মিনকারার কাছ থেকে শেখার আছে
- ডেভিড কে. উইলিয়ামস
সম্প্রতি একজন অসাধারন লোকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, যিনি অল্প বয়সেই বুঝে গিয়েছিলেন যে, যদি একজন উদ্দ্যোক্তার শিকড় যথেষ্ট গভীরে যায় সেখান থেকে তাঁর ফিরে যাওয়া সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ হতে পারে না। তাঁর নাম ওসমান মিনকারা। তিনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, ক্ষতির পর, আমাদের আবার শুরু করতে হবে এবং শক্তভাবে ফিরে আসতে হবে। ব্যবসা আরম্ভ করার জন্য কিছু দুঃসাহসিক যাত্রা শুরু করতে হবে।
মিশিগানের সাউথফিল্ডে অবস্থিত মিনকারার প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘সিআজি ক্যাপিটাল এ্যাডভাইজার’ এটা মূলত সম্পদ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিকল্প বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরামর্শ সেবা – এর উপর ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। মর্যাদার দিক দিয়ে মিশিগানের এটি অনন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সকল ব্যবসাই আসে হেলথকেয়ার পেশা- বিশেষ করে ফিজিশিয়ান, মেডিকেল প্রাকটিস, ফিজিশিয়ান গ্রুপ, হসপিটাল এবং হেলথ কেয়ার সিস্টেমস থেকে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে। ২০১৫ সালে এ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্ট (এ ইউ এম) এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এক কোটি সত্তুর লক্ষ টাকা থেকে প্রায় চল্লিশ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করতে সক্ষম হয়।
আমরা মিনকারাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, যেসব উদ্দ্যোক্তারা সব হারিয়েছেন তাঁদের আপনি কি ধরনে উপদেশ দিতে চান? জবাবে তিনি জানান, ‘যদি আপনি দূরে চলে যান, যদি স্থান ত্যাগ করেন, ছেড়ে যাওয়াটা সহজ হবে এবং বাকিটা জীবন নিরব থাকতেও সহজ হবে। কিন্তু ছেড়ে যাবেন না পুনরায় গঠন করুন।’
ওসমান মিনকারা ১৯৭০ সালে লেবাননে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি নিজ দেশে দন্ত চিকিৎসার উপর পড়াশোন শুরু করেন কিন্তু দ্রুতই বুঝতে পারেন যে এই স্তরের জন্য তিনি উপযুক্ত নয়। ১৯৮৯ সালে তিনি আমেরিকা পাড়ি জমান এবং মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরের ওয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক্সিকিউটিভ এমবিএ সম্পন্ন করেন। দি লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স এবং এইচ ই সি, এবং ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড থেকে এডভান্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগাম এর উপর পড়াশোনা করেন।
মিনকারার ফিন্যান্সের উপর দক্ষতা ছিলেন। তিনি ‘আমেরিকান এক্সপ্রেস ফিন্যানশাল এ্যাডভাইজার’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগদান করেন এবং সেখানে দ্রুতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। মিনকারা ফলপ্রসূ যোগাযোগ ও বিশ্বাস অর্জনের গুরুত্ব বুঝতে পারেন। তিনি একটু অবসর সময় পেলেই ব্যক্তিগত দক্ষতা দিয়ে কাজে আরও দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করতেন। এভাবেই তিনি ব্যবসায়িক নেতা হয়ে ওঠেন।‘ আমেরিকান এক্সপ্রেস ফিন্যানশিয়াল এ্যাডভাজরে’ মিনকারা দ্রুতই তাঁর সৌরভ ছড়াতে থাকেন এবং বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি লাভ করতে থাকেন। ২৬ বছর বয়সেই উচ্চ বেতনে জেলা ব্যবস্থপক হন। তারপর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে নিজেই কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন।
একটা প্রতিষ্ঠানের জন্ম : শুরুতে মিনকারার ব্যবসা ছিল নেতৃত্ব, প্রবল উদ্দীপনা এবং দূরদৃষ্টির গল্প। ৪৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ছিল তাঁর সঞ্চয়, তিনি মিশিগানের ফারমিংটন হিলের কোয়ালিটি ইনের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি তিনজন বিদেশী অংশীদার যোগাড় করেন তাঁর যাত্রার সঙ্গী হিসেবে। এরপর অস্থায়ী অফিসে মিনকারা ও সঙ্গীরা সবাই মিলে প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য সীমাহীন সংগ্রাম করতে থাকেন। মিনকারা বলেন, আমরা সম্ভাব্য গ্রাহকদের ফোন কলের জন্য একটি পেফোন ব্যবহার করতাম, উক্ত ফোনের জন্য প্রতিদিন অনেক গ্রাহক দেখা যেতো। ঘটনাক্রমে একই শহরে আমরা ২ হাজার বর্গফুটের একটি যায়গা অফিসের জন্য ভাড়া নিলাম, অনেক ক্লান্ত দিন, ঘুমহীন রাতের পর, ৪ জন লোকের প্রতিষ্ঠানটিতে ১২ জনে উন্নিত হলো।
একটা প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস : ২০০০ সালের শুরুর দিকে সবকিছু যখন ঠিকমতো চলছিল মিনকারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেন। তারপর আকস্মিক দুর্ঘটনা আঘাত হানে। এসময় একটি প্রতিযোগী কোম্পানী প্রায় সকল ফিন্যানসিয়াল এডভাইজরদের পাশাপাশি অনেক গ্রাহককে তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে নিয়ে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়। আর এভাবেই ‘সিআইজি ক্যাপিটাল এ্যাডভাইজর’ প্রতিষ্ঠানটির গল্প শেষ হয়।
মিনকারা বলেন “বেছে নেয়ার জন্য আমার কাছে কষ্টদায়ক পথ ছিল, হয় আমাকে সবকিছু প্রথম শুরু করতে হতো অথবা পরাজয় মেনে নিয়ে অন্যকারোর জন্য কাজ করতে হতো”। সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রথম কঠিন কাজটি বেছে নেন। মিনকারা আরো বলেন “আমি একজোড়া কর্মীর মাধ্যমে উৎসাহ পেলাম তাঁরা আমাকে বিশ্বাস করে আমার পাশে ছিল। আমি তাঁদেরকে আশ্বস্ত করলাম যে এই কোম্পানী থেকে তাঁদের চাকুরী চুরি করতে প্রতিযোগী দালালদের সুযোগ দেবো না।” তিনি আবার এই কঠিন কাজটি করতে শুরু করলেন।
একটা প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন : অনেক পরিশ্রমের পর ব্যবসা আবার পুনর্গঠিত হলো, ব্যবসায়ের মোড় ঘুরল ২০০১ সালে, মিনকারা একজন চিকিৎসকের সাহায্যে অনেক দুর এগিয়ে গেলেন। উক্ত চিকিৎসকের তাঁর আরো কিছু বন্ধুরা মিলে ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হলেন এবং কিছু গ্রাহক সংগ্রহ করলেন। তারপর থেকে মিনকারা চিকৎসকসহ সকলকে নিয়ে তাঁর অসাধারন প্রতিদ্বন্ধিতা বিষয়ে কাউন্সেলিং করতে থাকেন ও প্রতিষ্ঠানের হেলথকেয়ারের উপর দৃষ্টি নিবন্ধিত করেন।
‘পুনর্গঠন’ একটি মাত্র শব্দ, যা সম্পাদন করতে অনেক কাজ করতে হয়। যারা ব্যবসায়ে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চান তাঁদের জন্য মিনকারার এটা একটি উপদেশ। উদ্দ্যোক্তা হওয়ার জন্য জীবনে ঝুঁকি নেয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু ঝড়ের সময় আপনার এসব অব্যবহৃত শাখা-প্রশাখার নিকট যেতে হতে পারে নিজেকে সুরক্ষা বা উচুতে রাখার জন্য। যখন জীবন আপনাকে নিচের দিকে ডাকবে তখন আবার শিকড়ে ফিরে যাবেন, অধিক শক্তি পেতে সক্ষম হবেন এবং আপনার পথে সুর্যের দেখা মিলবে।