ঘুরে দাঁড়ানো তারা
- লিডারশিপ ডেস্ক
সফলতার চূড়ায় পৌঁছালেও তারকাদের জীবনেও হতাশা নেমে আসে কখনো কখনো, ভেঙে পড়েন। অনেকে সে হতাশা থেকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও বেছে নেন। পরবর্তী সময়ে পেছনে ফিরে তাকালে সব তারকাই সে সিদ্ধান্তকে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বলে উল্লেখ করেছেন। প্রচণ্ড হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জীবনে সফল হয়েছেন এমন কয়েকজন তারকার কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে।
অপরাহ উইনফ্রে
২৫ বছরের বেশি সময় ধরে টিভির সফল সঞ্চালক, নিজ নামে সাময়িকী প্রকাশ করেন, বিশ্বব্যাপী নারীদের আশার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। অথচ নিজের জীবনেই হতাশা নেমে এসেছিল তাঁর। তবে তা ক্ষণিকের জন্যই। টিম ওয়াটস নামের এক রেডিও ডিজের প্রেমে পড়েছিলেন তরুণ অপরাহ। এক রাতে চুপিচুপি তাঁকে অনুসরণ করে বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিলেন। এরপর আবিষ্কার করেন টিম বিবাহিত, তাঁর সন্তানও আছে। এরপর বন্ধু গেইল কিংকে চিঠিতে আত্মহত্যার কারণ জানিয়ে গাড়ি নিয়ে গাছের সঙ্গে ইচ্ছাপূর্বক সংঘর্ষ বাধান। সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যার আরও চেষ্টা করেন তিনি। টক শো সঞ্চালক পিয়ার্স মরগানের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ১৪ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হলে আবারও সে চেষ্টা করেন। তরুণ উইনফ্রে যদি বর্তমানের সাফল্যের কথা জানতেন, তবে নিশ্চয় আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতেন না।
জীবনে অনেক কিছু করেছেন উইনফ্রে। যা ছুঁয়েছেন তা-ই সোনা হয়ে ফলেছে। তবু তিনি প্রায়ই ভাবেন, ‘কেউ কি কখনো আমাকে দেখিয়ে বলে যে আহা, তাঁর মনে কত শান্তি?’ উইনফ্রে এখন তাঁর সেই শান্তির সময়টা পার করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন তা-ই করি, যা আমি যে সময়ে করতে ভালোবাসি। আর এটাই শ্রেষ্ঠ জীবন।’
ওয়েন উইলসন
পর্দায় তাঁর প্রাণবন্ত অভিনয়, তাঁর প্রাণচাঞ্চল্য সবাইকে ছুঁয়ে গেলেও ওয়েন উইলসনের জীবনে বেশ কয়েকবার হতাশার অন্ধকার নেমে আসে। বেশ কয়েক বছর হতাশায় ভুগে এবং মাদকাসক্ত হয়ে ২০০৭ সালে তো একবার আত্মহত্যাই করতে বসেছিলেন। হাতের শিরাও কেটে ফেলেছিলেন। পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে সে যাত্রায় রক্ষা। ভক্তকুল অবাক হলেও পরিবারের সদস্যরা অবাক হননি বলেই জানিয়েছিলেন। কারণ, সে সময় খুব হতাশায় কেটেছে ওয়েন উইলসনের জীবন। বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ান ওয়েন। ব্যবসাসফল অনেক ছবি উপহার দেন দর্শকদের।
প্রায় ১৫ বছর পর এ বছরই ‘হ্যানসেল’ হিসেবে পর্দায় ফিরেছেন ওয়েন। কারণ? ভক্তদের ভালোবাসা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি লক্ষ করেছি যখন আমি কোথাও বেড়াতে যাই, মানুষ এখনো আমাকে জুল্যান্ডার বলে ডাকে।’
হ্যালি বেরি
পর্দার শক্তপোক্ত চেহারার বন্ড-গার্লও যে কখনো ভেঙে পড়েন, হ্যালি বেরি কিন্তু তা-ই জানিয়েছেন। ১৯৯৩ সালে বেসবল খেলোয়াড় ডেভিড জাস্টিসকে বিয়ে করেন হ্যালি। বছর তিনেক পর তাঁদের সে সম্পর্কে ভাঙন ধরলে হতাশায় ভুগতে থাকেন তিনি। একসময় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। চেষ্টাও করেন। ২০০৭ সালে প্যারেড সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের কথা ভুল ছিল বলে স্বীকার করেন। সঙ্গে এও বলেন, সে সময় তিনি আত্মহত্যা করেননি শুধু তাঁর মায়ের কথা ভেবে। মেয়ের মরা মুখ মা কীভাবে সহ্য করবেন, সে কথাই তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল বেশি।
জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বলে মনে করেন হ্যালি বেরি। একজন আদর্শ মা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার কথা বলেন সে সময়। জীবনের শেষনিশ্বাস পর্যন্ত সে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলেও উল্লেখ করেন।
ব্রিটনি স্পিয়ারস
আয়ান হাল্পেরিন নামের এক সাংবাদিক তাঁর লেখায় উল্লেখ করেন, অন্তত দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ব্রিটনি। মার্কিন এই গায়িকা-অভিনেত্রী নিজে কখনো জনসমক্ষে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ না করলেও সে সাংবাদিকের তথ্য-প্রমাণে কোনো ভুল ছিল না। মা হওয়ার পর হতাশা থেকে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। সে সময় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এরপর ঘুরে দাঁড়াতেও সময় লাগেনি। দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করতে সময় লাগেনি।
পরে এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটনি বলেছেন, ‘আমি আমার কাজ ভালোবাসি। আমার সন্তানদের ভালোবাসি। আপনাকে হয়তো দুনিয়ার নিষ্ঠুরতম দিক দেখতে হতে পারে, আবার অন্যদিকে সবচেয়ে সুন্দর দিকটিও দেখতে পারেন। ব্যাপারটা অদ্ভুত। আমি দুটি দিকই দেখেছি। এখন আমি অতীতের মতো ঘটনা এড়িয়ে চলি। আমি এখন কারাতে কিডের মতো জীবনযাপন করি।’
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া
অভিনেত্রী হয়েছেন। সফলতা এক দিনে আসেনি বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, মানে পিসির। শুরুর দিনগুলোতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে হতাশায় ডুবেছেন, ভেঙে পড়েছেন। তাঁর ম্যানেজার প্রকাশ জাজুর মতে, অন্তত তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন প্রিয়াঙ্কা। এর মধ্যে একবার করেন যখন ২০০২ সালে তাঁর কথিত প্রেমিকের মৃত্যু হয়। অথচ এখন শুধু বলিউড নয়, হলিউডও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পিসি।
এখন জীবনে সফল হতে, সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান তিনি। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমার করা কোনো কাজে আমি হারতে চাই না। সেটা যা-ই হোক।’