অন্যকে হাসিয়ে কাঁদেন তিনি
- লিডারশিপ ডেস্ক
ছেলেটির কোনো বন্ধু ছিল না। চুপচাপ থাকত, এড়িয়ে চলত সবাইকে। কারণ সে চাইত না কেউ তার দৈন্যের কথা জেনে উপহাস করুক। কিন্তু সেই ছেলেটির কথাবার্তাই একসময় অন্যদের আনন্দের খোরাক হয়ে ওঠে। তাকে নিয়েই আসর জমে। আজ তাকে চেনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তিনি জেমস ইউজিন ক্যারি, যাকে জিম ক্যারি নামেই আমরা বেশি চিনি। চলুন, তার জীবন জয়ের গল্প শুনি।
১৯৬২ সাল। কানাডার নিউমার্কেট এলাকার এক ছোট্ট ঘরে জন্ম হয় জেমসের। বাবা পেশায় ছিলেন হিসাবরক্ষক। কিন্তু পাশাপাশি গানের প্রতিও ছিল ঝোঁক। গৃহিণী মা তখন ছোট্ট জেমসকে সামলে রাখতেন। তাদের বাস ছিল নিম্নমানের একটি অ্যাপার্টমেন্টে। ঠিক বস্তি না হলেও খুব একটা ভালো বা আরামদায়ক জায়গাও ছিল না সেটা। ঘরে চার সন্তান আর স্বামী-স্ত্রীসহ মোট ৬ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেত জেমসের বাবা। বাসা ভাড়া, সংসারের খরচ, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ- ছোট্ট জেমসের সামনেই চলত এসব হিসাব-নিকাশ। প্রাত্যহিক টানাপড়েনের পর যখন স্কুলে পাঠানো হতো ছোট্ট জেমসকে, তখন তার নিজেকে অপরাধী মনে হতো। এর মধ্যে খরচ কমানোর জন্য ক্যারি পরিবার বারবার বদলাতে থাকেতেন আবাস ঠিকানা। এভাবে পালিয়ে বেড়ানো জীবন জেমসকে আরও হতাশায় জর্জরিত করতে লাগল। জেমস একা তার ঘরে বসে আয়নার দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গি করত, অভিনয় করতেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের অনুকরণ করে সবাইকে আনন্দ দিতেন জেমস। তারও ইচ্ছা করত সবার সঙ্গে আনন্দ করতে, অনেক হাসিখুশি থাকতে। কিন্তু দিন দিন অভাবের জোর যেন আরও বেড়ে যায়। ১৪ বছর বয়সে জেমস কাজ নেন স্টিল কারখানায়। প্রতি রাতে ৮ ঘণ্টা কারখানায় শ্রম দিয়ে সকালে স্কুলে গিয়ে কিছুই মাথায় ঢুকত না তার।
কিন্তু নিজের শৈশবের স্মৃতি কখনও ভোলেননি জিম ক্যারি। খ্যাতির তুঙ্গে থেকেও ডিপ্রেশন নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। কারণ হিসেবে অনেকেই তার ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী থাকাকে দায়ী করেন। কিন্তু কর্মে জিম ক্যারির তুলনা কেবল জিম ক্যারিই।
গোল্ডেন গেল্গাব অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য সম্মানে ভূষিত এ মানুষটি একাধারে অভিনেতা, চিত্র নাট্যকার, প্রযোজক, সঞ্চালক, কৌতুক অভিনেতা এবং পথ প্রদর্শক। পেশাগত কাজের পাশাপাশি করছেন অনেক সমাজসেবামূলক কাজও। নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে তার শক্তি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার মতো এমন অসংখ্য নক্ষত্রকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যদি তোমার মাঝে প্রতিভা থাকে, তবে সেটা রক্ষা কর।’