফলাফলও ছিল খুবই হতাশাজনক।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত না হতে পারাটা তার বিখ্যাত ধনী হয়ে উঠার পিছনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। যদিও তিনি মনে করেন শিক্ষার অবশ্যই গুরুত্ব রয়েছে। তিনি আশাবাদী স্কুল ঘরে শুধুই মুখস্থ বিদ্যা এবং চাকরীজীবী হওয়ার স্বপ্ন নয়; এখানে শিক্ষার্থীদের শেখানো হবে উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প!
.
ডেভ থমাস
ডেভ থমাস হচ্ছেন ফার্স্টফুড খাবারের এক সাম্রাজ্য ‘ওয়েন্ডিস’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬৯ সালে ওয়েন্ডিসের প্রথম আউটলেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ এই চেইনশপের মালিক ডেভ থমাসের সর্বমোট সম্পদের পরিমান ৯৯ মিলিয়ন ডলার।
অথচ প্রথম জীবনে দারুণ অর্থ-সংকটে ছিলেন তিনি। হাইস্কুল ছেড়েছেন ফুলটাইম চাকুরি করবেন বলে। শেষ পর্যন্ত পড়ালেখাটা হয়নি তবে রেস্টুরেন্টের সেই প্রথম চাকুরি থেকে নিরলস পরিশ্রমে আর স্বশিক্ষার জোরে হতে পেরেছেন মিলিওনিয়ার!
.
ডেভিড গ্রিন
হবি-লবি একটি চারুকলা ও কুটির শিল্পের দোকান। যার প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড গ্রিন। ১৯৭০ সালে ৬০০ ডলার ঋণ করে এই দোকান দিয়েছিলেন তিনি। আজ তার গড় আয় ৬ বিলিয়ন ডলার !
ডেভিড গ্রিন হাইস্কুল পর্যন্ত পড়লেও কলেজে পা রাখেননি উদ্যোক্তা হবার নেশায়। আজ তার হবি-লবি হয়েছে সুপরিচিত, বেড়েছে পরিসর। দাতা হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। কোম্পানির মোট আয়ের একটি বিশাল অংশ তিনি দান করেন বিভিন্ন সংগঠনে। অথচ কলেজ পলাতক গ্রিনকেই ঋণ করে শুরু করতে হয়েছিল ব্যবসায়।
.
ল্যারি এলিসন
ওরাকল কোম্পানির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে একবার নয় দুই দুইবার কলেজে পড়তে পাঠানো হয়েছিল। ‘ব্যাকবেঞ্চার’ এলিসনকে জোর করে কলেজমুখী শিক্ষায় বেঁধে রাখা যায়নি। কিন্তু তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ কত সেটা শুনলে একটু অবাক হয়েই যেতে হয়। ৫৪ বিলিয়ন ডলার!
সিআইএ’র জন্য ডাটাবেজ তৈরির কাজ করেছিলেন। এরপর ১৯৭৭ সালে দুইজন সহযোগী নিয়ে ‘সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮২ সালে এটিই ওরাকল সিস্টেম কর্পোরেশনে রুপ নেয়। সম্পদশালী হয়ে উঠা তার জীবনের লক্ষ্য ছিল না বরং তিনি এমন এক কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন যেখানে তিনি কাজ করে আনন্দ পাবেন।
.
কেভিন রোজ
এখনো ৪০ হয়নি বয়স। তিনি অনলাইন ভিত্তিক উদ্যোক্তা। ‘রিভিশন-থ্রি’ এবং ‘পোউন্স অ্যান্ড মিল্ক’ কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তবে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন ‘ডিগ’ এর সাথে সম্পৃক্ততার কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার সুযোগ পান তিনি। কিন্তু দুই বছরের মাথায় সব ছেড়ে দেন। বর্তমানে তিনি অনলাইন ভিত্তিক উদ্যোগের সাথে কাজের পাশাপাশি কাজ করছেন টনি হক ফাউন্ডেশনে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আছেন হডিনিকে। এছাড়া পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন গুগল ভেঞ্চারে!
.
মাইকেল ডেল
আমরা আজ যে ডেল পিসি-ল্যাপটপ ব্যবহার করি সেই ডেল কম্পিউটার্স এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন এই মাইকেল ডেল। তার গড় আয় ২০ মিলিয়ন ডলার। কলেজের আবাসিক ভবনে তিনি নিরবে একটি ফাউন্ডেশন এর যাত্রা করেন যা একসময় ডেল কোম্পানি হয়।
মাইকেল ডেল টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তি হয়েছিলেন তবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন নি। হয়ত গৎবাঁধা পড়াশোনার চেয়ে কম্পিউটারের যন্ত্রপাতি তাকে বেশি আকর্ষিত করতো।
১৯৯২ সালে মাইকেল ডেলকে ফরচুন ম্যাগাজিনে সেসময়ের সর্বকনিস্ট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
.
র্যাচেল রে
রান্না বিষয়ক টেলিভিশন শোঁ থেকে উঠে আসা এই তারকা একই সাথে একজন লেখক এবং ব্যবসায়ীও বটে। অথচ তিনি কখনো কলেজের পাঠ নেননি। এমনকি রন্ধন-প্রনালী নিয়ে কখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হাতে কলমে শিক্ষাও গ্রহণ করেননি।
বর্তমানে ৬০ মিলিয়ন ডলারের মালিক তিনি। অভিজ্ঞতাকে যখন আজকাল বড় যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয় সেখানে তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা ছাড়াই একটি ক্ষেত্রে সফল হওয়া সম্ভব যদি ইচ্ছা থাকে এবং কাউকে সুযোগ দেওয়া হয়।
.
স্টিভ জবস
তার জীবনের গল্প এখন কারোই অজানা নয়। বিখ্যাত অ্যাপেল কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। পরিবার তার শিক্ষা খরচ জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতো। তাই পড়ালেখাটা শেষ করতে পারেন নি।
২০১১ সালে মারা যাওয়ার সময় তার গড় সম্পদের পরিমান ছিলো ১১ বিলিয়ন ডলার। তার জীবনের গল্প অনেককেই অনুপ্রাণিত করে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘যদি তুমি সৃজনশীলতার পথে জীবন কাটাতে চাও তাহলে পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই। যা করেছো এতদিন সেসব ভুলগুলো মেনে নিতে হবে এবং যেমনটা ছিলে সেই খোলস ছুড়ে ফেলে দিতে হবে।’