হাত-পাবিহীন একজন সফল মানুষের গল্প
- লিডারশিপ ডেস্ক
ইচ্ছার কাছে মাঝে মাঝে বিশ্বও হার মানতে বাধ্য, ইচ্ছা থাকলে কোনো অক্ষমতায় মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে না। আর এমনই এক আশ্চর্যজনক, সফল মানুষের নাম নিকোলাস জেমস ভুজিসিক, ডাকনাম নিক ভুজিসিক, হাত-পাবিহীন অথচ প্রাণশক্তিতে ভরপুর একজন সফল মানুষ। কল্পনাই করা যায় না, নিকের শরীরের চারটি প্রধান অঙ্গ ‘হাত-পায়ের কোনোটাই নেই, এমনকি ছোটবেলায় তার চিকিৎসকও বলেছিলেন এ অবস্থায় সে কিছু করতে পারবে না। তবুও শুধু মনের প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে দুনিয়াজুড়ে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে।
বিশাল হলরুমভর্তি হাজারো মানুষ তার কথা শুনতে অধীর হয়ে বসে থাকেন। প্রতিকূলতার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য আশার অপ্রতিরোধ্য ও অপরিহার্য মতার বাণী মানুষের মধ্যে বিলি করেন। নিকের বয়স এখন ৩৩ বছর, ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। জন্ম থেকে হাত-পা ছাড়া শুধু ঊরুর কাছ থেকে ছোট্ট পায়ের মতো বেরিয়ে থাকা ছোট্ট অঙ্গ তাকে শরীরের ভারসাম্য রা করে সোজা হয়ে থাকতে সহায়তা করে।
নিকের এই শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কোনো ব্যাখ্যা নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনো এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এ রোগকে বলা হয় টেট্রা-অ্যামেলিয়া সিনড্রোম। বাম ঊরু থেকে বের হওয়া ছোট্ট অঙ্গটি দিয়ে তিনি অনেক কিছুই করতে পারেন। দাঁড়ানো, টাইপ করা এমনকি বলে লাথি দিতেও পারেন নিক। অ্যাড্রেনাল হরমোনজনিত সমস্যা থাকলেও এটা স্বীকার করেন অবলীলায়। তবে তিনি এতে কেয়ার করেন না। নিয়মিত সাঁতার কাটেন, এমনকি দুঃসাহসিক স্কাই ডাইভিংয়েও পিছিয়ে নেই সফল এ ব্যক্তি। টিকে থাকার আত্মবিশ্বাস নিকের ভেতর এমনি এমনি আসেনি।
ছোটবেলা থেকে বাস্তব জীবনের বহু তিক্ত অভিজ্ঞতা নিতে হয়েছে তাকে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বেড়ে ওঠা নিক বাল্যকাল থেকেই চরম বিষণ্নতায় ভুগতেন। স্কুলের সহপাঠীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। ১০ বছর বয়সে একবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন। তবে ধীরে ধীরে জীবন নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করেন তিনি। নিজের সঙ্গে তাকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। সবকিছু উতরে এখন তিনি সবার প্রেরণাদানকারী এক সম্মোহনী মতাধর বক্তা। ১৭ বছর বয়সে তার হাইস্কুলের এক দারোয়ান তাকে জনসমে বক্তৃতা করার জন্য উৎসাহিত করেন। এতে তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পান। এ ক্যারিশমাটিক ব্যক্তি এখন সারা দুনিয়া ভ্রমণ করছেন আর প্রেরণাদায়ী বক্তৃতা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে অভিভূত করছেন। অনেককে দিচ্ছেন নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
অ্যাকাউন্টিং ও ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানিংয়ে স্নাতক নিক প্রেরণাদায়ক বক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন জীবনের মানে, আশা এবং শারীরিক অক্ষমতাকে। এরই মধ্যে ৫০টি দেশ ঘুরেছেন। তার শ্রোতা প্রধানত সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী আর স্কুলগামী শিশু। নিক বলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে এভাবে জন্ম দিয়েছেন এবং আমার সঙ্গে যা যা হয়েছে, তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। তুমি তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাও এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখো, তিনি তোমাকে ফেরাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল, যখন আমি সব জায়গায় ধাক্কা খাচ্ছিলাম। কিন্তু ব্যর্থতা আমাকে পরাজিত করতে পারেনি। আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি। নিকের ‘হোয়াই মি, গড’, ‘ডু দ্য রাইট থিং-ফর এ লং টাইম’, ‘হু ভ্যালিডেটস ইউ?’ এরই মধ্যে Life Without Limits নামে একটি এনজিও পরিচালনা করেন। একই সঙ্গে তার Attitude is Everything নামে একটি সংগঠনও রয়েছে, যা প্রণোদনামূলক বক্তৃতা এবং দুর্বলদের ঠাট্টা-বিদ্রুপ না করার জন্য প্রচারণা চালায়।
নিকের আত্মজীবনীমূলক বই Love Without Limits প্রকাশিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে আলোড়িত হয়েছে তার অনুপ্রেরণামূলক গ্রন্থ ‘Life Without Limits’, যেটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আরও লিখেছেন ‘আনস্টপেবল’, ‘স্ট্যান্ড স্ট্রং’, ‘লিমিটলেস’, নামের তিনটি বই। বর্তমানে নিক যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ত্রী ক্যানি ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা ছাড়াও ‘দ্য বাটার ফাই সার্কাস’ শর্টফিল্মে অভিনয় করেছেন নিক।
সূত্র : আমাদের সময়