‘ভিন্ন কিছু করার তাগিদ অনুভব করতাম’
- লিডারশিপ ডেস্ক
সামিরা জুবেরি হিমিকা। দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছেন। বাংলা কন্টেন্টকে ডিজিটালাইজেশনের জন্য তার প্রতিষ্ঠান আর অ্যান্ড ডি টিম ‘বাংলা অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনাইজার’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি ‘গ্লোবাল স্টার্টআপ মুভমেন্ট’র পরামর্শক, সংগঠক এবং বক্তা হিসেবে ২০টিরও অধিক দেশে ইভেন্টসে অংশ নিয়েছেন। দেশের প্রথম ফ্লাগশিপ ‘ন্যাশনাল ইন্টারপ্রেনারশিপ সামিট’-এর কার্যক্রম পরিচালনাও শুরু করেন। বাংলাদেশকে উদ্যোক্তা ডেভেলপমেন্টের মডেল হিসেবে ‘গ্লোবাল ইন্টারপ্রেনারশিপ সামিট ২০১৩’তে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাইয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন। এর আগে ‘এলসিএচইএমওয়াই’ নামে দেশব্যাপী স্বাস্থ্য এবং টেলিমেডিসিন প্রজেক্ট পরিচালনা করেও সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তার সম্পাদিত ইংরেজি শেখার অনুষ্ঠান ‘বিবিসি জানালা’ লাখ লাখ লোককে ইংরেজি শিখতে সাহায্য করেছে। সফল এ নারী উদ্যোক্তা মাঝেমধ্যে গানে কণ্ঠ দেয়া ও বিভিন্ন প্রোডাক্টের ডিজাইন করেও সুবিচার করছেন নিজ নামের প্রতি।
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য পথ তৈরির ভাবনাটা কখন থেকে?
সামিরা জুবেরি হিমিকা: ভাবনার জায়গাটা নিজের থেকেই শুরু। সবসময়ই ভাবতাম, নিজের পছন্দমতো একটা কিছু করবো। সেই থেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে চিন্তাটা শুরু। এদিকে পরিবারও একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। সবাই পড়ালেখা শেষ করে একটা নিশ্চিত চাকরির পেছনে ছুটলেও আমি ছুটেছিলাম নিজের পছন্দে চ্যালেঞ্জিং কিছু একটা করতে।
উদ্যোক্তার কাজটি কীভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন?
সামিরা জুবেরি হিমিকা: আমার কাজ হচ্ছে এমন, আমি নিজে থেকে কিছু করলেই অন্যের জন্য করা হয়ে গেল। কেননা আমরা দেখেছি নারী উদ্যোক্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অনেকেই আসেন। নারী ও তরুণ উদ্যোক্তারা বলেন, আপনি এমন একজন নারী দেন- যে বাসা, পরিবার, সন্তান ও ব্যবসা একসঙ্গে সফলভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন। আর এমন সব মানুষের ব্যবসা, চাকরি এবং নিত্য-নতুন ধারণা তৈরিতে সহযোগিতা করে যাচ্ছি আমরাই।
একসঙ্গে এতগুলো বিষয় কীভাবে সামাল দিচ্ছেন?
সামিরা জুবেরি হিমিকা: বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আমরা কাজটি করি। যেমন- যারা ইনোভেশনের সঙ্গে জড়িত তারা নতুন নতুন প্রজেক্ট দাঁড় করান। গত বছর একটি কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩৫০টি স্কুলে ৬০ হাজার শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করেছি। বেসিসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আইটি বিষয়ক কার্যক্রমে কীভাবে নারীদের সম্পৃক্ত করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছি।
নারীদের নিয়ে কাজ করার শুরুর গল্পটা যদি বলতেন-
সামিরা জুবেরি হিমিকা: আমি সব সময়ই নিজের মধ্যে ভিন্ন কিছু করার একটা তাগিদ অনুভব করতাম। নিয়মমাফিক জীবন গড়াকে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব পছন্দ করি না। সে জন্যই বোধহয় এমন হয়ে ওঠা।
নারী উদ্যোক্তাদের কীভাবে সেবা দিচ্ছেন?
সামিরা জুবেরি হিমিকা: আমরা বিভিন্ন সময় নারীদের নিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। সফল উদ্যোক্তার কথা শুনি ও শোনাই। আলোচনা করি। একজনেরটা আরেকজন শেয়ার করার চেষ্টা করি। অনুপ্রেরণা যোগাই এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বা তাদের লক্ষ্য মোতাবেক পরামর্শ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টা করি। প্রতিনিয়ত আমাদের কমিউনিকেশনস, টিম বিল্ডিং, নেতৃত্বদান, কর্পোরেট জগৎসহ পণ্য ও মানুষের চাহিদা বুঝে ব্যবসার ধরন-ধারণ পরিবর্তন ও পরিবর্ধনে বুদ্ধি দিই।
দেশের নারী ও তরুণ উদ্যোক্তা নিয়ে আপনার ভাবনা?
সামিরা জুবেরি হিমিকা: এ দেশের বিশেষ করে নারী ও তরুণদের নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। দেশের তরুণরা নিয়মিতিই দেশ ও দেশের বইরে তাদের মেধা ও মননের স্বাক্ষর রাখছেন। তাই তো আমরা দেশ-বিদেশের ভিন্নধর্মী প্রচেষ্টা ও সফলতা তুলে ধরে সবাইকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করি। নারী ও তরুণদের মাঝে আমাদের কার্যক্রম নিয়ে ইতিবাচক ধারণাই প্রমাণ করে আমরা সঠিক পথেই হাঁটছি।
সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?
সামিরা জুবেরি হিমিকা: অন্যের উপকার করা, মানুষের সহযোগিতায় নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো এবং সেই সঙ্গে নিজের চেষ্টা তথা উদ্ভাবনী শক্তি দ্বারা নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া। এককথায়- কথা ও কাজে একাত্ম হয়ে দেশ গঠনে এগিয়ে আসার নামই সফলতা।